তাঁর স্বপ্ন যখন রুশ গোলায় ভেঙে দুমড়েমুচড়ে গিয়েছে, ভিতর থেকে কান্না যখন দলা পাকিয়ে গলার কাছে আটকে যাওয়ার চেষ্টা করছে, তখনই তিনি যেন খুঁজে পেলেন একটু স্বস্তির ঠিকানা।
পিয়ানোর সমানে ইরিনা।
কথায় আছে, সুরের কখনও মৃত্যু হয় না। রুশ গোলা যখন ঘরবাড়ি ভেঙে তছনছ করে দিচ্ছে, তখন সেই ধ্বংসস্তূপের মাঝেই অক্ষত অবস্থায় তিনি খুঁজে পেয়েছিলেন সাধের পিয়ানোটিকে। বোমার আঘাতে ঘরের কিছু জিনিস ছিটকে এসে পড়েছিল পিয়ানোটার উপর। সে সব সরিয়ে পিয়ানো থেকে ধুলো ঝেড়ে বাজাতে শুরু করলেন ইউক্রেনীয় মহিলা। সুর তুললেন তাতে। বাইরে তখন নাগাড়ে চলছে রুশ বোমাবর্ষণ।
সম্প্রতি ইউক্রেনের এক পিয়ানোবাদক মহিলার ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছে। তাঁর নাম ইরিনা। দুই সন্তানের মা। বাজারে গিয়ে তিনি শুনতে পান বাড়িতে রুশ গোলা আছড়ে পড়েছে। তড়িঘড়ি বাড়িতে ছুটে এসেছিলেন ইরিনা। দুই সন্তান, স্বামী ঠিক আছে তো? প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া বাড়িতে ঢুকতে ঢুকতেই একটা চরম আশঙ্কা যেন তাঁকে ঘিরে ধরছিল। কয়েক পা এগোতেই তিনি সন্তানদের গলার আওয়াজ পান। একটু নিশ্চিন্ত হন।
কিন্তু রুশ গোলার আঘাতে তত ক্ষণে তাঁর সাজানো সংসার ভেঙে তছনছ হয়ে গিয়েছিল। কোনও ঘরে জানলা উড়ে গিয়েছে। কোনও ঘরের আসবাব ভেঙেচুরে খানখান হয়ে গিয়েছে। সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে কাচ। তাঁর স্বপ্ন যখন রুশ গোলায় ভেঙে দুমড়েমুচড়ে গিয়েছে, ভিতর থেকে কান্না যখন দলা পাকিয়ে গলার কাছে আটকে যাওয়ার চেষ্টা করছে, তখনই তিনি যেন খুঁজে পেলেন একটু স্বস্তির ঠিকানা। তাঁর সাধের পিয়ানোটা তখনও অক্ষত। আর সেই পিয়ানোতেই সুর তুললেন তিনি। যেন ধ্বংসের মাঝে এক পরম প্রাপ্তি। যেন সুরের মূর্ছনায় যুদ্ধের ভয়াবহতা ভুলে থাকার চেষ্টা করছেন।