আর্থিক সঙ্কটে বিপর্যস্ত আফগান নাগরিকেরা। ছবি: সংগৃহীত।
রাস্তায় ঢেলে বিকোচ্ছে গৃহস্থালীর নানা সরঞ্জাম। নামমাত্র দামে মিলছে রেফ্রিজেটর, টেলিভিশন সেট, আসবাব, কার্পেট এমনকি বাসনপত্রও। তবে নতুন নয়, ব্যবহৃত। তালিবান শাসিত কাবুলে খাবারের জোগাড় করতে গিয়ে আফগান নাগরিকদের একাংশ এ ভাবেই বাড়ির নানা জিনিস বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
কাবুলের চমন-ই-হাজোরি পার্ক এবং তার সামনের রাস্তায় এখন রকমারি দ্রব্যের পসরা। স্থানীয় বাসিন্দা লাল মহম্মদ কয়েক মাস আগে ২৫ হাজার আফগানি (আফগান মুদ্রা) কেনা রেফ্রিজেটর সেখানে বিক্রি করেছেন মাত্র পাঁচ হাজারে! একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী ছিলেন তিনি। তালিবান জমানায় পাততাড়ি গোটাতে চলেছে তারা। ফলে লালের চাকরি গিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘ছোট ছেলেটার জন্য খাবারের জোগাড় করাও এখন দায়। তাই বাধ্য হয়ে বাড়ির নানা জিনিসপত্র বিক্রি করতে হচ্ছে।’’
তালিবানের ক্ষমতা দখলের পর আফগানিস্তানে অনেক বাণিজ্যিক সংস্থাই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বিদেশি সংস্থার পাশাপাশি সেই তালিকায় রয়েছে অনেক আফগান প্রতিষ্ঠানও। সেই সংস্থায় কর্মরতরা পড়েছেন চরম আর্থিক সঙ্কটে। বন্ধ হওয়া ওই সংস্থাগুলির সঙ্গে ব্যবসায়িক লেনদেনে জড়িতরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বাধ্য হয়ে তাঁরা খাবারের জোগাড় করতে বিক্রি করছেন বাড়ির নানা দ্রব্য।
সঙ্গটে রয়েছেন সরকারি কর্মীরাও। তালিবান জমানায় মাইনে পাননি তাঁরা। আফগান পুলিশের কর্মী মহম্মদ আগাকেও তাই গত কয়েক সপ্তাহে বাড়ির নানা জিনিস বিক্রি করতে চমন-ই-হাজোরি পার্কে যেতে হয়েছে।
তালিবানের ক্ষমতা দখলের পরে আন্তর্জাতিক অনুদানও বন্ধ হয়েছে আফগানিস্তানে। তার প্রত্যক্ষ নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে গরিব এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উপর। চলতি বছরের গোড়ায় রাষ্ট্রপুঞ্জের তরফে প্রকাশিত একটি পরিসংখ্যান জানিয়েছিল, আফগানিস্তানের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা আন্তর্জাতিক অর্থসাহায্যের উপরে নির্ভরশীল। সংখ্যার হিসেবে প্রায় দু’লক্ষ।
চলতি সপ্তাহে জেনেভায় রাষ্ট্রপুঞ্জের বৈঠকে জানানো হয়েছে, আফগানিস্তানের মানবিক বিপর্যয় সামলাতে অন্তত ৬০ কোটি ডলার অর্থসাহায্য প্রয়োজন। রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেস সদস্য দেশগুলির কাছে আফগান-অনুদানের আবেদন জানিয়ে বলেছেন, ‘ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম’ (ডব্লিউএফপি) কর্মসূচি রূপায়ণে ওই অর্থ ব্যবহৃত হবে।