ফাইল চিত্র।
ইউক্রেনের ছোড়া নেপচুন ক্ষেপণাস্ত্র যে তাদের যুদ্ধজাহাজকে ধ্বংস করেছে, গত কাল তা মানতে নারাজ ছিল রাশিয়া। তাদের দাবি ছিল, আগুন লেগেছিল জাহাজে। তাতেই জাহাজে মজুত থাকা বোমায় বিস্ফোরণ ঘটে। কিন্তু ইউক্রেনের হামলা অস্বীকার করলেও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পাল্টা আঘাত হানল ‘জখম’ রাশিয়া। কিভের কাছে নেপচুন ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির কারখানায় রকেট ছুড়ল ক্রেমলিন। হুঙ্কার ছাড়ল— আরও ক্ষেপণাস্ত্র হানার জন্য তৈরি থাকুক কিভ কম্যান্ড।
এখানেই শেষ নয়। আজ রাশিয়ার সরকারি টিভি চ্যানেলে ঘোষণা করা হয়েছে, রুশ নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ মস্কভা ধ্বংস হওয়ার পরই ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ’ শুরু হয়ে গিয়েছে।
মস্কভা-ধ্বংসকে সহজ ভাবে নিচ্ছে না রাশিয়া। মারিয়ুপোলের যুদ্ধে জাহাজটির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। গত কাল ইউক্রেনের ওডেসার দিক থেকে মস্কভার উপরে আছড়ে পড়ে দু’টি নেপচুন ক্ষেপণাস্ত্র। একাধিক বিস্ফোরণে আগুন ধরে যায় জাহাজে। তড়িঘড়ি বন্দরের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয় জাহাজটিকে। কিন্তু ব্যর্থ হয় রুশ নৌবাহিনী। মাঝপথে সমুদ্রসমাধি ঘটে মস্কভার। তার ডুবে যাওয়ায় কৃষ্ণসাগরে কিছুটা হলেও বিপাকে পড়েছে রাশিয়া। ক্রেমলিনের মুখপত্র ওই টিভি চ্যানেলের উপস্থাপক ওলগা স্কাবেইভা বলেন, ‘‘সংঘর্ষ যে ভাবে তরান্বিত হচ্ছে, তাকে নিঃসন্দেহে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বলা যায়।’’
ওলগার কথা স্পষ্ট, কিভে ইউরোপের রাষ্ট্রনেতাদের ঘনঘন সফরে যারপরনাই ক্ষুব্ধ ক্রেমলিন। আজ কিভের ওই কারখানায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা এক প্রকার বিদেশি প্রতিনিধিদের উদ্দেশে বার্তা। মনে করিয়ে দেওয়া— কিভও নিরাপদ নয়।
তা ছাড়া, ইউক্রেনকে নেটোয় না নেওয়া হলেও, যুদ্ধে কিভের নেটো-ঘনিষ্ঠতা ভাল চোখে দেখছে না মস্কো। ওলগা বলেন, ‘‘হয়তো সরাসরি নেটোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে না। কিন্তু আমরা এখন নেটোর পরিকাঠামোর বিরুদ্ধেই লড়ছি। আমাদের সেটা বোঝা উচিত।’’ অর্থাৎ কি না প্রায় ধ্বংসস্তূপের উপরে দাঁড়িয়ে থাকা কিভ, রুশ যুদ্ধজাহাজ ধ্বংস করার যে দুঃসাহস দেখিয়েছে, তার পিছনে নেটোর ভূমিকাই দেখতে পাচ্ছে মস্কো। সংবাদপাঠের এই দৃশ্য আজ ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। নেট-নাগরিকদের একজন লিখেছেন, ‘‘ভালুককে খোঁচানো হচ্ছে। রসিকতা মাফ করবেন, কিন্তু এ ক্ষেত্রে ভালুক হল নেটো।’’ অন্য এক জন লিখেছেন, ‘‘রাশিয়ার ৫০০ ট্যাঙ্ক, ২০০০ গাড়ি, ৮২টি যুদ্ধবিমান, ১৮ হাজারের বেশি সেনা শেষ হয়ে গিয়েছে। নেটো কিন্তু এখনও যুদ্ধে নামেনি। নেটো যদি যুদ্ধে নামে, সে ক্ষেত্রে রাশিয়ার পক্ষে মোটেই ভাল হবে না।’’
রাশিয়ার অন্য একটি টিভি চ্যানেল আবার মস্কভা-প্রসঙ্গে ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছে। তারা বলেছে, পশ্চিমের দেশগুলোর উস্কানিতে ইউক্রেন যা করছে, তার পরিণতি ভয়ানক ও রক্তাক্ত হবে। গোটা বিশ্ব যখন বলছে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন চলছে, তখন মস্কোর সংবাদমাধ্যমের বক্তব্য, আগ্রাসন নয়, ক্রেমলিনের ‘বিশেষ সেনা অভিযান’। এবং তাতে ইউক্রেনকে ইন্ধন দিচ্ছে পশ্চিম। কোটি কোটি অস্ত্র তুলে দিচ্ছে কিভের হাতে।