মোবাইলে সু চি-র বক্তৃতা শুনছেন রোহিঙ্গারা। কুতুপালংয়ে। এএফপি
রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গাদের নির্যাতন, গণহত্যা এবং জাতিগত নির্মূলিকরণের জন্য দায়ী সেনাদের বিচার এবং এই হিংসা বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে মায়ানমার সরকারের ওপর ভরসা রাখা যায় না বলে রাষ্ট্রপুঞ্জের সর্বোচ্চ আদালতকে জানাল গাম্বিয়া। এই সব অপরাধের অভিযোগ তুলে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত (আইসিজে)-এ মায়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে আফ্রিকার ছোট্ট দেশ গাম্বিয়া। তিন দিন ধরে তার শুনানি চলছে।
মঙ্গলবার প্রথম দিনে গাম্বিয়ার আইনমন্ত্রী মায়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগগুলি তুলে ধরার পরে বুধবার মায়ানমার সরকারের ‘বিশেষ কৌঁসুলি’ আউং সান সুচি তা খণ্ডন করে বলেছিলেন, সেনা অভিযানে কোনও সেনাসদস্য মানবাধিকার লঙ্ঘন করে থাকলে তাঁদের সরকার সামরিক আদালতে তার বিচার করবে। হিংসা বন্ধ হয়েছে দাবি করে রোহিঙ্গাদের ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরুর কথাও বলেছিলেন নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী সুচি। গাম্বিয়ার অভিযোগকে ‘অসম্পূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর’ বলেও অভিহিত করে তিনি বলেন, সেনা অভিযানে বাড়াবাড়ি হলে সরকারই তা তদন্ত করে দেখে উপযুক্ত পদক্ষেপ করবে। আন্তর্জাতিক আদালতে বিষয়টি তোলা অর্থহীন। তারই জবাব দিতে গিয়ে বৃহস্পতিবার গাম্বিয়ার আইনজীবী বলেন, এত কিছুর পরে মায়ানমার সরকারের শুভবুদ্ধির ওপর কিছুতেই ভরসা করা যায় না। আন্তর্জাতিক আদালতই তাঁদের হিংসা থামিয়ে রোহিঙ্গাদের ঘরে ফেরাতে বাধ্য করুক। ইতিমধ্যে যা ঘটেছে, তার বিচারও করা হোক।
মঙ্গলবার গাম্বিয়ার আইনমন্ত্রী আবুবকর তাম্বাদু রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন, খুন, ধর্ষণ, বাড়িতে আগুন দেওয়া-সহ ভয়ানক সব অভিযোগ তুলে ধরে বলেছিলেন, রাষ্ট্রপুঞ্জও তাদের রিপোর্টে এই ঘটনাকে জাতিগত নির্মূলিকরণ অভিযান বলে বর্ণনা করেছে। সে ঘটনার পরে প্রাণ বাঁচাতে ৭ লক্ষ রোহিঙ্গা আন্তর্জাতিক সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে চলে যেতে বাধ্য হয় বলেও জানান তাম্বাদু। জবাবি বক্তৃতায় সুচি স্বীকার করে নেন, সেনা অভিযানের সময়ে বেশ কিছু বাড়াবাড়ির অভিযোগ তাঁরা পেয়েছেন। দোষীদের শাস্তিও দেওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গা শব্দ উচ্চারণ না করে সুচি বলেন, এ জন্য ৭ লক্ষ মানুষ ঘর ছেড়ে বাংলাদেশে গিয়েছেন, এটাও সত্য। কিন্তু তাদের ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক আদালত হস্তক্ষেপ করলে শরণার্থী ফেরানোর প্রক্রিয়া বাধা পাবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন মায়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর সুচি।
কক্সবাজারের কুতুপালংয়ে রোহিঙ্গারা মঙ্গলবার থেকেই দ্য হেগের শুনানি দেখার জন্য ভিড় জমাচ্ছেন। সুচি বক্তৃতা দেওয়ার সময়ে এক রোহিঙ্গা বলতে থাকেন, ‘‘মিথ্যা বলছে, ডাহা মিথ্যা বলছে।’’ শুনানি চলাকালীন দ্য হেগে আদালতের বাইরে রোহিঙ্গাদের একটি দল সুচির বিরুদ্ধে স্লোগান লেখা পোস্টার নিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। আবার মায়ানমার সরকারের সমর্থক এক দলও গলা চড়িয়ে স্লোগান দিচ্ছেন। তাঁদের ফেস্টুনে লেখা, ‘সুচি, আমরা তোমার সঙ্গে আছি!’’