—প্রতীকী ছবি।
সম্পূর্ণ মুখ ঢাকা পোশাকে জনসমক্ষে বেরোনোর উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি হল সুইৎজ়ারল্যান্ডে। রবিবার এই বিষয়ে গণভোট দিয়েছিলেন দেশের সাধারণ মানুষ। ফল প্রকাশিত হওয়ার পরে দেখা গিয়েছে, ৫১.২ শতাংশ দেশবাসী ভোট দিয়েছেন এই ধরনের পোশাকের বিরোধিতা করে। গণভোটের ফল প্রকাশিত হওয়ার পরেই জনসমক্ষে সম্পূর্ণ মুখ ঢাকা পোশাকের উপর নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করে সরকার। নির্দেশিকায় ‘বোরখা’ বা ‘নিকাব’ শব্দগুলির উল্লেখ না-থাকলেও স্পষ্ট, কোন ধরনের পোশাককে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। তবে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে এই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে না। নিরাপত্তার কারণে বা কোনও চিকিৎসার প্রয়োজনেও সম্পূর্ণ মুখ ঢাকা পোশাকে বাইরে বেরোনো যাবে বলে নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে। প্রসঙ্গত, করোনার প্রকোপ রুখতে এ দেশে এখনও মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক।
কয়েক বছর ধরে ইউরোপে একাধিক আইএস হামলার পরে বোরখার বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বহু দেশ। এর আগেই ফ্রান্স, জার্মানি, অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক, বুলগেরিয়া, বেলজিয়াম ও ল্যাটভিয়া— ইউরোপের এই সাতটি দেশে বোরখা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। সুইৎজ়ারল্যান্ডও সে পথেই হাঁটল।
তবে এ দেশে ‘বোরখা’ নিষিদ্ধ করার লড়াইটা বেশ হাড্ডাহাড্ডি হয়েছে। সুইৎজ়ারল্যান্ডের নিয়ম অনুযায়ী, কেউ যদি কোনও প্রস্তাবের পক্ষে অন্তত ১ লক্ষ ভোট সংগ্রহ করতে পারেন, তা হলেই গণভোট করা হবে। প্রতি তিন মাস অন্তর এই ধরনের নানা বিষয়ে গণভোট দেন দেশের ৮৬ লক্ষ নাগরিক। বোরখা বিষয়ক গণভোটে গতকাল ভোট দিতে এসেছিলেন মাত্র ৫০.৮ শতাংশ দেশবাসী।
দক্ষিণপন্থী দল সুইস পিপলস পার্টির নেতা মার্কো চিসা-ই এক লক্ষেরও বেশি সাক্ষর জোগাড় করে গণভোটের পথ মসৃণ করেছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের দেশে কট্টর মৌলবাদের কোনও জায়গা নেই।’’ তবে দেশের আইনমন্ত্রী ক্যারেন কেলার-সাটার বলেছেন, ‘‘এই গণভোট ইসলাম-বিরোধী নয়। হাতেগোণা কয়েক জনই এই নতুন আইনের আওতায় পড়বেন।’’ সুইৎজ়ারল্যান্ডের জনসংখ্যার ৫.৫% মুসলিম। তাঁদের পূর্বপুরুষেরা মূলত ইউগোস্লাভিয়া থেকে এসেছিলেন। ফ্রান্স বা জার্মানির মতো প্রচুর সংখ্যক পশ্চিম এশিয়া বংশোদ্ভূত মুসলিম এই দেশে প্রায় নেই বললেই চলে।
২০০৯-এ এক গণভোটে মসজিদের উপরে গম্বুজ বানানোর উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল সুইৎজ়ারল্যান্ডে। তখন অনেকেই সেই আইনের সমালোচনা করেছিলেন। এ বারও নতুন আইনের বিরোধিতায় সরব হয়েছেন দেশের বহু মানুষ ও সংগঠন। বার্নে পার্লামেন্টের সামনে রবিবার বিক্ষোভ দেখান শ’দেড়েক মানুষ। ইসলামিক সেন্টার কাউন্সিলের কথায়, ‘‘মুসলিম-বিদ্বেষ এ বার দেশের সংবিধানেও ঠাঁই পেয়ে গেল।’’