Russia Ukraine War

Russia Ukraine War: নিষিদ্ধ অস্ত্র! মস্কোর বিরুদ্ধে নয়া অভিযোগ

ইউক্রেন আগেই দাবি করেছিল, তাদের দেশে থার্মোবারিক রকেট হামলা করছে রাশিয়া।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০২২ ০৭:০২
Share:

ফাইল চিত্র।

চারবার বৈঠকেও সমাধান মেলেনি। গত কাল তুরস্কে বিদেশমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকও ব্যর্থ। যুদ্ধবিরতি নিয়ে কোনও সমঝোতায় পৌঁছতে পারেনি রাশিয়া ও ইউক্রেন। বরং কিভের দাবি, আজ থেকে আরও বিধ্বংসী হামলা শুরু করেছে মস্কো। তাদের অভিযোগ, ‘নিষিদ্ধ অস্ত্র’ ব্যবহার করে চলেছে রাশিয়া।

Advertisement

এ বিষয়ে ক্রেমলিন কিছু বলার আগেই ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক একটি টুইট করে। তাতে দাবি করা হয়, রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রক তাদের কাছে ‘নিশ্চিত করে’ জানিয়েছে, ইউক্রেনে তারা ‘টিওএস-১এ অস্ত্র ব্যবস্থা’ প্রয়োগ করেছে। এই অস্ত্রে ‘থার্মোবারিক রকেট’ বা ‘ভ্যাকিউম বোমা’ ব্যবহার করা হয়। যা অন্য বিস্ফোরকের থেকে বহু গুণ বেশি বিধ্বংসী। ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের টুইটটি ছিল এ রকম: ‘‘রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রক নিশ্চিত করে জানিয়েছে, তারা টিওএস-১এ অস্ত্র ব্যবস্থা প্রয়োগ করেছে।’’ সঙ্গে তারা এই অস্ত্রটি কী, তা নিয়ে একটি ভিডিয়ো শেয়ার করে সোশ্যাল মিডিয়ায়। নীচে লেখা ‘#স্ট্যান্ডউইথইউক্রেন’।

ইউক্রেন আগেই দাবি করেছিল, তাদের দেশে থার্মোবারিক রকেট হামলা করছে রাশিয়া। আমেরিকায় ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত ওকসানা মারকারোভার মুখেও এই অভিযোগ শোনা গিয়েছিল। আজ ব্রিটেনও একই অভিযোগ করল। কিন্তু তাতে প্রশ্ন উঠেছে, রাশিয়া কি সত্যিই ব্রিটেনের কাছে স্বীকার করেছে? যদি তারা স্বীকারই করে, তা হলে তাদের হয়ে কেন ব্রিটেন এ কথা ঘোষণা করবে? ব্রিটেনের দু’লাইনের টুইটকে সাদা চোখে দেখছেন না অনেকেই। কার্যত কোণঠাসা রাশিয়ার উপরে আরও চাপ বাড়াতেই এটি কূটনৈতিক কৌশল কি না, সে সন্দেহ উস্কে দিচ্ছে ব্রিটেনের আগবাড়িয়ে করা ঘোষণা।

Advertisement

ভ্যাকিউম বোমা বা থার্মোবারিক রকেট হল এমন এক ধরনের বিস্ফোরক, যা আশপাশের অক্সিজেন টেনে নিয়ে প্রচণ্ড উত্তাপ তৈরি করে ও বিস্ফোরণ ঘটায়। একটি প্রকাণ্ড বিস্ফোরণ তরঙ্গ তৈরি হয়, যার প্রভাব থাকে দীর্ঘক্ষণ। সাধারণ ভাবে যে ধরনের বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয় যুদ্ধে, তার থেকে এটি বহু গুণ বেশি ধ্বংসাত্মক। একে এরোসল বোমাও বলা হয়। কারণ, এতে এরোসলের ভূমিকা মুখ্য। এই রকেট হামলার দু’টি ধাপ। প্রথম ধাপে, এরোসল বা ধূলিকণা তৈরি হয়। এতে থাকে কার্বনের জ্বালানি ও ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ধাতব কণা। দ্বিতীয় ধাপে, মেঘের মতো গ্যাসীয় পিণ্ড জ্বলে ওঠে। যার প্রবল কম্পন তরঙ্গ আশপাশের বাতাস থেকে অক্সিজেন টেনে নেয় ও সেই অঞ্চলে আচমকাই ভ্যাকিউম বা শূন্য স্থান তৈরি করে। এবং তার পরেই বিস্ফোরণ ঘটায়। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলির মতে, এ ধরনের অস্ত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ। তবে অস্ট্রেলীয় বিশেষজ্ঞ মার্কাস হেলারের কথায়, ‘‘এই অস্ত্র অবৈধ নয়। তবে এটি প্রয়োগ হলে, পরিণতি ভয়ঙ্কর।’’

রাশিয়া তাদের বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করলেও রাষ্ট্রপুঞ্জ জানিয়েছে, তাদের কাছে একাধিক রিপোর্ট এসেছে। তাতে স্পষ্ট, নিষিদ্ধ অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। রাষ্ট্রপুঞ্জ জানিয়েছে, তাদের নজরদারি প্রক্রিয়া সক্রিয় রয়েছে ইউক্রেনে। রাশিয়ার পাল্টা দাবি, ইউক্রেনে জৈব অস্ত্র তৈরির জন্য গবেষণা হচ্ছিল। তাতে টাকা জোগাচ্ছিল আমেরিকা। তবে নিরাপত্তা পরিষদের অন্য সদস্য রাষ্ট্রুগুলি সেই দাবি মানেনি। রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তুলেছে ইউক্রেন। সে বিষয়েও তদন্ত করা হবে। সম্প্রতি ইউক্রেনের একাধিক উপগ্রহচিত্র প্রকাশ করেছে একটি বেসরকারি আমেরিকান সংস্থা। তাতে দেখা গিয়েছে, ধ্বংস হয়েছে একের পর এক বহুতল, জ্বলছে শপিং কমপ্লেক্স। উত্তর ইউক্রেনের প্রায় ১৫ হাজার বর্গকিলোমিটার জুড়ে তোলা ওই ছবিগুলিতে কিভ, চের্নিহিভ এবং চের্নোবিলের বিস্তীর্ণ এলাকায় রুশ সেনার আগ্রাসনের ছাপ স্পষ্ট।

কৃষ্ণসাগরের তীরে ইউক্রেনের অন্যতম বিতর্কিত অঞ্চল ডনবাসের শহর মারিয়ুপোলে আজও দিনভর হামলা চলেছে। শহরের মেয়রের দাবি, প্রতি আধ ঘণ্টা অন্তর বোমা ফেলছে ‘শত্রুপক্ষ’। নিষিদ্ধ অস্ত্রও ব্যবহার করছে রুশরা। এবং বেছে বেছে নিশানা করছে জনবসতি অঞ্চলগুলিকে। শুধু মারিয়ুপোল নয়, নিপরো শহরেও আজ তিন বার আকাশপথে হামলা চালানো হয়। স্থানীয় প্রশাসনের দাবি, একটি কিন্ডারগার্টেন, একটি আবাসন ও এক জুতোর কারখানায় বোমা ফেলে রুশ বাহিনী। খারকিভের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। লাগাতার গোলাবর্ষণ চলছে। দিনের পর দিন বিদ্যুৎ নেই, পানীয় জল নেই, খাবার নেই। শূন্যের নীচে তাপমাত্রা, এ দিকে ঘর গরম রাখার বৈদ্যুতিন ব্যবস্থা অকেজো। এ শহরের মেয়র ইহর তেরেকোভ বলেন, ‘‘১৬ দিন হয়ে গেল, রুশরা নির্বিচারে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা লড়ে যাচ্ছি। আমরা জিতবও।’’ তেরেকোভ জানান, বাসিন্দাদের বলা হয়েছে, যাঁদের বাড়িতে হিটিং সিস্টেম অকেজো হয়ে গিয়েছে, তাঁরা যেন মেট্রো স্টেশনের বেসমেন্টে চলে যান। কারণ তাপমাত্রা আরও নামবে। আরও বরফ পড়ার পূর্বাভাস রয়েছে।

যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনের পাশে এসে না দাঁড়ালেও এখন পশ্চিমের সব দেশ তাদের হয়ে সরব। কেন তারা ইউক্রেনে গিয়ে যুদ্ধ করছে না, সেই ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে আজ আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ‘‘নেটো-রাশিয়া যদি সরাসরি সংঘর্ষ বাধে, সে ক্ষেত্রে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ অবধারিত।’’ রাশিয়ার পাশে আছে শুধুমাত্র তার দুই বন্ধু, বেলারুস ও চিন। আর কিছু দেশ, কোনও পক্ষেই কথা বলছে না। কূটনীতিকদের মতে, মস্কো বুঝতে পারেনি, ইউক্রেন-জয় এতটা কঠিন হবে। পোড়খাওয়া রুশ রাষ্ট্রপ্রধান ভ্লাদিমির পুতিনের যুদ্ধ-কৌশল ব্যর্থ বলেও মনে করছেন অনেকে। একরাশ আর্থিক নিষেধাজ্ঞার ভারে জর্জরিত মস্কো যদিও আজ দাবি করেছে, সব ঠিক আছে। নিষিদ্ধ অস্ত্রের অভিযোগ নিয়ে একটি কথাও না বলে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রী শুধু বলেছেন, ‘‘সব কিছু পরিকল্পনা মতোই এগোচ্ছে। এ সপ্তাহে দিনের দিন খবর পেয়ে যাবেন।’’ যদিও আজ খবর মিলেছে, যুদ্ধে প্রবল ক্ষতির জন্য ৮ রুশ কর্তাকে বরখাস্ত করেছেন পুতিন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement