কখনও ভাড়াটিয়া সেজে লম্বা সুড়ঙ্গ করে, তো কখনও ঠিক হলিউড ফিল্মের ভঙ্গিমায় ছক কষা হয়েছিল এই সমস্ত ডাকাতির। গ্যালারিতে রইল এমন কিছু ব্যাঙ্ক ডাকাতির ঘটনা
স্ট্যান্ডার গ্যাং: দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাক্তন কারা কর্তা মেজর জেনারেল ফ্রান্স স্ট্যান্ডারের ছেলে অ্যান্ড্রি স্ট্যান্ডার। বাবা পুলিশ হওয়ায় ছোট থেকে অ্যান্ড্রির উপর পুলিশ হওয়ার চাপ ছিল। দক্ষিণ আফ্রিকার পুলিশ ট্রেনিং কলেজ থেকে ভাল নম্বর নিয়ে পাশ করে কেম্পটন পার্ক ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টে যোগ দেন অ্যান্ড্রি। পুলিশের চাকরি পাওয়ায় পরিবার খুশি ছিল। কিন্তু নিজের কাজ নিয়ে একেবারেই খুশি ছিলেন না অ্যান্ড্রি। পুলিশে কাজ করার পাশাপাশি ব্যাঙ্ক লুঠ করতেও শুরু করেন তিনি। পুলিশ হওয়ার সুবাদে নিরাপত্তার ফাঁক জানায় ব্যাঙ্ক লুঠে বেশ সুবিধাও পেতে থাকেন তিনি। কখনও কখনও লাঞ্চ ব্রেকেও ব্যাঙ্ক লুঠ করতেন অ্যান্ড্রি। ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত মোট ৩০টি ব্যাঙ্ক লুঠ করেন অ্যান্ড্রি। তাঁর জীবন নিয়ে বেশ কিছু সিনেমাও তৈরি হয়েছে।
খালিস্তান কম্যান্ডো ফোর্স: ভারতের অন্যতম বড় ব্যাঙ্ক লুঠ এই গ্যাংটিই করেছিল। যার মাস্টারমাইন্ড ছিলেন খালিস্তানপন্থী এই সংগঠনের প্রধান লাভ সিংহ। লুধিয়ানার পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের মিলার গঞ্জ শাখা থেকে ৫ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা লুঠ করেছিল খালিস্তান কম্যান্ডো ফোর্স। লুঠ করা টাকার মধ্যে রিভার্জ ব্যাঙ্কের টাকাও ছিল। ১৯৮৭ সালে এই ঘটনা ঘটে। ১২ থেকে ১৫ জন সশস্ত্র পুলিশের পোশাকে ব্যাঙ্কে ঢুকে এই ডাকাতি করেন। পরে অবশ্য দলের সবাই গ্রেফতার হয়।
সুড়ঙ্গ কেটে ডাকাতি: ২০০৫ সালে একদল ডাকাত ব্রাজিলের ব্যাঙ্কো সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক থেকে ঠিক ৬৫৬ ফুট দূরে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করে। প্রতিবেশীরা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি যে, ঘরের ভিতর থেকে রোজ একটু একটু করে সুড়ঙ্গ খুঁড়তে শুরু করছিল তারা। ৬৫৬ ফুট দূরে ব্যাঙ্ক পর্যন্ত সুড়ঙ্গ কেটে এক ছুটির দিন সাড়ে ছ’কোটি ডলার ডাকাতি করে তারা। ব্রাজিলের ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে বড় ব্যাঙ্ক ডাকাতি।
আর্জেন্তিনার বুয়েনাস আইরেস ব্যাঙ্ক ডাকাতি: ঠিক যেন কোনও হলিউড ফিল্ম। ব্যাঙ্কে ডাকাতি হচ্ছে। খবর পেয়ে বাইরে ঘিরে ফেলেছে ২০০ পুলিশ। পালানোর কোনও উপায় নেই। কিন্তু ব্যাঙ্কের ভিতরে ঢুকেই তাজ্জব হয়ে পড়ল পুলিশ। ব্যাঙ্ক গ্রাহকদের ১৪০টি সেফ ডিপোজিট বাক্স নিয়ে উধাও ডাকাতরা! কিন্তু পালালো কী ভাবে? তদন্তে পুলিশ যা জানলো তাতে অবাক হওয়ার আরও বাকি ছিল। ওই ব্যাঙ্কের মেঝেয় তৈরি করা হয়েছে গর্ত। গর্তের সঙ্গে যুক্ত সুড়ঙ্গ আর সেই সুড়ঙ্গ গিয়ে পড়েছে লা প্লাটা নদীতে। যেখান দিয়েই পালিয়ে যায় ডাকাতরা। ২০০৫ সালে এই ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এই ডাকাতি মনে করিয়ে দেয় ২০০৮ এর থ্রিলার ফিল্ম ‘দ্য ব্যাঙ্ক জব’কে।
আমেরিকার প্রথম ব্যাঙ্ক ডাকাতি: ১৭৯৮ সাল। পেনসিলভেনিয়ার ব্যাঙ্ক অফ পেনসিলভেনিয়া থেকে ১ লক্ষ ৬২ হাজার ৮২১ ডলার ডাকাতি হয়। তদন্তে পুলিশ প্রথমে ভুল ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। পরে ছোট্ট ভুলে ধরা পড়ে যায় মাস্টারমাইন্ড আইজ্যাক ডেভিস। ভুলটা কী? যে ব্যাঙ্ক থেকে ডাকাতি করেছিল আইজ্যাক, ডাকাতির অর্থ সেই ব্যাঙ্কেই জমা করেছিল।
ফ্রাইডে নাইটস রবার: এই নামেই পরিচিত ছিল আমেরিকার কার্ল গুগাসিয়ান। কারণ ডাকাতির জন্য শুধুমাত্র শুক্রবার রাতকেই বেছে নিয়েছিল সে। এবং প্রতিটা ব্যাঙ্ক ডাকাতির পর চুরি করা টাকা গোপন স্থানে লুকিয়ে রাখত এবং কিছু ক্লু ছেড়ে যেত। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ক্লু উদ্ধার করতে পারত না পুলিশ। পরে বিষয়টা ধামাচাপা পড়ে গেলে লুকনো টাকা উদ্ধার করতে আসত ওই ডাকাত। মোট ৪৫টি ডাকাতি করেছিল সে। কিন্তু মাত্র ৫টি ডাকাতির ঘটনাতেই পুলিশ তাকে দোষী সাব্যস্ত করতে পেরেছিল।