দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল। —ফাইল চিত্র।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট পদ থেকে বরখাস্ত (ইমপিচমেন্ট) হলেন ইউন সুক-ইওল। শনিবার সে দেশের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে ভোটাভুটিতে বরখাস্তের দাবির পক্ষেই অধিকাংশ ভোট পড়ল। যার ফলে বিপদ বাড়ল ইওলের। দক্ষিণ কোরিয়ায় সামরিক আইন (মার্শাল ’ল) জারির ঘোষণার পর থেকেই দেশের এক বড় অংশের বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন তিনি।
সামরিক আইন জারির ঘোষণার পর থেকেই ইওলকে বরখাস্তের দাবি তোলেন বিরোধীরা। পার্লামেন্টে বরখাস্তের প্রস্তাবও আনেন তাঁরা। গত সপ্তাহে পার্লামেন্টে ভোটাভুটিতে বিরোধীরা বরখাস্তের প্রস্তাবের পক্ষে প্রয়োজনীয় ভোট সংগ্রহ করতে পারেননি। তবে তাঁরা জানিয়েছিলেন আবার ইওলের বরখাস্তের প্রস্তাব পেশ করবেন। শনিবার ভোটাভুটিতে প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছেন ২০৪ জন পার্লামেন্ট সদস্য। ৩০০ জনের মধ্যে মাত্র ৮৫ জন সদস্য প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোটদান করেছেন। বাকি ১১ জনের মধ্যে তিন জন অনুপস্থিত ছিলেন। আর আট জনের ভোট বাতিল হয়। অর্থাৎ, তাঁর দল পিপ্লস পাওয়ার পার্টির অনেক সদস্যই ইওলকে বরখাস্তের পক্ষে ভোট দিয়েছেন।
ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে প্রস্তাব পাশ হয়ে যাওয়ায় ইওলকে তাঁর দায়িত্ব থেকে বরখাস্ত করা হল। তবে যত দিন না তা কার্যকর হচ্ছে, তত দিন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব সামলাবেন প্রধানমন্ত্রী হান ডাক-সু। এখন ইওলের ভাগ্য নির্ধারণ করছে সাংবিধানিক আদালতের রায়ের উপর। এই আদালতই স্থির করবে ইওলের অপসারণ বহাল থাকবে কি না।
গত ৩ ডিসেম্বর জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার সময় ইওল জানান, তিনি সারা দেশে সামরিক আইন বলবৎ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কেন এমন সিদ্ধান্ত নিতে হল তাঁকে, তার ব্যাখ্যাও করেছিলেন ইওল। তিনি জানান, উত্তর কোরিয়ার একনায়ক কিম জং উনের মদতে ক্ষমতা দখলের ছক কষছে বিরোধীরা। তাঁর ব্যাখ্যা, দেশকে কমিউনিস্ট আগ্রাসন থেকে সুরক্ষা দিতে এবং রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি নির্মূল করতে দক্ষিণ কোরিয়ায় সামরিক আইন জারি করছেন। এই আইন বাস্তবায়িত করতে দায়িত্ব দেওয়া হয় সে দেশের সেনাপ্রধান জেনারেল পার্ক আন-সু-কে। সামরিক আইন জারির মধ্যে দিয়ে দেশে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে চেয়েছিলেন ইওল।
প্রেসিডেন্টের ভাষণের পরই দক্ষিণ কোরিয়ার দিকে দিকে শুরু হয় বিক্ষোভ। বিরোধীরা তো বটেই, শাসকদলের অনেকেই সামরিক আইনের বিরুদ্ধে পথে নামেন। সে দেশের পার্লামেন্টের বিরোধী সদস্যেরা ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি ভবনে গিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। হাজার হাজার মানুষের জমায়েতে অশান্ত হয়ে ওঠে অ্যাসেম্বলি ভবন চত্বর। শুরু হয় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের খণ্ডযুদ্ধ। পরে পরিস্থিতি এতটাই খারাপ দিকে গড়ায় যে, বাধ্য হয়েই সামরিক আইন প্রত্যাহার করেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট। তবে প্রত্যাহার করার পরেও ইওলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ কমেনি। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রেসিডেন্টের বরখাস্তের দাবি ওঠে। শনিবার পার্লামেন্টে যখন ভোটাভুটি প্রক্রিয়া চলছে, তখন বাইরে বহু মানুষ জমায়েত করেছিলেন। পোস্টার হাতে বিক্ষোভ দেখান। প্রেসিডেন্টের বরখাস্তের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন সকলে।