Israel-Hamas Conflict

আশঙ্কায় ইহুদি পড়ুয়ারা, যুদ্ধ বন্ধের দাবি বস্টনেও

নিউ ইয়র্ক শহরে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় উত্তাল হয়েছে প্রতিবাদে। অবস্থান, বিক্ষোভ এবং তার সঙ্গে ক্যাম্পাসে পুলিশ ঢুকে পড়ুয়াদের গ্রেফতার— এ সবের তুলনায় বস্টনের ছবি তুলনামূলক ভাবে শান্ত।

Advertisement

মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়

বস্টন শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:৪৯
Share:

প্যালেস্টাইনের সমর্থনে এবং গাজ়ায় ইজ়রায়েলি হামলার প্রতিবাদে বেশ কিছু কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উঠে আসা প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়েছে আমেরিকায়। ছবি: রয়টার্স।

চার্লস নদীর এ-পারে বস্টন আর ও-পারে কেমব্রিজ। এই দুই শহর মিলিয়ে বহু কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়, যে কারণে এই এলাকাকে ছাত্রছাত্রীদের শহর বলা যায়। যে কোনও সামাজিক বা রাজনৈতিক কারণে প্রতিবাদী স্বর উঠে আসে এই শহর থেকেও। তেমনই প্যালেস্টাইনের সমর্থনে এবং গাজ়ায় ইজ়রায়েলি হামলার প্রতিবাদে আমেরিকার বেশ কিছু কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উঠে আসা প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়েছে বস্টনেও।

Advertisement

নিউ ইয়র্ক শহরে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় উত্তাল হয়েছে প্রতিবাদে। অবস্থান, বিক্ষোভ এবং তার সঙ্গে ক্যাম্পাসে পুলিশ ঢুকে পড়ুয়াদের গ্রেফতার— এ সবের তুলনায় বস্টনের ছবি তুলনামূলক ভাবে শান্ত। কেমব্রিজ শহরে আছে বিশ্ববিখ্যাত দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়— হার্ভার্ড এবং ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি বা এমআইটি। এই এমআইটি স্টুডেন্ট সেন্টারের বাইরে ক্রেসগি লনে তাঁবু খাঁটিয়ে বসে আছেন বেশ কিছু পড়ুয়া। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরের মধ্যে এই এলাকাটাকে তাঁরা ‘মুক্তাঞ্চল’ বলে চিহ্নিত করেছেন। পুলিশ দিয়ে বেষ্টিত এই জায়গায় তাঁবুর সংখ্যা বাড়ছে প্রতিদিন। যুদ্ধ বন্ধ করার সঙ্গে তাঁদের আরও দাবি, গবেষণা-সহ বিভিন্ন শিক্ষা সংক্রান্ত যে যে বিষয়ে ইজ়রায়েলের সঙ্গে যৌথ ভাবে কাজ করে এমআইটি, সেগুলি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।

কলাম্বিয়া ও নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবাদে উত্তাল হওয়ার পরেই বিখ্যাত ‘হার্ভার্ড ইয়ার্ড’ বন্ধ করে জমায়েত নিষিদ্ধ করেছেন হার্ভার্ড কতৃপক্ষ। নিষিদ্ধ করা হয়েছে ‘হার্ভার্ড প্যালেস্টাইন সলিডারিটি কমিটি’ নামের একটি পড়ুয়াদের সংগঠনকেও।

Advertisement

বস্টনের এমারসন কলেজের পড়ুয়ারা রাস্তায় তাঁবু টাঙিয়ে ধর্নায় বসেছেন। ম্যাসাচুসেটসের আর একটি বিশ্ববিদ্যালয়, টাফ্টস ইউনিভার্সিটির ছাত্রছাত্রীরাও একইভাবে তাঁদের ক্যাম্পাসের খোলা জায়গায় তাঁবু খাটিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। বস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরাও গত শুক্রবার প্রতিবাদ মিছিল করে পথে নেমেছিলেন।

আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। যেমন, রোড আইল্যান্ডের ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়, রাইস, হিউস্টনের রাইস বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অস্টিন, ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয় আর্বানা শ্যাম্পেন, মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি। প্রসঙ্গত, আজ প্রকাশিত এক জনসমীক্ষার ফলে দেখা গিয়েছে, ১৮-২৯ বছর বয়সিদের মধ্যে মাত্র সাত শতাংশ আমেরিকার ইজ়রায়েলকে অস্ত্র সাহায্য সমর্থন করে।

আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে বিপুল সংখ্যায় ইহুদি পড়ুয়া রয়েছেন। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২ শতাংশ, হার্ভার্ডে প্রায় ১০ শতাংশ, ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২ শতাংশ এবং প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ১০ শতাংশ পড়ুয়া ইহুদি। এই ইহুদি পড়ুয়াদের একটা বড় অংশ ইজ়রায়েল থেকে এসেছেন। এই সব পড়ুয়াদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আমেরিকার উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের ইজ়রায়েলি কনসাল জেনারেল মেরোন রুবেন। উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এমআইটির ছাত্রী ও সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইজ়রায়েল অ্যালায়েন্সের প্রেসিডেন্ট তালিয়া খান-ও। তালিয়ার আশঙ্কা, এমআইটি এখনও পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ থাকলেও কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে বসবাসকারী ইহুদি ছাত্রছাত্রীদের মতো তাঁদেরও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হতে পারে। এমআইটির আর এক ছাত্র কুইন পেরিন নিজে ইহুদি হলেও তাঁর মত সম্পূর্ণ আলাদা। তিনি মনে করেন, গাজ়ায় ইজ়রায়েলের ভয়াবহ হামলার থেকে নজর ঘোরাতে এবং যুদ্ধ-বিরোধী আন্দোলনকে দমন করতে এখন ইহুদি বিদ্বেষের জিগির তোলা হচ্ছে। কুইন পেরিনের মতো বহু আমেরিকাবাসী ইহুদি প্রথম থেকেই ইজ়রায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে।

বিক্ষোভের আঁচ আপাতত নিভছে না। ম্যাসাচুসেটসের গভর্নর মাওরা হিলির আর্জি, আন্দোলন করার সময়ে খেয়াল রাখতে হবে যাতে সবাই নিরাপদ বোধ করেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement