(বাঁ দিক থেকে) নওয়াজ শরিফ, ইমরান খান এবং বিলাবল ভুট্টো জারদারি। —ফাইল চিত্র।
পূর্ণাঙ্গ ফলপ্রকাশের পর কেটেছে কয়েক ঘণ্টা। এ বার পাকিস্তানে জোট সরকার গঠনে তৎপরতা শুরু হল। কোন সূত্রে জোট সরকার গঠন করা হবে, তা নিয়ে আলোচনা সারতে রবিবার সন্ধ্যায় পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)-র নেতা তথা বেনজির-পুত্র বিলাবল ভুট্টো জারদারির লাহোরের বাড়িতে পৌঁছলেন নওয়াজ শরিফের ভাই তথা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। পিপিপি-র তরফে এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করে এই বৈঠককে দুই দলের ‘প্রথম সরকারি যোগাযোগ’ বলে অভিহিত করা হয়েছে।
আগেই নওয়াজের তরফে বিলাবলকে জোট করে সরকার গঠনের আহ্বান জানানো হয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) নেতার প্রস্তাব চিন্তাভাবনার স্তরে রয়েছে বলে জানানো হয় পিপিপি-র তরফে। মাঝে জল্পনা ছড়ায় যে বিলাবলের পিতা আসিফ আলি জারদারির সঙ্গে বৈঠক হয়েছে নওয়াজের। কিন্তু এই বৈঠকের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না বলে দাবি করে জল্পনায় জল ঢালেন বিলাবল। রবিবার সন্ধ্যায় শাহবাজ়ের সঙ্গে বৈঠকে বিলাবলের সঙ্গে ছিলেন আসিফও।
নওয়াজ এবং বিলাবল যখন সরকার গঠনের তোড়জোড় শুরু করছেন, সেই সময় রাস্তায় নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)। ভোটে কারচুপির অভিযোগ তুলে নির্বাচন কমিশনের দফতরগুলির সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন পিটিআই সমর্থকেরা। ইতিমধ্যেই রাওয়ালপিন্ডি এবং লাহোরের পূর্ব প্রান্তের একাধিক জায়গা থেকে পুলিশ এবং পিটিআই সমর্থকদের মধ্যে খণ্ডযুদ্ধের খবর পাওয়া গিয়েছে। অন্য দিকে পিটিআই-এর অস্বস্তি বাড়িয়ে তাদের সমর্থিত নির্দল প্রার্থী ওয়াসিম কাদির রবিবারই নওয়াজের দলে যোগ দিয়েছেন। এই আবহে জোট সরকারে পিটিআই-এর শামিল হওয়ার সম্ভাবনা খারিজ করে দিয়েছেন ইমরানের অবর্তমানে দলের শীর্ষ নেতা গোহর আলি খান।
পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির ২৬৪টি আসনে গণনা শেষ হয়ে গেলেও কোনও দলই একক ভাবে ‘জাদুসংখ্যা’ ছুঁতে পারেনি। ত্রিশঙ্কু ফলাফল হওয়ায় জোট সরকারই ক্ষমতায় আসতে চলছে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রাথমিক গণনাতেই ইঙ্গিত ছিল যে, লড়াই হতে চলেছে মূলত জেলবন্দি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থিত নির্দল এবং আর এক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন)-এর মধ্যে। তবে লড়াইয়ে ছিল প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী তথা বেনজির ভুট্টোর পুত্র বিলাবল ভুট্টো জারদারির দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)-ও। সে দেশের সংবাদপত্র ‘ডন’-এর প্রতিবেদন অনুসারে, এখনও পর্যন্ত পিটিআই সমর্থিত নির্দল প্রার্থীরা ৯৩টি, পিএমএল-এন ৭৩টি এবং পিপিপি ৫৪টি আসনে জিতেছে। অন্যেরা পেয়েছে ৩৩টি আসন। অন্য একটি সূত্র বলছে, পিটিআই সমর্থিত নির্দলরা ১০২টি আসনে জয়ের মুখ দেখে ফেলেছেন। তবে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গড়ার জন্য চাই আরও ৩১টি আসন। যা সম্ভব নয়।
অন্য দিকে, গণনায় কারচুপির অভিযোগ জানিয়ে বেশ কয়েকটি কেন্দ্রের প্রার্থীরা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন ৪০টি কেন্দ্রে ইতিমধ্যে পুনর্নির্বাচনের নির্দেশ দিয়ে দিয়েছে। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি পুনর্নির্বাচনের দিন স্থির হয়েছে। তবে এই ৪০টি আসন যদি কোনও একটি দলের পক্ষে যায়, তা হলেও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া মুশকিল। তবে পাকিস্তানের রাজনৈতিক শিবিরের বড় অংশ মনে করছে, ইসলামাবাদের কুর্সিতে কে বসবেন, শেষমেশ তা ঠিক করবে পাক সেনাই, আরও স্পষ্ট করে বললে সেনাপ্রধান আসিম মুনির।