ডোনাল্ড ট্রাম্প। —ফাইল চিত্র।
আমেরিকার চাপানো আমদানি শুল্কে হাসফাঁস করছে গোটা বিশ্বের অর্থনীতি। বাণিজ্য-যুদ্ধের গন্ধ পাচ্ছেন অনেকেই। কিন্তু এর পাশাপাশি নিশ্চুপে ভারত মহাসাগর ও ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করছে আমেরিকা। ইয়েমেনে হুথিদের ঘাঁটিতে ইতিমধ্যেই হামলা শুরু করেছে আমেরিকান সেনাবাহিনী। খোদ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাদের সেই ‘কৃতিত্ব’ সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন। হুথিদের জমায়েতে বিস্ফোরণের একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে লিখেছেন ‘উপস্’।
ট্রাম্পের কথায় পশ্চিম এশিয়া থেকে দক্ষিণ চিন সাগর, আঞ্চলিক নিরাপত্তা বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর তাদের সরকার। কেউ বাধা সৃষ্টি করলেই ‘জবাব’ মিলবে। ভারত মহাসাগর অঞ্চলে অতি-শক্তিশালী বি-২ বোমারু বিমান মোতায়েন করার নির্দেশ দিয়েছে পেন্টাগন। উপগ্রহচিত্রে ধরা পড়েছে, দিয়েগো গার্সিয়া— আমেরিকা ও ব্রিটেনের যৌথ উদ্যোগে তৈরি নৌসেনা ঘাঁটিতে অন্তত ৬টি বি-২ স্টিল্থ বোমারু বিমান রাখা হয়েছে। সেনাঘাঁটির হ্যাঙ্গারে আরও বোমারু থাকতে পারে সন্দেহ করা হচ্ছে।
আমেরিকার কাছে মোট ২০টি বি-২ স্টিল্থ বোমারু বিমান রয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক যুদ্ধবিমান এটি। এর নকশা এমনই যে সহজে নজরে পড়ে না। অ্যান্টি-এয়ারক্রাফ্ট ডিফেন্স, অর্থাৎ দুর্ভেদ্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে শত্রুপক্ষের আকাশসীমায় ঢুকে যেতে পারে এই ধরনের বিমান। এ হেন শক্তিশালী যুদ্ধবিমান ভারত মহাসাগর অঞ্চলে মোতায়েন করার বিষয়টিকে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত পদক্ষেপ বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা।
এ ছাড়াও ভারত-প্রশান্তমহাসাগরীয় অঞ্চলে নিযুক্ত ‘এয়ারক্রাফ্ট ক্যারিয়ার’-এর সংখ্যা বাড়াচ্ছে আমেরিকা। এত দিন একটিই ছিল। সেই সংখ্যা বাড়িয়ে ৩টি ‘এয়ারক্রাফ্ট ক্যারিয়ার’ মোতায়েন করা হচ্ছে। ‘এয়ারক্রাফ্ট ক্যারিয়ার’ হল এমন যুদ্ধজাহাজ, যা কিনা সমুদ্রে এয়ারবেস হিসেবেও কাজ করে। এমন তিনটি যুদ্ধজাহাজের দু’টি ভারত মহাসাগরে এবং একটি পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে, দক্ষিণ চিন সাগরের কাছে রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। পেন্টাগন জানিয়েছে, ‘ইউএসএস কার্ল ভিনসন’ পশ্চিম এশিয়ার দিকে থাকবে। ‘ইউএসএস হ্যারি এস ট্রুম্যান’ আরব সাগরে থেকে নজরদারি চালিয়ে যাবে। তৃতীয় যুদ্ধজাহাজটি, ‘ইউএসএস নিমিৎজ়’ দক্ষিণ চিন সাগরের কাছাকাছি থাকবে।
এখানেই শেষ নয়। পেন্টাগনের মুখপাত্র শন পারনেল বলেন, ‘‘আমেরিকার প্রতিরক্ষা সচিব পিটার হেগসেথ আরও অতিরিক্ত স্কোয়াড্রন, যুদ্ধবিমান তৈরি রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন।’’ তবে এর বেশি খোলসা করে বলেননি তিনি। পেন্টাগনের বক্তব্য, ‘‘এই অঞ্চলে আমেরিকার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে এই পদক্ষেপ। এ অঞ্চলের নিরাপত্তা বজায় রাখতে
বদ্ধপরিকর আমেরিকা ও তার বন্ধুরা। কোনও দেশ বা কোনও গোষ্ঠী যুদ্ধ বাধালেই তার যথাযোগ্য জবাব মিলবে।’’
আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেছেন সমাজমাধ্যমে। সেই ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, ইয়েমেনে হুথি জঙ্গিদের উপরে হামলা চালানো হচ্ছে। সাদা-কালো ওই ভিডিয়োটি সেনার ড্রোন বা কোনও যুদ্ধবিমান থেকে রেকর্ড করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। দেখা গিয়েছে, একটি রাস্তার উপরে জড়ো হয়েছে অনেকে (হুথি জঙ্গিরা)। এর কয়েক সেকেন্ডের মাথায় বিস্ফোরণ ঘটল। বিকট উজ্জ্বল আলো। প্রকাণ্ড ধোঁয়ার কুণ্ডলী আকাশ ছোঁয়। তার পর আরও একটু কাছ থেকে ক্যামেরাবন্দি হয়েছে দৃশ্য— যেখানে বোমা পড়েছে বড়সড় গহ্বর তৈরি হয়েছে রাস্তায়। মৃতদেহ স্পষ্ট করে দেখা যায়নি। ভিডিয়োটির সঙ্গে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘‘হুথিরা হামলা চালানোর জন্য জড়ো হয়েছিল...।’’ লোহিত সাগরে বিদেশি জাহাজগুলিকে নিশানা করে একের পর এক হামলা চালিয়ে যাচ্ছিল হুথি জঙ্গিরা। তার জবাব দিতে পাল্টা হামলা শুরু করেছে আমেরিকান সেনাবাহিনী। ট্রাম্প লিখেছেন, ‘‘উপস্, এই হুথিরা আর হামলা চালাতে পারবে না। আমাদের জাহাজ ডোবাতে পারবে না ওরা।’’