কোপেনহেগেন-এর রাস্তায় দাঁড়িয়ে রয়েছে ‘সেক্সেল্যান্স’।
টাকা দিয়ে যৌনকর্মী ভাড়া করেছিলেন এক ব্যক্তি। তাঁকে ঠিকানা দেওয়া হল। যথা সময়ে নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছে তো চক্ষু চড়কগাছ। কোনও যৌনপল্লি নয়, রেস্তোরাঁর নীলচে ঘরও নয়— এ যে একটা আস্ত অ্যাম্বুল্যান্স। এটাই কী তবে...? দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকতেই ভুল ভাঙল। অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘এখানে কী হবে?’ ভিতর থেকে সহজ গলায় উত্তর এল ‘সেক্স’। ব্যাপারটা ঠিক কী?
ডেনমার্কের কোপেনহেগেন-এর রাস্তায় দাঁড়িয়ে রয়েছে এমনই সেকন্ড হ্যান্ড একটি অ্যাম্বুল্যান্স। স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ড্যানিশ সোশ্যাল এন্টারপ্রেনিয়র যার নাম দিয়েছে ‘সেক্সেল্যান্স’। এই সংগঠনেরই অন্যতম কর্মী মাইকেল লোদবার্গ ওসলেন খোলসা করলেন বিষয়টা।
ডেনমার্কে দেহ ব্যবসা আইননত বৈধ হলেও এই ব্যবসায় হিংসার সংখ্যাও নেহাত কম নয়। ন্যাশনাল সেন্টার ফর সোশ্যাল রিসার্চ-এর একটি পরিসংখ্যান বলছে, প্রায় ৪৫ শতাংশ দেহ ব্যবসায়ী ডেনমার্কে অত্যাচারের শিকার হন। প্রয়শই তাঁদের হুমকির মুখে পড়তে হয়। আর এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি রুখতেই ‘সেক্সেল্যান্স’-এর চিন্তা মাথায় আসে এসলেনের। ‘‘আসলে এটা একটা সামাজিক বার্তা দেওয়ার উপায়। পুরনো অ্যাম্বুল্যান্সকে দেহ ব্যবসার কাজে লাগিয়ে কাস্টমারদের উদ্দেশ্যে আমরা বলতে চাই যে এটা কোনও অত্যাচারের জায়গা নয়।’’— বললেন মাইকেল। শুধু তাই নয়, যে কোনও রকমের আক্রমণ বা হিংসার ঘটনার মোকাবিলা করার জন্য এই অ্যাম্বুল্যান্সের বাইরে মোতায়েন থাকেন স্বেচ্ছাসেবকরাও।
‘সেক্সেলেন্স’-এর সৃষ্টিকর্তা মাইকেল লোদবার্গ ওসলেন
অন্য দিকে, ১৯৯৯ সাল থেকে ডেনমার্কে দেহ ব্যবসা বৈধ হলেও কোনও ঘর ভাড়া নিয়ে এই ব্যবসা চালানো এখানে অবৈধ। ফলে এখানকার যৌন কর্মীদের আস্তানা নিয়ে প্রায়শই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এই সমস্যারও সমাধান করেছে ‘সেক্সেলেন্স’। এসলান জানাচ্ছেন, সম্পূর্ণ বিনামূল্যে যৌনকর্মীদের ব্যবহার করতে দেওয়া হয় এই যান।
‘সেক্সেলেন্স’-এর ভিতরের সজ্জাও একেবারে অভিনব। ঢুকতেই চোখে পড়বে নোটিশ। যেখানে লেখা রয়েছে, ‘‘যে কোনও রকম হিংসায় তৎক্ষণাৎ পুলিশে ফোন করা হবে।’’ এখানেই শেষ নয়, এখানে যাঁরা আসছেন তাঁদের স্বাচ্ছন্দ্য এবং প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে ওয়েট ওয়াইপস থেকে শুরু করে কন্ডোম, লিউব, হিটার সবটাই রয়েছে ‘সেক্সেলেন্স’-এ।
কিন্তু কেন হঠাৎ ‘সেক্সেলেন্স’-এর ভাবনা আসে ওসলেনের মাথায়? ‘‘আমার বেশ কয়েকজন বন্ধু এবং প্রতিবেশী এই পেশার সঙ্গে যুক্ত। ওঁদের সমস্যাটা তাই আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি। যন্ত্রণায় তাঁদের কষ্ট পেতেও দেখেছি। এটার একটা প্রতিকার দরকার ছিল।’’
আরও পড়ুন: টর্চ, চার্জার, প্লেয়ার! ‘আজব’ ছাতা বানালো মধ্যপ্রদেশের কিশোর
‘সেক্সেল্যান্স’-এর অন্দরমহল
২০১৬-র নভেম্বরে প্রথম কোপেনহেগেনের রাস্তায় নামে ‘সেক্সেলেন্স’। ইতিমধ্যেই যথেষ্ট জনপ্রিয়তা পেয়েছে ওসলেনের এই অভিনব আইডিয়া।
তবে শুধুই ‘সেক্সেলেন্স’ নয়, ২০১৩ সাল থেকে ড্রাগ অ্যাডিক্টদের উপর ‘ইললিগাল’ নামের একটি পত্রিকাও চালান মাইকেল। এই পত্রিকার বিশেষত্ব হল, মাদকাসক্তরাই এই পত্রিকা বিক্রি করেন। পত্রিকা বিত্রির টাকাও মাদকাসক্তদের মূল জীবনে ফিরিয়ে আনার কাজেই ব্যবহার করা হয়।
(ছবি: সংগৃহীত)