Russia Ukraine War

Russia ukraine war: তৃতীয় বৈঠক, ‘দেখা মাত্র গুলি পথে’

বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন তাদের কাছে দাবি করেছে, হামলা বন্ধ রাখা হয়েছিল। ইউক্রেন সরকার সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারেনি।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০২২ ০৭:৫১
Share:

সাংবাদিকদের সামনে ইউক্রেনে আটক এক রুশ সেনা। ছবি পিটিআই।

আজ সকালে ফের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিল রাশিয়া। জানিয়েছিল, ইউক্রেনের বন্দর-শহর মারিয়ুপোল থেকে সাধারণ মানুষকে উদ্ধারের পথ করে দেওয়া হবে। কালকের মতো আজও তারা সেই প্রতিশ্রুতি ভাঙল। আকাশপথে হামলা, গোলাগুলি, ক্ষেপণাস্ত্র হানা, সম্মুখসমর, সবই চলল দিনভর। ইউক্রেন সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলতে, তাদেরই দায়ী করল রাশিয়া। ক্রেমলিনে বসে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ফতোয়া দিলেন, ‘‘বর্তমান (ইউক্রেনীয়) কর্তৃপক্ষের বোঝা উচিত, ওরা যা করছে, সেটা যদি চালিয়ে যায়, ইউক্রেন দেশটার ভবিষ্যৎ প্রশ্নের মুখে পড়বে। আর যদি তা-ই হয়, সে ক্ষেত্রে তার জন্য সম্পূর্ণ দায়ী হবে ওরাই।’’

Advertisement

আজভ সাগরের তীরে মারিয়ুপোল বন্দরটি কৌশলগত ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। লাগাতার হামলা চালিয়ে গেলেও এটিকে এখনও দখল করতে পারেনি রুশ বাহিনী। এই বন্দরটি তাদের হাতে চলে এলে ক্রাইমিয়ার দিকের রাস্তা সাফ হয়ে যাবে। সেখানকার রুশ সমর্থনপ্রাপ্ত বিচ্ছিন্নতাবাদীরাও যোগ দিতে পারবে পুতিনের সেনাবাহিনীর সঙ্গে। তাই মারিয়ুপোলকে দখল করতে মরিয়া রুশরা। এ কারণেই হয়তো যুদ্ধ থামাতে তারা নারাজ।

ইউক্রেনের অভিযোগ, মস্কোর যুদ্ধবিরতি ঘোষণা একেবারেই কথার কথা। গোলাবর্ষণ এক মুহূর্তের জন্য বন্ধ হয়নি। শহরটিকে ঘিরে রেখেছে রুশ সেনা ও রাশিয়ার সমর্থনপ্রাপ্ত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বাহিনী। ইউক্রেনের একটি টিভি চ্যানেলে দাবি করা হয়েছে, সাধারণ মানুষকে উদ্ধারের জন্য যে নিরাপদ করিডর গড়া হয়েছে, তাতে আজ লাগাতার গোলাবর্ষণ করেছে রুশরা। ফলে পালানোর সাহসই দেখাতে পারেনি কেউ। অন্য একটি ইউক্রেনীয় সংবাদ সংস্থা তাদের রিপোর্টে জানিয়েছে, ডনেৎস্কের

Advertisement

বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন তাদের কাছে দাবি করেছে, হামলা বন্ধ রাখা হয়েছিল। ইউক্রেন সরকার সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারেনি। ওই সংগঠনের দাবি, মারিয়ুপোল থেকে ২ লক্ষ বাসিন্দাকে উদ্ধারের কথা বলেছিল প্রশাসন। মাত্র ৩০০ জনকে বার করতে পেরেছে তারা।

ইউক্রেনের আর এক গুরুত্বপূর্ণ বন্দর-শহর খেরসন। কৃষ্ণসাগরের তীরের এই শহরটিকে যুদ্ধে প্রথম কব্জা করতে সফল হয় রুশ বাহিনী। গত বুধবার থেকে এটি রাশিয়ার দখলে রয়েছে। যদিও প্রশাসনিক ভবনের মাথায় এখনও উড়ছে ইউক্রেনের পতাকা। শহরের মেয়র ইহর কোলিকেভ এখনও তাঁর পদে রয়েছেন। গত কাল তিনি ঘোষণা করেন, রুশ সেনাবাহিনী গোটা শহরে ছড়িয়ে পড়েছে। কমপক্ষে ৩ লক্ষ মানুষের বাস এই শহরে। সামান্য কিছু মানুষ আগেই পালাতে পেরেছিলেন। বেশির ভাগ বাসিন্দা শোচনীয় অবস্থায় গৃহবন্দি হয়ে রয়েছেন। বিদ্যুৎ নেই, ঘর গরম রাখার উপায় নেই, জল নেই। ওষুধ বা মুদির দোকান ফাঁকা। কোলিকেভের আশঙ্কা, ত্রাণ না এলে ‘শত্রুপক্ষের’ গুলিতে নয়, স্রেফ ঠান্ডা ও খাবারের অভাবে প্রাণ হারাবেন বাসিন্দারা। তিনি জানান, রুশ বাহিনী পাকাপোক্ত ভাবে গেড়ে বসেছে এই শহরে। বেরনোর কোনও লক্ষণ নেই। অসহায় মেয়র বলেন, ‘‘কত ক্যানসার রোগী রয়েছেন। অসুস্থ শিশু রয়েছে। বিনা চিকিৎসায় পড়ে রয়েছে সকলে।’’

লোকজন ভয়ে বাড়ি থেকে বেরোতে পারছেন না। কেউ শহর ছেড়ে পালাতে পারে মনে করলেই গুলি করছে রুশ বাহিনী। অভিযোগ, অ্যাম্বুল্যান্স যেতেও অনুমতি দিচ্ছে না তারা। প্রসব যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন এক মহিলা। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যেতেও অনুমতি দেয়নি রুশ সেনা। একটি আমেরিকান সংবাদ সংস্থাকে খেরসনের বাসিন্দা আন্দ্রে আব্বা বলেছেন, ‘‘পরিবারের মেয়েদের, শিশুদের যে নিরাপদ জায়গায় পাঠিয়ে দেব, সেটাও অসম্ভব। কেউ পালানোর চেষ্টা করছে বুঝলেই গুলি করছে ওরা। পথে দেখা মাত্র গুলি।’’ আন্দ্রে জানান, বৃহস্পতিবার দু’জন লোক পালাতে গিয়েছিলেন। চেকপয়েন্টে তাঁদের গুলি করা হয়। একজন মারা যান, অন্য জন গুরুতর জখম।

যাঁরা দেশ ছেড়ে পালাতে সক্ষম হয়েছেন, তাঁরাও চরম অসহায় অবস্থায়। রাষ্ট্রপুঞ্জ জানিয়েছে, গত ১০ দিনে ১৫ লক্ষের বেশি ইউক্রেনীয় রাতারাতি ঘরবাড়ি হারিয়ে শরণার্থী হয়ে গিয়েছে। সংস্থার শরণার্থী বিষয়ক বিভাগের কমিশনার ফিলিপো গ্র্যান্ডি আজ বলেন, ‘‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে এ রকম দৃশ্য আর দেখা যায়নি।’’ গোড়া থেকেই ইউক্রেনের পাশে সহৃদয় ভাবে দাঁড়িয়েছে জার্মানি। তারা আজ জানিয়েছে, এ পর্যন্ত এ দেশে আশ্রয় নিয়েছে ৩৭,৭৮৬ জন ইউক্রেনীয়। জার্মান অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী ন্যান্সি ফিশার বলেন, ‘‘পাসপোর্টও লাগবে না। আমরা মানুষের প্রাণ বাঁচাতে চাই।’’ পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, রোমানিয়ার মতো ইউরোপের অন্য দেশগুলোও উদ্ধারকাজে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।

আজ ইউক্রেনের জ়াপোরিজিয়া থেকে একা স্লোভাকিয়ায় এসে পৌঁছয় এক ১১ বছরের বালক। দেশের জন্য লড়তে বাবা-মা দু’জনেই থেকে গিয়েছেন ইউক্রেনে। একাই সীমান্ত পেরিয়েছে খুদে। সাহসী ছেলেটিকে দেখে মুগ্ধ স্লোভাক প্রশাসন। চোখেমুখে ভয়ের ছাপ নেই, ফেলে আসা পরিবারের জন্য কান্না নেই। দৃঢ়তার সঙ্গে সে জানিয়েছে বাড়ির কথা। এক স্লোভাক কর্তার কথায়, ‘‘ও-ই আজকের নায়ক।’’ পিঠে একটা ব্যাকপ্যাক, এক হাতে প্লাস্টিকের ঝোলা আর পাসপোর্ট। অন্য হাতে পেন দিয়ে লেখা এক আত্মীয়ের টেলিফোন নম্বর। পরে ওই আত্মীয় এসে নিয়ে যান ছেলেটিকে।

এ যুদ্ধে রাশিয়া যদি জিতেও যায়, তবু তারা প্রায় ভগ্নপ্রায়। একের পর এক নিষেধাজ্ঞা জারি হচ্ছে তাদের উপরে। আজ ‘ভিসা’ ও ‘মাস্টারকার্ড’-এর মতো কার্ড পেমেন্ট সংস্থাও রাশিয়াকে ‘একঘরে’ করেছে। আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত মস্কো। খাদ্যাভাব দেখা দিতে পারে। ইউক্রেন দাবি করেছে, তাদের পাল্টা হামলায় অন্তত ১১ হাজার রুশ সেনা নিহত হয়েছেন।

কাল ফের দু’দেশের শান্তি বৈঠক বসার কথা শোনা যাচ্ছে। প্রথম দুই বৈঠকে কোনও সমাধান মেলেনি। গত কাল শোনা গিয়েছিল, বৈঠকের মধ্যস্থতাকারী ডেনিস কিরিভকে খুন করা হয়েছে। রাশিয়া দাবি করে, রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে তাঁকে খুন করেছে ইউক্রেন। আজ ইউক্রেনের তরফে দাবি করা হয়েছে, এক জন নয়, তাদের দেশের তিন জন গোয়েন্দা কর্তাকে খুন করেছে রাশিয়া। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মুখপাত্র বলেন, ‘‘বিশেষ অভিযানে পাঠানো হয়েছিল তিন গোয়েন্দা কর্তাকে। তিন জনেই খুন হয়েছেন। ওঁরা হলেন, ডলা অ্যালেক্সেই ইভানোভিচ, চিবিনেয়েভ ভ্যালেরি ভিক্টরোভিচ এবং কিরিভ ডেনিস বরিসোভিচ।’’ যদিও ইউক্রেনের দাবি ঘিরেও একটা ধোঁয়াশা থাকছে। কারণ কাল ইউক্রেনের পার্লামেন্টের সদস্য অ্যাকেজ়ান্ডার ডুবিনিস্কি-ও জানিয়েছিলেন, ইউক্রেনীয় বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার পরে খুন হয়েছেন কিরিভ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement