অ্যাঞ্জেলিনা, মারিয়া ও ক্রিস্টিনা (বাঁ-দিক থেকে)। ছবি: সংগৃহীত।
ফ্ল্যাট সাজানো গোছানো নয় কেন? তিন কিশোরী মেয়েকে ডেকে এক সন্ধ্যায় প্রচণ্ড বকেছিলেন বাবা। সে ‘অপরাধে’র শাস্তি হিসাবে পেপার গ্যাসও ছড়িয়ে দিয়েছিলেন তাঁদের মুখে। সে রাতেই ঘুমন্ত বাবাকে ৩০ বার কুপিয়ে খুন করেন মেয়েরা। খুনের পর নিজেরাই পুলিশে খবর দিয়ে আত্মসমর্পণ করেন।
গত বছরের জুলাইয়ে মস্কোর ওই নৃশংস খুনের ঘটনার পর কেটে গিয়েছে বহু মাস। তবে ওই কিশোরীদের নিয়ে আলোচনা থিতিয়ে পড়েনি। তাঁদের বেকসুর খালাসের দাবিতে এখন উত্তাল রাশিয়া। জমা পড়েছে তিন লক্ষেরও বেশি আবেদন। চলছে মিছিল, সহমর্মিতা দেখিয়ে কবিতা পাঠ বা থিয়েটার।
রাশিয়ার সংবাদমাধ্যম জুড়েও ক্রিস্টিনা, অ্যাঞ্জেলিনা ও মারিয়া কাচাটুরিয়ান— এই কিশোরী বোনদের নিয়ে খবরের ছড়াছড়ি। কিন্তু কেন? সে দেশের মানবাধিকারকর্মীদের দাবি, ওই কিশোরীরা অপরাধী নন, নিজের বাবার কাছেই শারীরিক ও মানসিক ভাবে নির্যাতিতা।
আরও পডুন: তিন বোতল মধু নিয়ে আমেরিকায় ঢুকতে গিয়ে তিন মাস জেলে!
তদন্তকারীরাও জানিয়েছেন, ২০১৪ থেকেই ক্রিস্টিনা, অ্যাঞ্জেলিনা ও মারিয়ার উপর যৌন নির্যাতন করতেন ৫৭ বছরের মিখায়েল কাচাটুরিয়ান। শুধু তা-ই নয়। মেয়েদের বন্দি করে রেখে তাঁদের উপর চলত মারধর, এমনকি মানসিক নির্যাতনও। ঘটনার রাতে ওই ফ্ল্যাটে ছিলেন না তাঁদের মা অরেলিয়া ডানডাক। ২০১৫-তে তাঁকে মস্কোর ওই ফ্ল্যাট থেকে বার করে দিয়েছিলেন মিখাইল। তার পর থেকে মেয়েদের নিয়েই ফ্ল্যাটে থাকতেন মিখাইল। ঘটনার সময় অ্যাঞ্জেলিনা, মারিয়া ও ক্রিস্টিনার বয়স ছিল যথাক্রমে ১৮, ১৭ ও ১৯।
আরও পডুন: বিমান ভেঙে পড়েছে সমুদ্রে, জলে ভাসতে ভাসতেই ভিডিয়ো করছেন পাইলট!
পুলিশ জানিয়েছে, গত বছরের ২৭ জুলাইয়ে, ঘটনার রাতে অ্যাঞ্জেলিনার হাতে ছিল হাতুড়ি, ক্রিস্টিনার কাছে ধারালো ছুরি এবং মারিয়া নিয়ে এসেছিলেন পেপার স্প্রে। সে সব দিয়েই ঘুমন্ত বাবার উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন তাঁরা। অভিযোগ, হাতুড়ির ঘায়ে জখম করে, পেপার স্প্রে ছিটিয়ে মিখায়েলকে কাবু করে ছুরি দিয়ে বার বার আঘাত করে খুন করেন ওই কিশোরীরা। এর পর ঘটনাস্থল থেকেই পুলিশে খবর দেন তাঁরা। সেখানেই গ্রেফতার করা হয় ক্রেস্টিনা, অ্যাঞ্জেলিনা ও মারিয়াকে।
কাচাটুরিয়ান বোনেদের বেকসুর খালাসের দাবিতে উত্তাল রাশিয়া। ছবি: সংগৃহীত।
এই মুহূর্তে তাঁদের উপর বাবাকে খুনের অভিযোগে মামলা চললেও জেলবন্দি নন কাচাটুরিয়ান বোনেরা। তবে ওই অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে সর্বোচ্চ ২০ বছরের জেল হতে পারে তাঁদের। যদিও রাশিয়ার নাগরিকদের একাংশের মতে, অমানুষিক নির্যাতনের হাত থেকে মুক্তি পেতেই বাবাকে খুন করতে বাধ্য হয়েছিলেন ক্রিস্টিনা, অ্যাঞ্জেলিনা ও মারিয়া। তাঁদের আইনজীবীরাও আদালতে সওয়াল করেছেন, আত্মরক্ষার জন্য মিখাইলকে খুন করেছেন তাঁর মেয়েরা। মনোবিদরাও জানিয়েছেন, দীর্ঘ দিন ধরেই প্রচণ্ড মানসিক চাপ (পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস বা পিটিএসডি)-এর মধ্যে ছিলেন ওই তিন কিশোরী।
রাশিয়ায় গার্হস্থ্য হিংসার বিরুদ্ধে ততটা কড়া আইন নেই। এমনকি, সে দেশের ঠিক কত জন এর শিকার, প্রশাসনের কাছে তার কোনও পরিসংখ্যানও নেই। যদিও বিশেষজ্ঞদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রাশিয়ার জেলবন্দি মহিলাদের মধ্যে ৮০ শতাংশই গার্হস্থ্য হিংসার কারণে খুনের দায়ে সেখানে রয়েছেন। ফলে সেই প্রেক্ষাপটেও বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে কাচাটুরিয়ান বোনেদের এই মামলা। মানবাধিকারকর্মী-সহ রাশিয়ার একাংশের দাবি, গার্হস্থ্য হিংসার বিরুদ্ধে আরও জোরদার শাস্তির ব্যবস্থা করুক প্রশাসন।