শি জিনপিং।
চিনা ঋণের জালে জড়িয়ে আর্থিক বিপর্যয়ে মুখে পড়তে হয়েছে শ্রীলঙ্কাকে। ঠিক একই কারণে ধুঁকছে পাকিস্তানও। এ বার শি জিনপিংয়ের দেশের দেওয়া ঋণের হাতছানিতে সাড়া দিল প্রশান্ত মহাসাগরের ছোট্ট দ্বীপ সলোমন আইল্যান্ড।
২০২৩ সালের নভেম্বরে প্যাসিফিক গেমস আয়োজন করছে সলোমন আইল্যান্ড। ওই ক্রীড়া অনুষ্ঠান যাতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাসিন্দারা বাড়ি বসেই দেখতে পারেন, তাই টেলি-যোগাযোগের উন্নতির জন্য প্রতিযোগিতা শুরুর আগেই ১৬১টি টাওয়ার বসানোর লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে সরকার। আর তার বরাত দেওয়া হয়েছে চিনা সংস্থা হুয়েই-কে। সেই কাজের জন্যই চিন থেকে ৬.৬ কোটি ডলারের ঋণ নিয়েছে এই দ্বীপরাষ্ট্র।
বেজিংয়ের থেকে ঋণ নেওয়ার জন্য গত এপ্রিলে এক গোপন চুক্তি করে সলোমন আইল্যান্ড। তার আগেই তাইওয়ানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে বেরিয়ে এসেছিল এই দ্বীপরাষ্ট্র। তার পরেই চিনের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর হয়। সলোমন সরকার জানিয়েছে, এই চুক্তি দু’দেশের মধ্যে ঐতিহাসিক আর্থিক সমন্বয়। তবে আর্থিক বিশেষজ্ঞেরা অবশ্য এতে চিনেরই লাভ দেখছেন। কারণ, এক দিকে ঋণের জালে জড়িয়ে ফেলে সলোমন আইল্যান্ডে সামরিক ঘাঁটি তৈরিতে উদ্যোগী হতে পারে চিন। অন্য দিকে টাওয়ার বসিয়েও আর্থিক লাভের মুখ দেখবেএকটি চিনা সংস্থাই। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, চিনা ঋণের ফাঁদে পড়ে সলোমন আইল্যান্ডের দশাও না শ্রীলঙ্কার মতো হয়। এ দিকে সলোমন আইল্যান্ডের সঙ্গে চিনের সখ্য উদ্বেগ বাড়িয়েছে আমেরিকা ও তাদের মিত্ররাষ্ট্রগুলোর। এ ক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়টি ভাবাচ্ছে আমেরিকাকে। কারণ, দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের এই দেশে চিন যদি সামরিক ঘাঁটি তৈরি করে সে ক্ষেত্রে ওই অঞ্চলে ক্রমশ আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করতে পারে চিন। সঙ্গে প্রযুক্তিগত বিভিন্ন কার্যকলাপেও চিনা নজরদারি চলতে পারে বলে আশঙ্কা আমেরিকার। যদিও সলোমন আইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মানাসে সোগাভারে আমেরিকাকে আশ্বস্ত করে জানিয়েছেন, এ ধরনের আশঙ্কা অমূলক।
চুক্তি অনুসারে ঋণ শোধের মেয়াদ ২০ বছর। এ ক্ষেত্রে ঋণ দিচ্ছে চিনের দ্য এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাঙ্ক। চলতি মাসের শুরুতেই সোগাভারে দেশের সংবিধানে বদল আনার প্রস্তাব এনেছেন। যাতে প্যাসিফিক গেমস অনুষ্ঠিত হওয়ার পরে দেশের নির্বাচন করা যায়। কারণ হিসাবে তিনি জানিয়েছেন, দেশের পক্ষে দু’টো বড় ইভেন্ট একসঙ্গে সামলানো সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে ২০২৩-এর পরিবর্তে নির্বাচন হবে ২০২৪ সালের শুরুতে।
যদিও বিরোধী দলনেতা ম্যাথু ওয়েল প্রধানমন্ত্রীর এই যুক্তিকে উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার অর্থ হল দেশের মানুষকে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগের অধিকারে বাধা সৃষ্টি করা।