রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, আজ থেকে বহু কোটি বছর আগে হয়তো শনিরও এই বলয় ছিল না! ছবি রয়টার্স।
সৌরজগতের দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্রহটির কথা উঠলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে তাকে ঘিরে থাকা বলয়। সূর্যের সংসারে এমনটি আর কারও নেই। নাসার একটি রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, আজ থেকে বহু কোটি বছর আগে হয়তো শনিরও এই বলয় ছিল না!
শনির বয়সও হল সাড়ে চারশো কোটি বছর। বিজ্ঞানীদের সন্দেহ, তার জীবনকালের বেশি সময়টাই হয়তো সে বলয়হীন ছিল। আমেরিকান মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসার ক্যাসিনি অভিযানের চূড়ান্ত পর্যায়ের তথ্যগুলো ঘেঁটে বিজ্ঞানীদের সন্দেহ এমনটাই। তাঁরা জানিয়েছেন, আনুমানিক ১৬ কোটি বছর আগে শনির একটি উপগ্রহ তার একেবারে কাছে চলে এসেছিল। এর পর দৈত্যাকার গ্যাসীয় পিণ্ড গ্রহটির প্রবল মাধ্যাকর্ষণ বলে উপগ্রহটি ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। অসংখ্য খণ্ড হয়ে ছড়িয়ে পড়ে তার কক্ষপথ জুড়ে। শনির চারপাশে একে দেয় এক বিচিত্র মহাজাগতিক দৃশ্য।
পুরোটাই এখনও একটা ধারণা। যদিও শনির এই কল্পিত উপগ্রহের নাম রেখেছেন বিজ্ঞানীরা— ‘ক্রিসালিস’। ক্রিসালিস শব্দের অর্থ গুটিপোকা। শনির বলয় নিয়ে এই গবেষণায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন ‘ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি’ (এমআইটি)-র অধ্যাপক জ্যাক উইসডম। তিনি বলেন, ‘‘প্রজাপতির গুটির মতো শনির ওই উপগ্রহটি দীর্ঘ সময় ধরে সুপ্ত অবস্থায় ছিল। হঠাৎই সক্রিয় হয়ে ওঠে। তার পর সেই বলয় তৈরি হয়।’’
২০০৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত শনিকে প্রদক্ষিণ করেছিল নাসার মহাকাশযান ক্যাসিনি। গ্রহটিকে কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করে সে। পৃথিবীতে পাঠায় অজস্র তথ্য। কিন্তু সেই সব তথ্য নস্যাৎ করে দিচ্ছে পুরনো তত্ত্বকেই। শনি গ্রহ সম্পর্কে এত দিন জানা ছিল, এটি একটি দৈত্যাকার গ্যাসীয় পিণ্ড। এর ৮৩টি গ্রহ রয়েছে। যার মধ্যে ৫৩টির নামকরণ করা হয়েছে, বাকিদের নাম নেই। শনিকে ঘিরে থাকা বলয়ে রয়েছে অসংখ্য বরফ খণ্ড, পাথুরে ধ্বংসস্তূপ ও ধুলো।
নতুন পাওয়া তথ্যে এ-ও দেখা যাচ্ছে, অতীতে এক সময় নেপচুনের কবলে পড়েছিল শনি। নিজের কক্ষপথে থেকে ২৭ ডিগ্রি বেঁকে রয়েছে শনি গ্রহ। তার কারণ হিসেবে উইসডমের দলের ব্যাখ্যা, শনি এক সময় নেপচুনের ফাঁদে পড়েছিল। নেপচুনের মাধ্যাকর্ষণ বলের প্রভাবেই এটি নিজের অক্ষ থেকে ২৭ ডিগ্রি বেঁকে গিয়েছিল।