Bangladesh Protest

‘আমার ছোট মা-রে, তুই আমাদের ছেড়ে চলে গেলি! তোরে ছাড়া কেমনে বাঁচব’, আন্দোলনের বলি একরত্তি

দীপক এবং বিউটি গোপের একমাত্র সন্তান ছিল রিয়া। বিয়ের পাঁচ বছর পর তাঁদের কন্যাসন্তান হয়েছিল। এ বছরই স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রিয়াকে ভর্তি করিয়েছিলেন গোপ দম্পতি।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২৪ ১১:২৯
Share:

(বাঁ দিকে) রিয়া গোপ। অশান্ত বাংলাদেশের সেই দৃশ্য (ডান দিকে)। ছবি: এক্স।

মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে এক ব্যক্তি। কাঁদতে কাঁদতে বোধহয় চোখের জলও শুকিয়ে গিয়েছিল। শুধু অস্পষ্ট স্বরে একা একাই বিড়বিড় করে বলে যাচ্ছিলেন, “কোথা থেকে কী হয়ে গেল বুঝতে পারছি না। আমার কোলেই মেয়ের মাথা থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছিল।” তার পরই চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলেন। সদ্য কন্যাহারা এক বাবার আকুলিবিকুলি অবস্থা দেখে কাছেপিঠে দাঁড়িয়ে থাকা আত্মীয়রাও নিজেদের কান্না ধরে রাখতে পারলে না। বাংলাদেশে অশান্তির খবর প্রকাশ পাওয়ার পর এই প্রথম এত ছোট কোনও শিশু নিহত হওয়ার খবর প্রকাশ্যে এল।

Advertisement

গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে উত্তাল ছিল বাংলাদেশ। দিকে দিকে আন্দোলন চলছে। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ, মৃত্যু, আগুন, ভাঙচুরের মতো ঘটনা ঘটেছে। সেই আন্দোলন এবং সংঘর্ষে অনেকেই তাঁদের স্বজন হারিয়েছেন। সেই সংঘর্ষই কেড়ে নিল ছোট্ট এক শিশুর প্রাণও। রিয়া গোপ। বছর সাড়ে ছয়। বাবা-মায়ের সঙ্গে বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ সদরের নয়ামাটি এলাকায় থাকত। বাংলাদেশের প্রতিটি কোনায় আন্দোলনের আগুন ছড়িয়েছিল। নারায়ণগঞ্জও বাদ পড়েনি।

বাংলাদেশের সংবাদপত্র ‘প্রথম আলো’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত শুক্রবার দুপুরে খাওয়াদাওয়ার পর ছাদে খেলতে গিয়েছিল ছোট্ট রিয়া। কিছু ক্ষণ পরই ওই এলাকা অশান্ত হয়ে ওঠে। রিয়াদের বাড়ির সামনে সংঘর্ষ শুরু হয়। আতঙ্কিত হয়ে পড়েন দীপক কুমার গোপ এবং তাঁর স্ত্রী বিউটি। কন্যাকে ছাদ থেকে নিয়ে আসার জন্য ছোটেন দীপক। কন্যাকে কোলে নিতেই রাস্তা থেকে ছোড়া একটি গুলি এসে লাগে রিয়ার মাথায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দীপক দেখেন তাঁর জামা রক্তে ভিজে যাচ্ছে। কন্যার মাথা থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। দীপকের কাঁধে মাথা রেখে নিস্তেজ হয়ে পড়েছিল ছোট্ট রিয়া। কন্যাকে নিয়ে হাসপাতালে ছোটেন দীপক। বাড়ির কাছেই একটি ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয় রিয়াকে। কিন্তু অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তরিত করা হয়। দ্রুত অস্ত্রোপচারও করা হয় রিয়ার। চিকিৎসকেরা আশ্বস্তও করেছিলেন গোপ দম্পতিকে।

Advertisement

‘প্রথম আলো’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, তবে চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, ৭২ ঘণ্টার আগে কিছু বলা যাবে না। শুক্রবার পার করে তিন দিন কেটে যায়। রিয়ার আঙুলের নড়াচড়া দেখে আশার আলো দেখেছিলেন গোপ দম্পতি। কিন্তু কন্যার জন্য যে অন্য কিছু অপেক্ষা করে আছে, সেটা কল্পনাও করতে পারেননি তাঁরা। বুধবার হাসপাতালেই মৃত্যু হয় রিয়ার। হাসপাতালে রিয়ার মৃত্যুর কারণ হিসাবে লেখা হয়েছে ‘গানশট ইনজুরি’। কন্যার মৃত্যুর খবরে দিগ্বিদিকশূন্য হয়ে পড়েন গোপ দম্পতি।

বুধবারই রিয়ার দেহের ময়নাতদন্ত করা হয়। হাসপাতালের মর্গের সামনেই অপেক্ষা করছিলেন দীপক। সঙ্গে কয়েক জন আত্মীয়-পরিচিতেরা। মর্গের সামনে দাঁড়িয়েই দীপক বিড়বিড় করে বলতে থাকেন, “কোথা থেকে কী হয়ে গেল, কিছুই বুঝি নাই। আমার কোলেই মেয়ের মাথা থেকে রক্ত বেয়ে পড়ছিল।” তাঁকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছিলেন আত্মীয়েরা। কিন্তু চিৎকার করে দীপক বলতে থাকেন, “আমার ছোট মা-রে, তুই আমাদের ছেড়ে চলে গেলি। তোরে ছাড়া আমরা কেমনে বাঁচব।”

দীপক এবং বিউটির একমাত্র সন্তান ছিল রিয়া। স্থানীয় একটি ইমারতি সামগ্রীর দোকানে কাজ করেন দীপক। বিয়ের পাঁচ বছর পর তাঁদের কন্যাসন্তান হয়েছিল। এ বছরই স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রিয়াকে ভর্তি করিয়েছিলেন গোপ দম্পতি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement