ফাইল চিত্র।
তালিবান আফগানিস্তান দখলের পর থেকে কাবুল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও তার সংলগ্ন এলাকার চূড়ান্ত অরাজক পরিস্থিতি গত এক সপ্তাহ ধরে দেখেছে গোটা বিশ্ব। আজ ভোর থেকে অবশ্য কাবুলের হামিদ কারজ়াই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের চারপাশের অবস্থা খানিকটা অন্য রকম। বড় কোনও দুর্ঘটনা ঘটেনি। এলাকার পরিস্থিতি সামাল দিতে পথে নেমেছে তালিবান বাহিনী। দেশ ছাড়তে চাওয়া মরিয়া আফগানদের নিয়ন্ত্রণ করতে তারা মাঝেমধ্যে শূন্যে গুলি চালিয়েছে, কখনও লাঠিচার্জ করেছে। বিমানবন্দরের বিশৃঙ্খল অবস্থার জন্য আমেরিকার সেনাবাহিনীকে কাঠগড়ায় তুলেছে তালিবান।
ব্রিটিশ সেনাকে উদ্ধৃত করে একটি সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, গত কাল হঠাৎই বিমানবন্দরের একটি গেট দিয়ে ভিতরে ঢোকার জন্য হুড়োহুড়ি শুরু করে দেশ ছাড়তে চাওয়া আফগান জনতা। ওই সময় তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে শূন্যে গুলি চালায় তালিবান। শুরু হয় হুড়োহুড়ি। ভিড়ের চাপে পড়ে গিয়ে পদপিষ্ট হয়ে সাত জনের মৃত্যু হয়। একটি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে কাল দেখানো হয়েছিল, মৃত তিন জনের দেহ বিমানবন্দরের রাখা হয়েছে। নেটোর এক অফিসার জানিয়েছেন, এই নিয়ে গত সাত দিনে কাবুল বিমানবন্দর চত্বরে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বিমানবন্দরের সংলগ্ন এলাকার বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গত কাল নির্দেশিকা জারি করেছিল তালিবান। আজও বিমানবন্দরের বাইরে উপচে পড়েছে ভিড়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিমানবন্দরের বাইরে আজ চোখে পড়ার মতো উপস্থিতি ছিল সশস্ত্র তালিবানের। তারাই নিয়ন্ত্রণ করেছে ভিড়কে। বিমানবন্দরের মূল গেটের সামনে লম্বা লাইন। প্রয়োজনীয় নথি পরীক্ষা করে আফগানিস্তান ছাড়তে চাওয়া মানুষজনকে ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, দেশ ছাড়তে মরিয়া আফগানেরা মাঝেমধ্যেই লাইন ভেঙে বিমানবন্দরের ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করেছেন। নিজস্ব কায়দায় পরিস্থিতি সামলাচ্ছে তালিবান। কখনও শূন্যে গুলি ছুড়ে, আবার কখনও লাঠি চালিয়ে। দেশ ছাড়তে চাওয়া এক আফগানের কথায়, ‘‘আজ কোনও বড় ঘটনা ঘটেনি ঠিকই। কিন্তু এই ভিড় দেশ ছাড়তে মরিয়া। যে কোনও সময়ে আবার বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হতে পারে।’’ কিছু সংবাদকর্মী ও শিক্ষাবিদের একটি দল আজ অনেক কষ্টে কাবুল বিমানবন্দরে পৌঁছয়। ওই দলে থাকা এক সাংবাদিক বলেন, ‘‘যখন ভিতরে ঢুকছিলাম, বাইরে অপেক্ষমাণ বহু আফগান পাসপোর্ট দেখিয়ে চিৎকার করছিলেন, ‘দয়া করে আমাদেরও নিয়ে যান’।’’
বিমানবন্দর ও সংলগ্ন এলাকায় বিশৃঙ্খলার জন্য আমেরিকার সেনাবাহিনীকে দায়ী করেছে তালিবান। ওই জঙ্গি সংগঠনের তরফে আমির খান মুতাকি বলেন, ‘‘বিমানবন্দর চত্বরের শৃঙ্খলা রক্ষায় আমেরিকা ব্যর্থ। গোটা দেশে শান্তি রয়েছে, অশান্ত শুধু কাবুল বিমানবন্দর।’’ তালিবানের
এক মুখপাত্রের দাবি, ‘‘বিমানবন্দর এলাকার পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক।
যে কোনও সময়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই আমরা পরিস্থিতি নিজেদের হাতে নিয়ে নিয়েছি।’’ এ দিকে, আমেরিকার প্রতিরক্ষা দফতরের দুই আধিকারিক আজ এক গোয়েন্দা রিপোর্টে জানান, কাবুল বিমানবন্দরে হামলার পরিকল্পনা করছে জঙ্গি সংগঠন আইএস। সেই হুমকি-বার্তা সামনে এসেছে।
নব্বইয়ের দশকে তালিবানের হামলায় বামিয়ানের জোড়া বুদ্ধমূর্তি গুঁড়িয়ে গিয়েছিল। আফগানিস্তানের জাতীয় সংগ্রহশালার অধিকর্তা মহম্মদ ফাহিম রহিমি আজ জানিয়েছেন, সংগ্রহশালায় সশস্ত্র রক্ষী মোতায়েন করেছে তালিবান। তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের নমুনা বহনকারী নিদর্শনগুলি রক্ষা করা হবে।
আফগানিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আশরফ গনির ভাই হাসমত গনি আজ তালিবানকে ‘মেনে নিয়ে’ একটি বিবৃতি জারি করেন। একটি ভারতীয় খবরের চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হাসমত বলেন, ‘‘আমি দেশ ছেড়ে পালাচ্ছি না। চাইছি, এ দেশে যেন তাড়াতাড়ি শান্তি ফিরে আসে। আমি তালিবানকে সমর্থন করি না, কিন্তু এই পরিস্থিতিতে তাদের মেনে নিয়েছি।’’ পঞ্জশিরের তালিবান-বিরোধী বাহিনীর নেতা আহমেদ মাসুদও আজ বলেছেন, ‘‘আমরা চাই না, যুদ্ধ হোক। তালিবানকে বোঝাতে চাই, আগামী দিনে আলোচনার মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়া যায়।’’ তবে একই সঙ্গে তাঁর হুঁশিয়ারি, যে কোনও আগ্রাসী বাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ে তাঁর অনুগামীরা সব সময়েই প্রস্তুত। তালিবানের পাল্টা হুমকি, তাদের শতাধিক সদস্যের একটি বাহিনী পঞ্জশির দখলের জন্য রওনা হয়েছে।