Myanmar Earthquake

৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে তছনছ মায়ানমার, জরুরি অবস্থা জারি করল জুন্টা, ধ্বংসলীলা ব্যাঙ্ককেও

শুক্রবার সকালে জোড়া ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে মায়ানমার। রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা যথাক্রমে ৭.৭ এবং ৬.৪। ছ’টি রাজ্য এবং প্রদেশে জরুরি অবস্থা জারি করেছে জুন্টা সরকার।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৫ ১৭:০৩
Share:
ভূমিকম্পের ফলে ব্যাঙ্কক এবং মায়ানমারে একাধিক বহুতল ভেঙে পড়েছে।

ভূমিকম্পের ফলে ব্যাঙ্কক এবং মায়ানমারে একাধিক বহুতল ভেঙে পড়েছে। ছবি: এক্স।

জোড়া ভূমিকম্পে তছনছ হয়ে গিয়েছে মায়ানমারের বিস্তীর্ণ এলাকা। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে প্রতিবেশী তাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাঙ্ককেরও কিছু অংশ। ভূমিকম্প পরবর্তী কম্পন বা ‘আফটারশক’ নিয়ে এখনও আতঙ্ক কাটেনি। ব্যাঙ্ককে বহু মানুষ ভূমিকম্পের সময়ে বাড়ি ছেড়ে রাস্তায় নেমে এসেছিলেন। তাঁরা অনেকে এখনও বাড়ি ফেরেননি। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ব্যাঙ্ককের সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের সামনে বহু মানুষ জড়ো হয়েছেন। মায়ানমারের সামরিক জুন্টা সরকার দেশের বিস্তীর্ণ এলাকায় জরুরি অবস্থা জারি করেছে।

Advertisement

জুন্টার তরফে টেলিগ্রামে জানানো হয়েছে, মায়ানমারের ছ’টি রাজ্য এবং প্রদেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হচ্ছে। গৃহযুদ্ধের কারণে জুন্টা অনেক এলাকায় পৌঁছোতে পারেনি। যে যে এলাকা বিদ্রোহীদের দখলে, সেখানে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি কেমন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। সেই এলাকাগুলিতে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া যাবে কি না, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।

ভূমিকম্প-পরবর্তী পরিস্থিতিতে মায়ানমারের জাতীয় বিমান সংস্থা বেশ কিছু উড়ান বাতিল করেছে। সমাজমাধ্যমে এই সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করেছে তারা। দেশের সরকারি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, মায়ানমারের মোট পাঁচটি শহরে ভূমিকম্পের কারণে বহুতল ধসে পড়েছে। ভেঙেছে দু’টি সেতু। এ ছাড়া, একটি জাতীয় সড়ক ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেঙে পড়া বহুতলের সংখ্যা প্রচুর। তবে হতাহতের সংখ্যা এখনও স্পষ্ট করা হয়নি।

Advertisement

মায়ানমারের মান্দালয় শহরে ভূমিকম্পের প্রভাব ছিল সবচেয়ে বেশি। একটি আস্ত মসজিদ ভেঙে পড়েছে সেখানে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে দাবি, মসজিদের ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে অন্তত ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এক প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, ‘‘আমার চোখের সামনে একটা পাঁচতলা বাড়ি হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে। গোটা শহরে সবাই রাস্তায়। কেউ কোনও বাড়ির ভিতরে ঢোকার সাহস পাচ্ছেন না। আমরা খুব ভয়ে আছি।’’

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জোড়া ভূমিকম্পের পর মায়ানমার এবং তাইল্যান্ডের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সমাজমাধ্যমে তিনি লিখেছেন, ‘‘মায়ানমার এবং তাইল্যান্ডে সকলের সুরক্ষার জন্য প্রার্থনা করছি। ওখানকার পরিস্থিতি দেখে আমি উদ্বিগ্ন। ভারত সাধ্যমতো সমস্ত সাহায্য করতে প্রস্তুত। আমাদের কর্তৃপক্ষকে তৈরি থাকতে বলেছি। মায়ানমার এবং তাইল্যান্ডের সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বলেছি বিদেশ মন্ত্রককে।’’

ভূমিকম্পের উৎসস্থল থেকে ব্যাঙ্ককের দূরত্ব অন্তত ৯০০ কিলোমিটার। তবু সেখানেও জোরালো কম্পন অনুভূত হয়। ব্যাঙ্কককে ‘ক্ষতিগ্রস্ত’ এলাকা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে তিন জনের মৃত্যু নিশ্চিত করেছে ব্যাঙ্কক প্রশাসন। জরুরি সফর বাতিল করে তাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে বসেছেন। শহরে ট্রেন এবং মেট্রো পরিষেবা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ভূমিকম্পের ফলে ব্যাঙ্ককে ভেঙে পড়ে একটি নির্মীয়মাণ গগনচুম্বী বহুতল। সেই ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে তিন জন মারা গিয়েছেন। এখনও অনেকের খোঁজ পাওয়া যায়নি। উপপ্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, ধ্বংসস্তূপে ৮১ জনের চাপা পড়ে থাকার সম্ভাবনা। উদ্ধারকাজ চলছে।

শুক্রবার সকালে জোড়া ভূমিকম্প হয়েছে মায়ানমারে। আমেরিকার জিয়োলজিক্যাল সার্ভের তথ্য অনুযায়ী, কম্পনের মাত্রা ছিল যথাক্রমে ৭.৭ এবং ৬.৪। আবার ভারতের ভূকম্প পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজি জানিয়েছে, প্রথম কম্পনের মাত্রা ৭.৫ এবং দ্বিতীয়টির মাত্রা ৭। প্রথমটির উৎসস্থল মায়ানমারের বর্মা এলাকার ১২ কিলোমিটার পূর্বে। আর দ্বিতীয়টির উৎস মায়ানমারের লকসকের ১৫১ কিলোমিটার পশ্চিমে। দু’টি কম্পনের ক্ষেত্রেই উৎপত্তিস্থল ছিল মাটির ১০ কিলোমিটার নীচে। ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকায় কম্পন অনুভূত হয়েছে। কেঁপেছে বাংলাদেশ। কলকাতায় কোথাও কোথাও মৃদু কম্পন টের পাওয়া গিয়েছে। ভারতে কম্পন অনুভূত হয়েছে দিল্লি পর্যন্ত। এমনকি, চিনের কিছু এলাকাতেও ভূমিকম্প টের পাওয়া গিয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement