জ়েলেনস্কি এবং পুতিন। — ফাইল চিত্র।
২০২৩ সালে জয় আসবেই। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্ষপূর্তির দিন এই বার্তাই দিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লিখেছেন, ‘‘ভেঙে পড়িনি। অনেক কঠিন পথে পেরিয়েছি। ভবিষ্যতেও লড়াই চালিয়ে যাব।’’ ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়ে আজ ফের রাশিয়ার উপরে নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে আমেরিকা। সন্ত্রাসে আর্থিক মদত সংক্রান্ত নজরদারি সংস্থা ‘এফএটিএফ’ আজ সদস্যপদ খারিজ করেছে রাশিয়ার। তাদের বক্তব্য, ‘‘বিশ্বের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সুরক্ষা এবং অখণ্ডতার কথা মাথায় রেখে যে আদর্শ মেনে আমরা চলি, রাশিয়ার কার্যকলাপ তার পরিপন্থী। যা মেনে নেওয়া যায় না।’’
যুদ্ধের এক বছর পূর্তি ‘উদ্যাপনে’ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আজ ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে পারেন বলে সতর্ক করেছিলেন জ়েলেনস্কি। তাঁর এই সাবধানবার্তা খুব অসঙ্গত নয়। বড়দিন কিংবা নববর্ষে যখন গোটা পৃথিবী উৎসব করছে, তখন ইউক্রেনে ব্যাপক হামলা চালিয়েছিল রাশিয়া। যদিও আজ তার পুনরাবৃত্তি ঘটেনি। বরং আজ সরকারি কার্যানুষ্ঠানে বসার আগে পুতিন এক নিহত সেনার স্মৃতিসৌধে ফুল দেন। এর ঘণ্টাখানেক আগেই অবশ্য তিনি জানিয়েছিলেন, রাশিয়ার তৈরি সারম্যাট ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রস্তুত। এ বছরই এটিকে নিয়োগ করা হবে। পশ্চিমের যুদ্ধ-বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যায়, এ হল ‘দ্বিতীয় শয়তান’। রাশিয়ার নতুন প্রজন্মের এই ক্ষেপণাস্ত্র একাধিক পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম। পুতিনের কথায় এটি ‘অবধ্য’। আমেরিকার সঙ্গে করা পরমাণু চুক্তি স্থগিত রাখার কথা সদ্যই ঘোষণা করেছেন পুতিন। তার পরেই সারম্যাট নিয়ে তাঁর এই বার্তা যথেষ্ট অর্থবহ বলে মনে করছেন অনেকে। ইউক্রেন-প্রসঙ্গে পশ্চিমি জোট পিছু না হটলে পুতিন যে পরমাণু হামলার জন্য তৈরি, তা-ই বুঝিয়ে দিয়েছেন।
যুদ্ধের গোড়া থেকে ইউক্রেনের পাশে রয়েছে পশ্চিমের দেশগুলি। আজও আমেরিকা থেকে ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, সুইডেন-সহ পশ্চিমের প্রায় সকল রাষ্ট্রনেতার মুখে ইউক্রেনের পাশে থাকার বার্তা। সদ্য কিভ সফর সেরে ফিরেছেন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। হোয়াইট হাউসের তরফে জানানো হয়েছে, জি-৭ গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলোকে নিয়ে একটি ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন বাইডেন। জ়েলেনস্কিও ছিলেন বৈঠকে। আরও নিষেধাজ্ঞা চাপানো হয়েছে রাশিয়ার উপরে। ২০০ ব্যক্তি ও সংস্থার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। এর মধ্যে অনেকে ইউরোপ কিংবা এশিয়ার, যারা পরোক্ষে রাশিয়াকে অর্থের জোগান দিচ্ছে, যুদ্ধে মদত করছে। ও দিকে, ইউক্রেনের সম্মানে লন্ডনের ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের ফটকে ঝোলানো হয়েছে হলুদ-নীল পুষ্পস্তবক। যুদ্ধে নিহতদের স্মরণ করে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয় সেখানে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক, তাঁর স্ত্রী অক্ষতা মূর্তি, ব্রিটেনে ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত বাদিম প্রিস্টাইকো ও একটি ইউক্রেনীয় সেনাদল। ইউক্রেনীয়দের কুর্নিশ জানিয়ে ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লস আজ বলেন, ‘‘যুগান্তকারী সাহস ও সহনশীলতা।’’ সুইডেন ঘোষণা করেছে, তারা ১০টি ‘লেপার্ড ২’ ট্যাঙ্ক ও অ্যান্টি-এয়ার সিস্টেম পাঠাবে ইউক্রেনে। পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ম্যাথিউস মোরাউইকি জানান, তারা ৬০টি পিটি-৯১ ট্যাঙ্ক পাঠাচ্ছে।
বসে নেই প্রতিপক্ষও। রাশিয়া-চিন সম্পর্ক এখন আরও ‘মজবুত’। রাশিয়ার মিত্র দেশ বেলারুসের সঙ্গেও সম্পর্ক জোরদার করার বার্তা দিয়েছে চিন। একটি জার্মান সংবাদ সংস্থার দাবি, মস্কোকে অস্ত্র সরবরাহ করবে বেজিং। সব ঠিক থাকলে এপ্রিলেই মস্কোর হাতে চলে আসবে চিনের তৈরি অতি-শক্তিশালী বিস্ফোরকবাহী ড্রোন।
একটি গোয়েন্দা রিপোর্টে ফাঁস হয়েছে, পুতিন ভেবেছিলেন, তিন দিনে যুদ্ধ জিতে যাবেন তাঁরা। পুতিনের সহযোগীরা তাঁকে জানিয়েছিলেন, জ়েলেনস্কিকে উৎখাত করার জন্য ইউক্রেনের প্রতিটি শহরে দু’হাজার লোক রয়েছে। এমনটা হবে পুতিনও ভাবেননি। সহ-প্রতিবেদন: শ্রাবণী বসু