Russia

Russia-Ukraine Conflict: নাতনিকে চোখের সামনে বিস্ফোরণে নিথর হতে দেখছেন দাদু! এ বার তো থামুন, খোলা চিঠি জেলেনস্কি পত্নীর

যুদ্ধে ইউক্রেন কী পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে চলেছে, তা জানাতে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলির উদ্দেশে একটি খোলা চিঠি লিখলেন ইউক্রেনের ফার্স্ট লেডি।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

কিভ শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২২ ১৬:৪১
Share:

ভোলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ওলেনা জেলেনস্কা।

যুদ্ধ নয়, ঠান্ডা মাথায়, পরিকল্পনা করে ইউক্রেনে গণহত্যা চালাচ্ছে ক্রেমলিন। আর তাতে শ’য়ে শ’য়ে শিশু মারা যাচ্ছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ। দেশে গত ১৪ দিন ধরে চলা রুশ সেনা অভিযানকে এ ভাবেই ব্যাখ্যা করলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি-র স্ত্রী ওলেনা জেলেনস্কা।

যুদ্ধে ইউক্রেন কী পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে চলেছে, তা জানাতে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলির উদ্দেশে একটি খোলা চিঠি লিখেছেন ইউক্রেনের ফার্স্টলেডি। তাতে তিনি জানতে চেয়েছেন, আর কতদিন চলবে এই গণহত্যা? পৃথিবীর শক্তিশালী দেশগুলি নিজেদের ক্ষমতা প্রয়োগ করে কি এতে ইতি টানতে পারে না? ইউক্রেনের আকাশপথ বন্ধ করতে পারে না?

Advertisement

জেলেনস্কার ব্যাখ্যা, ‘‘ক্রেমলিন হয়তো বাকি বিশ্বকে বোঝাচ্ছে, ইউক্রেনে তারা যা করছে তা আসলে কৌশলগত বিশেষ সেনা অভিযান। কিন্তু সাদা চোখে আমার একে গণহত্যা ছাড়া অন্য কিছু মনে হচ্ছে না।’’

ঘরের চৌকাঠে রুশ ফৌজের উপস্থিতি আর মাথার উপর নিরন্তর বিমান হামলার আবহে ইউক্রেনের বাসিন্দাদের কী ভাবে সময় কাটছে, খোলা চিঠিতে তার বিবরণ দিয়েছেন ওলেনা। তিনি লিখেছেন, ‘‘২৪ ফেব্রুয়ারি আমাদের ঘুম ভাঙল একটি ঘোষণায়। রাশিয়া আমাদের দেশে অনুপ্রবেশ করতে শুরু করেছে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই রুশ সেনার ট্যাঙ্ক আমাদের সীমানা অতিক্রম করে ভিতরে ঢুকে পড়ল। রুশ বিমান আমাদের আকাশের দখল নিল। গোটা শহরে শুরু হল অবিরাম ক্ষেপণাস্ত্র বর্ষণ।’’ জেলেনস্কার ব্যাখ্যা, ‘‘ক্রেমলিন হয়তো বাকি বিশ্বকে বোঝাচ্ছে, ইউক্রেনে তারা যা করছে তা আসলে কৌশলগত বিশেষ সেনা অভিযান। কিন্তু সাদা চোখে আমার একে গণহত্যা ছাড়া অন্য কিছু মনে হচ্ছে না।’’

ওলেনা এখন ইউক্রেনের ফার্স্ট লেডি হতে পারেন। কিন্তু এক কালে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির কৌতুক প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। পেশাদার লিখিয়ে ছিলেন তিনি। চিঠিতে ইউক্রেনের দুর্দশার বর্ণনাও নিখুঁত তুলে ধরেছেন তিনি।

চিঠিতে ১৪ বছরের এক কিশোরের কথাও জানিয়েছেন ওলেনা।

ওলেনা জানিয়েছেন, দু’দিন আগেই আট বছরের একটি শিশু কন্যা অ্যালিস রুশ ফৌজের বিস্ফোরণে মারা গিয়েছে ইউক্রেনের শহর ওখতিরখায়। অ্যালিস তার দাদুর সঙ্গে রাস্তায় বেরিয়েছিল সম্ভবত খাবার নিতে। তার দাদু তাঁকে বাঁচাতে চেয়েও বাঁচাতে পারেননি। কিভের আর এক শিশুকন্যা পোলিনা ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে মারা গিয়েছে। তার সঙ্গে মৃত্যু হয়েছে তার বাবা-মায়েরও। চিঠিতে ১৪ বছরের এক কিশোরের কথাও জানিয়েছেন ওলেনা। আর্সেনলি নামের ওই কিশোরের মাথায় এসে পড়ে যুদ্ধের অস্ত্রের ধ্বংসাবশেষ। তাকে বাঁচানো যায়নি কারণ সময়ে অ্যাম্বুল্যান্স পৌঁছতে পারেনি আর্সেনলির কাছে।

Advertisement

ওলেনা রাশিয়ার কাছেও জানতে চেয়েছেন, তাঁদের দেশে যে ক্যানসারের রোগীরা এখনও বেঁচে আছেন, তাঁরা কী করবেন? যাঁদের হয়তো কেমোথেরাপি হওয়ার কথা ছিল, যাঁদের চিকিৎসা চলছিল, তাঁরা কী ভাবে পাবেন চিকিৎসা। যে রোগীদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা আছে, অ্যাজমা আছে তাঁরা প্রয়োজনে কী ভাবে পাবেন প্রাথমিক চিকিৎসা। তবে কি তাঁরা চিকিৎসা না পেয়ে মারা যাবেন। আর অসহায় ভাবে তা দেখতে বাধ্য হবেন তাঁদের আত্মীয় পরিজনেরা।

ইউক্রেনের ফার্স্ট লেডির বয়স ৪৪। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তাঁর বিবাহিত জীবন ১৬ বছরের।

ওলেনা বলেছেন, রাশিয়া যখন বলে যে ইউক্রেনের নাগরিকদের বিরুদ্ধে তাঁরা যুদ্ধ ঘোষণা করেনি, তারা তাঁদের ক্ষতি করছে না, তখন আমি ওই হন্তারকদের নাম চিৎকার করে বলতে চাই, বলতে চাই দেখ তোমরা এই শিশুদের কী ভাবে হত্যা করেছে।

ইউক্রেনের ফার্স্ট লেডি বলেছেন, এই যুদ্ধ কোনও ভাবেই কোনও কৌশল মানছে না। ইউক্রেনের সাধারণ নাগরিকদের পায়ে দলেই এগিয়ে চলেছে রুশ ফৌজের সাঁজোয়া। ইউক্রেনের পথে এখন থিকথিক করছে শরণার্থীরা। রাশিয়া কি ওই শরণার্থী মহিলা, শিশুদের ক্লান্ত মুখের দিকে তাকিয়ে বলতে পারবে তারা নাগরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেনি?

ইউক্রেনের ফার্স্ট লেডির বয়স ৪৪। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তাঁর বিবাহিত জীবন ১৬ বছরের। এর আগে বহুবার দেশের সামাজিক বিষয় বিশেষ করে শিশুদের অধিকার নিয়ে কথা বলেছেন। ইউক্রেনের স্কুলের শিশুদের খাবারের মানের উন্নতি নিয়ে প্রচারও করেছিলেন তিনি।

তবে জেলেনস্কা তাঁর স্বামী জেলেনস্কির সঙ্গে এখনও ইউক্রেনের রাজধানী কিভেই রয়েছেন কি না তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চায়নি ইউক্রেন সরকার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement