রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর ক্রকাস সিটি কনসার্ট হল। ছবি রয়টার্স।
মস্কোর কনসার্ট হলে জঙ্গি হামলার ৭২ ঘণ্টা পরেও রুশ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। এই হামলার আগাম কোনও খবর গোয়েন্দা দফতর কেন পেল না, কেন এই মর্মান্তিক ঘটনা এড়ানো গেল না, এই নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। তবে ক্রেমলিন জানিয়েছে, কোনও দেশই পূর্ণমাত্রায় সন্ত্রাস প্রতিরোধী নয়। হামলার পিছনে কারা সেই নিয়েও শুরু হয়েছে চাপানউতোর। আমেরিকা, ফ্রান্স-সহ পশ্চিমের দেশগুলির দাবি, আইএস-কে হামলা চালিয়েছে। যদিও এর পিছনে ইউক্রেনের ভূমিকা উড়িয়ে দিচ্ছে না রাশিয়া।
আজ অভিযুক্ত চার জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসদমন আইনে চার্জ গঠন করল রুশ আদালত। আদালতে হাজির করার সময়ে সন্দেহভাজন চার জনের শরীরে নির্যাতনের ছাপ ছিল স্পষ্ট। এক জনকে আনা হয় হুইলচেয়ারে। প্রত্যেকের চোখেমুখে কালশিটের দাগ। একটি ভিডিয়ো ফাঁস হয়েছে, সেখানে প্রবল নির্যাতনের ছবি উঠে এসেছে। এ নিয়ে অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি রুশ মুখপাত্র।
ওই হামলায় ইতিমধ্যেই নিহতের সংখ্যা ১৫০ ছুঁইছুঁই। আহত ২০০-র কাছাকাছি। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানিয়েছেন, মুখ্য ষড়যন্ত্রকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁর বক্তব্য, ইউক্রেনে পালিয়ে যাওয়ার ছক কষেছিল সে। ইউক্রেন অবশ্য জানিয়েছে, এই হামলার সঙ্গে তাদের কোনও সম্পর্ক নেই। ব্রিটেনের দাবি, ইচ্ছাকৃত ভাবে হামলার সঙ্গে ইউক্রেনকে যুক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ-ও জানিয়েছেন, তথ্যপ্রমাণ অনুযায়ী হামলায় দায়ী আইএস। ইউক্রেনে জোরালো আঘাত হানা ঠিক হবে না। হামলাকারী চার জন তাজিকিস্তানের নাগরিক বলে বিভিন্ন সূত্রে দাবি করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে রাশিয়াকে তদন্তে সমস্ত রকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে তাজিকিস্তান।
আজ ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছেন, তদন্ত চলছে। আইএস হামলার দায় নিয়েছে বলে একটি মহলের তরফে বলা হলেও সেই বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছনো ঠিক হবে না বলে জানিয়েছেন পেসকভ।
গোয়েন্দা ব্যর্থতা প্রসঙ্গে পেসকভ জানিয়েছেন, দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে, বিশ্বের কোনও শহর বা দেশ সন্ত্রাসের ঝুঁকিমুক্ত নয়। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই নিরন্তর প্রক্রিয়া। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক স্তরে সহযোগিতারও প্রয়োজন। তবে বর্তমান সময়ে সেই সহযোগিতা মিলছে না বলেও অভিযোগ করেন। অনেকের মতে, ইউক্রেন যুদ্ধের পরে পশ্চিম দুনিয়ার প্রতিই এই মন্তব্য করেছেন ওই রুশ মুখপাত্র।
আমেরিকার অবশ্য দাবি, দু’সপ্তাহ আগেই হামলা নিয়ে আগাম সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছিল রাশিয়াকে। পশ্চিমের সাহায্য প্রয়োজন কি না, এই প্রশ্নের উত্তরে পেসকভ জানিয়েছেন, রুশ তদন্তকারী সংস্থাগুলি স্বাধীন ভাবে তদন্ত চালাচ্ছে। এই বিষয়ে অন্য কারও সাহায্যের প্রয়োজন নেই। ইতিমধ্যেই কয়েক জন সন্দেহভাজনকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে গোয়েন্দা সংস্থা।
হামলার পিছনে আইএসের নাম উঠলেও এর পিছনে ইউক্রেনের যুক্ত থাকার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছে না রাশিয়া। কিভ অবশ্য স্পষ্ট জানিয়েছে, হামলার সঙ্গে কোনও যোগ নেই। এই পরিস্থিতিতে মাকরঁর আবেদন, নিছক সন্দেহের বশে ইউক্রেনে জোরদার রুশ হামলা নিষ্ঠুরতার শামিল। মাকরঁর কথায়, “যা তথ্যপ্রমাণ মিলেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, হামলার পিছনে রয়েছে আইএস। বিদ্বেষের বশেই এই হামলা চালিয়েছে আইএস।”
মাকরঁর আবেদনের সত্ত্বেও ইউক্রেনে রুশ হামলা অব্যাহত। রাজধানী কিভে একাধিক বিস্ফোরণের খবর মিলেছে। ইউক্রেনে থাকা আমেরিকান রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন, হাইপারসনিক (শব্দের চেয়ে দ্রুত বেগ) ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। তবে একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেনের বায়ুসেনা।
হামলার দায় নিয়ে চাপানউতোরের মাঝেই এতগুলো প্রাণ হারানোর জেরে শোকে কাতর রাশিয়ার আম নাগরিক। আজ সকালে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে নিহতদের উদ্দেশে শ্রদ্ধা জানান দু’শোরও বেশি নাগরিক। অনেকের হাতে ছিল ফুল। মোমবাতি জ্বালিয়েও নিহতদের স্মরণ করেন অনেকে।