যুদ্ধবিদ্ধস্ত ইউক্রেন। ফাইল চিত্র।
বুচার নাশকতা প্রকাশ্যে আসার পর থেকে আরও কোণঠাসা রাশিয়া। আজ ব্রাসেলসে বৈঠকে বসেছিল নেটোর সদস্য দেশগুলি। তারা জানিয়েছে, রাশিয়ার উপরে আরও আর্থিক নিষেধাজ্ঞা চাপানো হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ঘোষণা করেছ, রাশিয়া থেকে ৪৩০ কোটি ডলার মূল্যের কয়লা আমদানি স্থগিত রাখছে তারা। আমেরিকাও জানিয়েছে, রাশিয়া ও তাদের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের উপরে অর্থনৈতিক চাপ বাড়ানো হচ্ছে। রুশ ব্যাঙ্কিং সেক্টরের দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি ব্লক করছে তারা। পাশাপাশি, নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে পুতিন ঘনিষ্ঠদের উপরে।
এক আমেরিকান কর্তা জানিয়েছেন, জি৭ এবং ইইউ-এর সঙ্গে একত্রিত ভাবে পুতিনের স্ত্রী ও তাঁদের দুই প্রাপ্তবয়স্ক কন্যা মারিয়া পুতিনা এবং ক্যাটরিনা তিকোনোভার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। রুশ বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ও তাঁর স্ত্রী-কন্যাও নিষোধাজ্ঞা তালিকা থেকে বাদ নেই। এ ছাড়া, ওই তালিকায় রয়েছেন রুশ নিরাপত্তা কাউন্সিলের সদস্যেরা, এমনকি প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট তথা প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভ এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশুসতিনও। এ ছাড়া বড় বড় রুশ সংস্থাগুলোকে ব্লক করছে পশ্চিম। ফলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, এ দেশের জিডিপি ভয়ানক ভাবে ধাক্কা খাবে
এ বছর।
নেটোর বৈঠকে সেক্রেটারি জেনারেল জেন্স স্টোলেনবার্গ দাবি করেছেন, রাশিয়া আপাতত পূর্ব ইউক্রেনের দিকে নজর দিলেও গোটা দেশটাকে দখল করাই মস্কোর আসল উদ্দেশ্য। নেটোর সদস্য দেশগুলির বিদেশমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে বসার আগে স্টোলেনবার্গ সাংবাদিকদের কাছে বলেন, ‘‘পুতিন তাঁর মনোভাব বদলে ফেলেছেন, এমন কোনও ইঙ্গিত কিন্তু নেই। বিশ্ব মানচিত্রে আন্তর্জাতিক সীমান্ত রেখা বদলানোর উদ্দেশ্যও বহাল রয়েছে। ফলে আমাদের তৈরি থাকতে হবে।’’ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমের কাছে সামরিক অস্ত্র, যুদ্ধবিমান, ট্যাঙ্ক সাহায্য হিসেবে চেয়ে আসছেন। এত দিন সে প্রস্তাবে কেউ রাজি হয়নি। রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে যেতে চায়নি আমেরিকাও। কিন্তু বুচার ঘটনার পরে নড়ে বসেছে ইউরোপ-আমেরিকা-নেটো-জি৭। সামরিক সাহায্য করতে রাজি হয়েছে তারা। তবে এ বিষয়ে বেশি কিছু খোলসা করে জানায়নি কেউ। স্টোলেনবার্গ জানিয়েছেন, এই যুদ্ধ যখনই শেষ হোক না কেন, এর প্রভাব থেকে যাবে বহু বছর।
রাষ্ট্রপুঞ্জ আজ ঘোষণা করেছে, ইউক্রেনে অন্তত ১৫৬৩ জন সাধারণ বাসিন্দা নিহত হয়েছেন যুদ্ধে। তবে বাস্তবে এ সংখ্যা হয়তো অনেক বেশি। মারিয়ুপোলের মেয়র সপ্তাহ দুয়েক আগে দাবি করেছিলেন, শুধু ওই শহরে আড়াই হাজারের কাছাকাছি মৃত্যু। আইরিশ পার্লামেন্টে ভার্চুয়াল বক্তৃতায় জ়েলেনস্কি জানিয়েছেন, যুদ্ধে অন্তত ১৬৭টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তবে সংখ্যাটা আরও বেশি হতে পারে বলেও মনে করিয়ে দেন তিনি। আজও দিনভর হামলা চলেছে লিভিভ, ভিনিৎসিয়া, নিপ্রোপেত্রোভস্ক অঞ্চলে। পূর্ব ইউক্রেনে, বিশেষ করে লুহানস্কে ভয়াবহ যুদ্ধ চলছে। এর মধ্যেই শোনা যাচ্ছে, কিভের উত্তর-পশ্চিমে আর এক শহর বোরোডিয়াঙ্কাতেও ‘গণহত্যা’ চালিয়েছে রাশিয়ার
বাহিনী। বুচার মতো এই শহরটিও দীর্ঘদিন রুশ সেনার দখলে ছিল। সম্প্রতি সেনা সরেছে এই শহর থেকে। তার পরেই দেখা যাচ্ছে, রাস্তাঘাটে ছড়িয়ে পড়ে দেহ। একাধিক ছবিতে ধরা পড়ছে নারকীয় দৃশ্য। যেমন, রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে এক পুরুষ-দেহ। মাথার কাছে রক্তজমাট বেঁধে। বোঝা যাচ্ছে গুলি করা হয়েছিল। ইউক্রেনের বাহিনীর মহিলা সদস্যদের তুলে নিয়ে গিয়ে অত্যাচার করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে।