রুশ ক্ষেপণাস্ত্র-হানায় বিধ্বস্ত কিভের লোকালয়। রয়টার্স
আজও ইউক্রেনে অব্যাহত রইল রুশ হামলা।
গত কাল আচমকা আক্রমণের তীব্রতা বাড়িয়ে ইউক্রেনের রাজধানী কিভ-সহ গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলিতে ৮৪টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল ভ্লাদিমির পুতিনের দেশ। ইউক্রেন প্রশাসনের মতে, ওই হামলায় ১৯ জন নিহত হন। জখম শতাধিক। আজ কিভ, লিভিভ, তের্নোপিল, জ়াইটোমির, নিপ্রো, ক্রেমেনচুক, খারকিভ শহরে নতুন করে হামলার খবর মিলেছে। লিভিভের দু’টি বিদ্যুৎকেন্দ্রে পরপর তিনটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। শহরের একাংশ তার পর থেকে অন্ধকারে। পাশাপাশি আজ রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানিয়েছে, ইউক্রেনের সেনাই তাদের মূল নিশানায়। তাদেরকে দুর্বল করতে শক্তি ও বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিকে লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া। এখনও পর্যন্ত সমস্ত অভিযানে তারা সফল বলে জানিয়েছে মস্কো।
গত কালের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার তীব্র নিন্দা করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেস জানিয়েছেন, গত কালের হামলায় তিনি গভীর ভাবে মর্মাহত। তিনি বলেন, ‘‘এই সংঘর্ষে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি মূল্য চোকাচ্ছে সাধারণ মানুষ।’’
গত কালের হামলার পরে ইউক্রেনকে উন্নত আকাশপথ-প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা (এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম) দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। হোয়াইট হাউস সূত্রের খবর, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কির সঙ্গে এ প্রসঙ্গে কথা বলেছেন বাইডেন। উন্নত এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের পাশাপাশি ইউক্রেনকে সমস্ত রকম সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তাঁরা। বাইডেনের সঙ্গে কথা বলার পরে জ়েলেনস্কি টুইট করে বলেছেন, ‘‘আকাশপথ সুরক্ষিত রাখাই এখন আমাদের প্রধান লক্ষ্য।’’ কিভ সূত্রের খবর, জি-৭ গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির কাছে উন্নত আকাশপথ-প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা চেয়ে আর্জি জানাবেন জ়েলেনস্কি।
রাষ্ট্রপুঞ্জ, আমেরিকা-সহ পশ্চিমি দেশগুলি গত কালের হামলা যতই নিন্দা করুক না কেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তাঁর সিদ্ধান্তে অনড়। আগামি দিনে আরও বড় হামলা চালানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেছেন, ‘‘সন্ত্রাসবাদীরা (বিদেশি শক্তি ও ইউক্রেনীয় বাহিনী) হামলা না থামালে রাশিয়া জবাব দেবেই। এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।’’
পাশাপাশি, এত দিন ধরে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ার দায় আমেরিকার কাঁধেই ঠেলেছেন রুশ বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। আজ টেলিভিশনে তিনি বলেন, ‘‘আমি মনে করি আমেরিকা গোড়া থেকেই এই যুদ্ধে সক্রিয় ভাবে অংশ নিয়েছে। এই সংঘর্ষ আসলে ওরাই নিয়ন্ত্রণ করছে।’’ লাভরভ আরও বলেন, হোয়াইট হাউসের নিরাপত্তা বিভাগীয় প্রধান জন কিরবি-সহ একাধিক প্রশাসনিক কর্তারা বাইরের দুনিয়ায় বলে বেড়িয়েছেন যে আমেরিকা যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছে। কিন্তু রাশিয়া নাকি সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। লাভরভ বলেন, ‘‘এ কথা পুরোপুরি মিথ্যে। আমাদেরকে এমন কোনও প্রস্তাব দেওয়া হয়নি।’’
যুদ্ধের মধ্যেই রুশ হামলায় নিহত সেনাদের দেহ ফেরানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কিভ। আজ কিভের তরফে জানানো হয়েছে, রাশিয়া অধিকৃত ডনেৎস্ক এলাকার ওলেনিভকা কারাগারে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত ৬২ জনের দেহ ফিরিয়ে আনা হয়েছে। ওলেনিভাকায় হামলার দায় অবশ্য মেনে নেয়নি রাশিয়া। রুশ অধিকৃত এলাকায় ইউক্রেনই ওই হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ মস্কোর। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘‘এটি রাশিয়ার যুদ্ধাপরাধের নমুনা। কারাগারে ওরাই হামলা চালিয়েছে।’’
সংবাদ সংস্থা