প্রতীকী ছবি।
যে রাখাইন জঙ্গিদের তাণ্ডব ও গণহত্যার ফলে মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশে অশান্তির শুরু, রবিবার তারা একতরফা ভাবে সংঘর্ষবিরতি ঘোষণা করেছে। ১১ অক্টোবর পর্যন্ত এই সংঘর্ষবিরতি তারা পালন করবে বলে টুইট করে ঘোষণা করা হয়েছে। তবে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন ‘আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি’ বা আরসা-র এই ঘোষণায় পরিস্থিতির কোনও হেরফের হবে বলে মনে করেন না কেউই।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে চাপ মোদীর
অগস্টের ২৪ তারিখে রাষ্ট্রপুঞ্জের কোফি আন্নান কমিটি রাজধানী নেপিদওয়ে পৌঁছে মায়ানমার সরকারের কাছে রোহিঙ্গা সমস্যা নিরসনে কয়েকটি প্রস্তাব দেন, যার মধ্যে এই জনগোষ্ঠীকে নাগরিকত্ব দেওয়ার পরামর্শও ছিল। কিন্তু সেই রাতেই আরসা জঙ্গিরা রাখাইন (সাবেক আরাকান) প্রদেশে ৩০টি পুলিশ চৌকি ও একটি সেনা ছাউনিতে হামলা চালিয়ে ১৫০ জনকে হত্যা করে। তার পরই জঙ্গি দমনে অভিযানে নামে সেনারা। রাষ্ট্রপুঞ্জের হিসেব অনুযায়ী, রাখাইন প্রদেশে ঘরছাড়া প্রায় তিন লক্ষ রোহিঙ্গা, যারা ধর্মে মুসলিম। তার মধ্যে দু’লক্ষ ৯৪ হাজারই শরণার্থী হয়েছেন বাংলাদেশে। ভারতেও আশ্রয় নিয়েছেন ৪০ হাজার রোহিঙ্গা।
আরসা-র যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানায়নি মায়ানমার। তবে শনিবার সরকারের তরফে জানানো হয়, রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে ত্রাণ শিবিরের ব্যবস্থা করবে সরকার। শরণার্থীদের অবশ্য দাবি, আরসা-র বিরুদ্ধে সেনা অভিযান চলছেই।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশ— দুই সরকারই বিব্রত। পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই এই জনগোষ্ঠীর মধ্যে কৌশলে ইসলামি জঙ্গি সংগঠন গড়ে তুলেছে। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, পাকিস্তানের মাটিতে কাশ্মীরি জঙ্গিদের সঙ্গে একই শিবিরে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে রোহিঙ্গা জঙ্গিদের। অস্ত্রশস্ত্রও জোগায় আইএসআই। এই পরিস্থিতিতে দিল্লি ও ঢাকা বেশ কয়েক দফা আলোচনা করেছে। দু’দেশই জানিয়েছে, রাখাইন শান্ত হলেই শরণার্থীদের ফেরত পাঠাবে তারা।
তবে কেন্দ্রের এই অবস্থানের বিরোধিতা করে কংগ্রেস তাকে ‘মানবতা-বিরোধী’ আখ্যা দিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে মায়ানমার বাণিজ্যিক দূতাবাসের সামনে মঙ্গলবার বিক্ষোভ দেখাবে প্রদেশ কংগ্রেস। রোহিঙ্গাদের ফেরানোর বিরোধিতা করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারও। কিন্তু ত্রিপুরার রাজ্যপাল তথাগত রায় রবিবার কলকাতায় একটি অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেছেন, ‘‘দেশটা কি ধর্মশালা যে, যে আসবে তাকে থাকতে দিতে হবে? বাংলাদেশ, পাকিস্তান, সৌদির মতো দেশ তাদের থাকতে দিচ্ছে না, আমরা কেন দেব?’’ কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, কেন্দ্র তাঁকে ত্রিপুরার রাজ্যপাল করে কার্যত অবসরে পাঠানোর পরেও বিভিন্ন সংবেদনশীল বিষয়ে বেলাগাম মন্তব্য করেই চলেছেন তথাগত।