প্রতীকী ছবি।
‘ক্রমে আলো আসিতেছে’...
এত কাল পর্যন্ত মেয়েদের গাড়ি চালানোর অনুমতি দেয়নি রক্ষণশীল আরব-সমাজ। কিন্তু ক্রমশ কাটছে বাধা। মঙ্গলবার শেষমেশ উঠে গেল সেই নিষেধাজ্ঞা।
২০১৮ সালের জুন মাস থেকে কার্যকর হতে চলেছে নতুন আইন। মেয়েদের হাতে গাড়ির স্টিয়ারিং ধরিয়ে দিয়েই ক্রমশ অন্ধকার কাটাচ্ছে সৌদি আরব।
মঙ্গলবার সরকারি সংবাদমাধ্যমে সৌদি আরব প্রশাসন এই ঘোষণা করেছে। সৌদি নেতারা মনে করছেন, এর ফলে কর্মক্ষেত্রে মেয়েদের অংশগ্রহণের হার যেমন বাড়বে, তেমনই কমবে খরচও। এত দিন বহু পরিবারে মাস-মাইনের অর্ধেকটাই খরচ হয়ে যেত গাড়ি এবং তার চালকের পিছনে। কিংবা বাড়ির পুরুষ-সদস্যের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হতো সৌদি মহিলাদের।
সৌদি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা ফওজিয়া আল-বকরের গলায় উচ্ছ্বাসের ছোঁয়া। ১৯৯০ সাল থেকে বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন ফওজিয়া। অনুমতির পরোয়া না করেই সৌদির রাজধানী রিয়াধের কাছে গাড়ি চালাতে গিয়ে গ্রেফতারও হয়েছিলেন ফওজিয়া। খোয়াতে হয় চাকরিও। জানালেন, তখন থেকেই সৌদি-মহিলারা তাঁদের অধিকারের জন্য লড়ে চলেছেন। দীর্ঘ অপেক্ষার পর এতদিনে এল স্বীকৃতি।
কড়া শরিয়ত অনুশাসন মেনে চলে সৌদি আরব। এত বছর সৌদি নেতা ও ধর্মগুরুরা এই নিষেধাজ্ঞার পিছনে নানা ধরনের কারণ দেখিয়ে এসেছেন। কেউ মনে করেন, গাড়ি চালানোর ফলে সন্তানধারণে অক্ষম হয়ে পড়েন মেয়েরা! মহিলারা স্টিয়ারিংয়ে হাত রাখলে পরিবারের সদস্যেদের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে বলে মনে করে আসছেন অনেক ধর্মগুরু। দীর্ঘকাল এর বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়ে এসেছেন নানা সমাজকর্মী। তার জন্য গ্রেফতারও হয়েছেন বহু।
ওয়াশিংটনে সৌদি আরব রাষ্ট্রদূত খালেদ বিন সলমন এ প্রসঙ্গে একটি সাংবাদিক বৈঠকে জানান, সৌদি মহিলাদের জন্য নিঃসন্দেহে অন্যতম বড় পদক্ষেপ এটি।
এ বার থেকে স্বামী, বাবা বা অন্য কোনও পুরুষ অভিভাবকের সম্মতি ছাড়াই গাড়ি চালানোর অনুমতি পেতে চলেছেন মেয়েরা। খালিদ আরও জানান, অভ্যন্তরীণ মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে, শুধুমাত্র ব্যক্তিগত ক্ষেত্রেই নয়, এ বার থেকে পেশা হিসেবেও গাড়ি চালানোকে বেছে নিতে পারবেন মহিলারা।
নিষেধাজ্ঞা তো উঠল, কিন্তু আদৌ সমাজে কতখানি তা প্রভাব ফেলবে, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
সৌদি সমাজে রক্ষণশীলতার শিকড় এতগুলো বছর ধরে এতটাই গভীরে প্রোথিত, যে তার থেকে মুক্তি এতটাও সহজ হবে না বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বছরের পর বছর ধরে মহিলাদের অধিকার দিতে বাধা দিয়েছেন যে শীর্ষ স্থানীয় ধর্মগুরুরা, তাঁদের অনেকেই আবার সরকারি বেতনপুষ্ট কর্মী।
তবে তার মধ্যেও আশার কথা শোনাচ্ছে সৌদি আরবের যুব সম্প্রদায়। মঙ্গলবারের এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন তাঁরা। এত দিন পর্যন্ত বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে যতটা দূরত্ব ছিল, তা ক্রমশ কমছে বলেই মনে করছে সৌদির যুব সমাজ।