Russia Ukraine War

Russia Ukraine War: ‘ভাবতাম, মোদী বা যোগী সরকার আমাদের উদ্ধার করবে, এখন আর তেমন মনে হচ্ছে না’

সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির অভিযোগ, রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর আগেই মোদী সরকারের হাতে ভারতীয়দের উদ্ধারের যথেষ্ট সময় ছিল। সরকার তার বদলে প্রচার, ছবি তোলায় মন দিয়েছে। এখন সরকার মন দিয়ে উপসাগরীয় যুদ্ধের সময়ের মতো ভারতীয়দের উদ্ধার করুক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০২২ ০৬:৫৬
Share:

গরিমা মিশ্র।

যোগী, মোদী, সরকারে যে-ই থাকুন, যেখানেই থাকুন, আমাদের বাঁচান।

Advertisement

বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন লখনউয়ের গরিমা মিশ্র। ইউক্রেনে আটকে থাকা ভারতীয় ছাত্রী। হাত জোড় করে ‘জয় হিন্দ, জয় ভারত’ বলে সাহায্যের প্রার্থনা করছেন। ধরা গলায় বলছেন, ‘আমাদের এখান থেকে কোথাও যাওয়া নিরাপদ নয়। এখানে থাকাও নিরাপদ নয়।’

নরেন্দ্র মোদী সরকার ‘অপারেশন গঙ্গা’ নামক ইউক্রেন থেকে ভারতীয়, পড়ুয়াদের উদ্ধার অভিযানের প্রচার শুরু করে দিলেও, ইউক্রেনে আটকে থাকা পড়ুয়াদের এই ধরনের অসংখ্য ভিডিয়ো-বার্তায় স্পষ্ট, তাঁরা কতটা অসহায়, অনিশ্চিত অবস্থায় রয়েছেন।

Advertisement

ইউক্রেনের রাজধানী কিভ-এ বাঙ্কারে আটকে থাকা গরিমা জানিয়েছেন, পড়ুয়াদের একটি দল গাড়িতে কিভ থেকে সীমান্তের দিকে রওনা দিয়েছিলেন। রাশিয়ার সেনাবাহিনী ওই গাড়ি আটকে গুলি চালিয়েছে এবং তারপর মেয়েদের তুলে নিয়ে গিয়েছে বলে তাঁর বক্তব্য। কোথাও নিয়ে যাওয়া হয়েছে, কেউ জানে না। ওই দলের ছাত্রদেরও কোনও খোঁজ নেই। তাঁদের আরও কিছু বন্ধুবান্ধব ইউক্রেন-রোমানিয়া সীমান্তে পৌঁছলেও সেখানে তাঁদের মারধর করা হয়েছে। গরিমার বক্তব্য, ‘‘আমরা তো ভাবতাম, মোদী বা যোগী সরকার আমাদের উদ্ধার করবে। সিনেমায় দেখতাম, বিদেশে আটকে পড়া ভারতীয়দের উদ্ধার করা হচ্ছে। এখন আর তা মনে হচ্ছে না। জানি না কী হবে। সরকারে যিনিই থাকুন, যেখানেই থাকুন, আমাদের বাঁচান। সেনা পাঠান।’’

আর এক ছাত্রীও ভিডিয়ো-বার্তায় অভিযোগ জানিয়েছেন, তাঁরা কোনও ভাবেই ইউক্রেনে ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। ফোন করলেও ফোন কেটে দেওয়া হচ্ছে। হোয়াটসঅ্যাপ-এ মেসেজ করলেও উত্তর মিলছে না। ওই ছাত্রীর বক্তব্য, ‘‘ভারত সরকার কিছু করছে না। আমাদের বলা হচ্ছে, ইউক্রেনের পশ্চিম সীমান্তে চলে যেতে। এখান থেকে সীমান্ত ৮০০ কিলোমিটার। রোমানিয়ার সীমান্তে ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের মারধর করা হচ্ছে। অন্য দেশগুলি নিজেদের পড়ুয়াদের উদ্ধার করে নিয়ে যাচ্ছে। ভারত সরকার কোনও সাহায্য করছে না।’’ পড়ুয়াদের অভিযোগ, তাঁরা যেখানে আটকে রয়েছেন, সেখানে রাতে এসে হামলা হচ্ছে। গেট ভেঙে ঢোকার চেষ্টা হচ্ছে। কী হতে চলেছে, কেউই কিছু বুঝতে পারছেন না। বেশ কিছু পড়ুয়া ভিডিয়ো টুইট করে জানিয়েছেন, ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের ইউক্রেনের সীমান্তে লাঠি দিয়ে পেটানো হচ্ছে।

নরেন্দ্র মোদী গতকালই উত্তরপ্রদেশের প্রচারে গিয়ে ‘অপারেশন গঙ্গা’-র ঢাক পিটিয়েছিলেন। বিমানে ফেরা ছাত্রছাত্রীদের সামনে গিয়ে মোদী সরকারের মন্ত্রীরা প্রচার করছেন, কী ভাবে প্রধানমন্ত্রী রাশিয়া, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলে ভারতীয় নাগরিক, পড়ুয়াদের উদ্ধারের চেষ্টা করছেন। উল্টো দিকে পড়ুয়াদের এই দুরবস্থার ছবি প্রকাশ্যে আসায় আজ মোদী সরকারকে ঘরে-বাইরে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর অভিযোগ, ‘‘ইউক্রেনে আটকে থাকা ভারতীয়দের অবস্থা ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। অথচ ভারত সরকার তাঁদের ঘরে ফেরাতে কোনও কার্যকর পদক্ষেপ করছে না।’’ রাহুলের নালিশ, প্রধানমন্ত্রী এ বারেও ‘মিসিং ইন অ্যাকশন।’ কংগ্রেস নেতাদের বক্তব্য, পড়ুয়াদের উপরে লাঠির আঘাত দেশের সম্মানের উপরে আঘাত। প্রধানমন্ত্রী কেন উত্তরপ্রদেশের ভোটের প্রচার ছেড়ে ইউক্রেনের পড়ুয়াদের উদ্ধারে পুরো সময় দিচ্ছেন না?

বিজেপির সাংসদ বরুণ গান্ধীর অভিযোগ, ‘‘ঠিক সময়ে ঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলেই ১৫ হাজারের বেশি ছাত্রছাত্রী যুদ্ধক্ষেত্রের মধ্যে দুরবস্থায় পড়ে রয়েছেন।’’ উদ্ধার অভিযানকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তোলারও সমালোচনা করেছেন বরুণ। প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে তাঁর বক্তব্য, সব সঙ্কটের মধ্যে সুযোগ খোঁজা উচিত নয়। সুনির্দিষ্ট কৌশল ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের মাধ্যমে পড়ুয়াদের নিরাপদে ফেরানো তাঁদের উপকার করা নয়, বরং এটাই সরকারের দায়িত্ব। বাজপেয়ী সরকারের মন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা যশবন্ত সিনহার বক্তব্য, ইরাক-কুয়েত যুদ্ধের সময় ১ লক্ষ ৭০ হাজার ভারতীয়কে উদ্ধার করে দেশে নিয়ে আসা হয়েছিল। তা নিয়ে কেউ বুক বাজিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করেননি।

ইউক্রেনের কিভ, খারকিভের মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত শহরগুলি থেকে যাঁরা পোল্যান্ড, রোমানিয়ার সীমান্তে পৌঁছতে পেরেছেন, তাঁদের অভিযোগ, সেখানে ভারতীয় পড়ুয়ারা বৈষম্যের মুখে পড়ছেন। ইউরোপ ও অন্যান্য দেশের নাগরিকদের সীমান্ত পার হতে দেওয়া হচ্ছে। ভারতীয়রা কম সুযোগ পাচ্ছেন। সোমবার কিভ থেকে ট্রেন চালু হওয়ায় ভারতীয় দূতাবাস থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়, পড়ুয়ারা যেন ট্রেনে চেপে ইউক্রেনের পশ্চিমে পৌঁছনোর চেষ্টা করেন। ছাত্রছাত্রীরা সুটকেস, ব্যাগ টানতে টানতে হেঁটে হেঁটেই স্টেশনের দিকে রওনা দিয়েছেন। তাঁদের জন্য গাড়ির বন্দোবস্ত ছিল কি না, প্রশ্ন করায় এক ছাত্রী ক্ষুব্ধ কণ্ঠে সাংবাদিককে উত্তর দিয়েছেন, ‘‘দেখতেই তো পাচ্ছেন, ভারতীয় দূতাবাস কী রকম কাজ করছে।’’প্রশ্নের মুখে আজ বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী যুক্তি দিয়েছেন, ভারতীয় দূতাবাস যে কিভে যুদ্ধক্ষেত্রের মধ্যে কাজ করছে, তা বুঝতে হবে। পড়ুয়ারা ফোন করলেও দূতাবাসের কেউ ফোন ধরছেন না, অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, প্রাথমিক ভাবে ইউক্রেনের দূতাবাসের কর্মী, ইউক্রেনের আশেপাশের দেশ থেকে সীমান্তে পৌঁছে যাওয়া ভারতীয় কর্মীদের মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এত ফোন আসছে যে সব ফোন ধরা সম্ভব হচ্ছে না। ফোন ধরা ছাড়া তাঁদের অন্য কাজও করতে হচ্ছে। তাই কন্ট্রোল রুমের নম্বর দেওয়া হয়েছে। পড়ুয়ারা সেখানে যোগাযোগ করলে তাঁদের সাহায্য করা হবে।

ইউক্রেনের পশ্চিম সীমান্তে পৌঁছলেও যে পড়ুয়াদের সীমান্ত পার হতে সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে, তা মেনে নিচ্ছেন অরিন্দম। তাঁর বক্তব্য, লক্ষ লক্ষ মানুষ একইসঙ্গে সীমান্তে এসে জড়ো হচ্ছেন। ফলে প্রবল ঠান্ডার মধ্যে সীমান্তে দু’তিনদিন আটকে থাকতে হচ্ছে। তাই পড়ুয়াদের জন্য পরামর্শ, তাঁরা কিভ, খারকিভের মতো ‘কনফ্লিক্ট জ়োন’ থেকে ইউক্রেনের পশ্চিম প্রান্তে শান্তিপূর্ণ এলাকায় সরে এলেও প্রথমেই সীমান্তে পৌঁছে যাওয়ার দরকার নেই। আশেপাশের শহরে আশ্রয় নেওয়া ভাল। তারপর ভারতীয় দূতাবাসের কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে, নির্দেশ মতো সীমান্তে পৌঁছলে তাঁদের ইউক্রেন থেকে বের করে অন্য দেশে নিয়ে আসার চেষ্টা হবে।

সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির অভিযোগ, রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর আগেই মোদী সরকারের হাতে ভারতীয়দের উদ্ধারের যথেষ্ট সময় ছিল। সরকার তার বদলে প্রচার, ছবি তোলায় মন দিয়েছে। এখন সরকার মন দিয়ে উপসাগরীয় যুদ্ধের সময়ের মতো ভারতীয়দের উদ্ধার করুক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement