শ্রীলঙ্কার সেন্ট অ্যান্টনি চার্চে বিস্ফোরণের পর ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে দেহ। ছবি: এএফপি।
হাতে প্লেট নিয়ে প্রাতরাশের দীর্ঘ লাইনে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করেছিল সে। ক্রমশ পৌঁছয় লাইনের সামনে। কলম্বোর দ্য সিনামন গ্র্যান্ড হোটেলের রেস্তরাঁর কর্মী তার প্লেটে যখন খাবার তুলে দিতে যাবেন, ঠিক সেই মুহূর্তে নিজের পিঠে বাঁধা বোমা ফাটিয়ে দেয় আত্মঘাতী জঙ্গি।
হোটেলের রেকর্ড বলছে, গত কাল রাতে ওই পাঁচতারা হোটেলে চেক-ইন করেছিল মহম্মদ আজম মহম্মদ নামে এক ব্যক্তি। বলেছিল, সে এসেছে ব্যবসার কাজে। যে ঠিকানা দিয়েছিল, সেটি ভুয়ো বলে জানতে পেরেছেন হোটেল কর্তৃপক্ষ। নাম গোপন রাখার শর্তে সংবাদ সংস্থা এএফপি-র কাছে সিনামন গ্র্যান্ডের ‘ট্যাপ্রোবেন রেস্তরাঁ’-র অন্যতম ম্যানেজার দাবি করেছেন, আজমই ওই আত্মঘাতী জঙ্গি। সে শ্রীলঙ্কার নাগরিক। তবে এটি তার ছদ্মনাম কি না, জানা যায়নি।
ইস্টারের জন্য আজ সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ ভিড়ে প্রায় ঠাসা ছিল রেস্তরাঁটি। অনেকেই এসেছিলেন সপরিবার। ওই ম্যানেজারের কথায়, ‘‘বুফে-র লাইনে দাঁড়িয়েছিল লোকটি। আমাদের যে ম্যানেজার অতিথিদের স্বাগত জানাচ্ছিলেন, তিনি বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন হয়ে যান। তাঁর দেহাংশ পরে নিয়ে যায় পুলিশ।’’
হোটেল শাংগ্রি লা-র কর্মীরা জানাচ্ছেন, সেখানে বিস্ফোরণ হয়েছে অন্তত দু’টি। হোটেলের তিনতলায় ‘টেবল ওয়ান’ রেস্তরাঁর জানলা উড়ে যায় বিস্ফোরণে। সিলিং খুলে বেরিয়ে আসে বিদ্যুতের তার। আর এক বিস্ফোরণস্থল, পাঁচতারা কিংসবেরি হোটেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তল্লাশির জন্য আপাতত হোটেল খালি করে দিয়েছেন তাঁরা।
কলম্বোর সাংবাদিক দিলরুকশি হান্দুনেত্তি আনন্দবাজারকে ই-মেলে লেখেন, ‘‘ন্যাশনাল হাসপাতালে গিয়ে দেখেছি, আতঙ্কগ্রস্ত সারি সারি মুখ। ২৬ বছরের লড়াইয়ে ষাট হাজারেরও বেশি প্রাণহানি দেখেছে এই দেশ। এমন সময়ে এই ঘটনা। সেটাও ঘটল এমন পবিত্র দিনে। শ্রীলঙ্কার খ্রিস্টানদের কাছে গভীর শোকের দিন। সাধারণ মানুষ নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। সবে দেশটা ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল। এতে তো জানলাগুলো আবার বন্ধ হয়ে যাবে।’’ আগামিকাল পার্লামেন্টের অধিবেশন ডাকা হয়েছে বলে জানান তিনি।
আজই ঢাকা থেকে দুপুরে কলম্বোর বন্দরনায়েকে বিমানবন্দরে নামেন প্রবাসী ভারতীয় সাংবাদিক পি কে বালচন্দ্রন। কার্ফুর জন্য ট্যাক্সি না-পেয়ে বিমানবন্দরেই আটকে থাকেন বিকেল পর্যন্ত। সেখানেই পান বিস্ফোরণের খবর। পরে তিনিও ই-মেলে জানান, ‘‘রাস্তার নানা জায়গায় গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি চলছে। আমাদেরও তার মধ্যে পড়তে হল। বাড়ি ফিরে দেখলাম, সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়া বন্ধ। টিভিতেই চোখ রাখছি।’’ এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত কলম্বোর টিকিট বাতিল বা তারিখ পরিবর্তনের জন্য কোনও টাকা নেবে না তারা।