একটা বিলাসবহুল ঝাঁ চকচকে হোটেলে রয়েছেন আপনি। সকালে দেখলেন কোনও সাফাইকর্মী আসেনি। পরপর তিনদিন একই কাণ্ড, অথচ অভিযোগও করতে পারছেন না। কারণ ঘরদোরে যে একটুও ধুলোবালি নেই! কী ভাবে সম্ভব এটা?
কোপেনহেগেনের হোটেল অট্টিলিয়ায় রয়েছে এমনই ব্যবস্থা। ডেনমার্কের সংস্থা এসিটির সঙ্গে যৌথ ভাবে হোটেলের ঘরগুলি তৈরি করেছেন হোটেল কর্তৃপক্ষ।
এসিটি ক্লিনকোট প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে। ঘরে স্বচ্ছ, গন্ধহীন একটি কোট থাকে এই প্রযুক্তিতে। সূর্যালোক পড়লেই যা থেকে অ্যান্টিব্যাক্টিরিয়াল স্প্রে বেরিয়ে টাইফয়েড, ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদির ক্ষতিকর জীবাণুকে মেরে ফেলে।
সংস্থার দাবি, এক বছর ধরে এই আস্তরণ থাকলে ঘরে কোনও সাফাইকর্মীরই প্রয়োজন হয় না। প্রায় দু’বছর ধরে ডেনমার্কের ন্যাশনাল রিসার্চ সেন্টারে এটি পরীক্ষা করা হয়েছে, জানান করিম নিয়েলসন নামে এক আধিকারিক। এই প্রযুক্তিকে তিনি টেফলনের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
তবে সাফাইকর্মীর কি একেবারেই প্রয়োজন হয় না? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “সাফাইকর্মীরা শুধু দিনে একবার ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ব্যবহার করে। তবে ধুলো ঝাড়া, ঘর মোছা যাকে বলেন, তার কোনও প্রয়োজন পড়ে না। সেই কাজটাই করে ওই ক্লিনকোট।”
এতে কী থাকে? সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, টাইটেনিয়াম ডাই অক্সাইড নামে একটি রাসায়নিক থাকাতেই এটা সম্ভব হচ্ছে। ডেনমার্ক, জার্মানি, তাইওয়ানের মতো দেশ এই প্রযুক্তিকে ইতিমধ্যেই মান্যতা দিয়েছে।
সূর্যালোক পড়লেই ফটো ক্যাটালিসিস পদ্ধতিতে ইলেকট্রন হোল পেয়ার তৈরি হয়, যেগুলি বাতাসের আর্দ্রতাকে ফ্রি র্যাডিকালে পরিণত করে। এই আস্তরণই ক্ষতিকারক স্ট্যাফাইলোকক্কাস, ই কোলাই ব্যাক্টিরিয়া, ভাইরাস, উদ্বায়ী জৈব পদার্থ-সহ অন্য ক্ষতিকারক অণুজীবকে নিমেষে দূর করে।
ক্লিনকোট প্রযুক্তি ব্যবহার করায় প্রতিটি ঘরের প্রতি রাতের ভাড়া প্রায় এক লক্ষ আশি হাজার টাকা। তবে এতে সাফাইকর্মীর সংখ্যা অনেক কম লাগে হোটেলের ক্ষেত্রে। কারণ ঘরের ধুলো শুষে নেয় এই কোট। কোপেনহেগেনের এই হোটেল এই কারণে বিদেশি পর্যটকদের কাছে নয়া আকর্ষণ হতে চলেছে।
১৫৫টি ঘরবিশিষ্ট এই হোটেলে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করার জন্য বেশ কয়েক দিন ঘরগুলি একেবারে ফাঁকা করে দেওয়া হয়েছিল। সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, এই রাসায়নিকে জীবাণু নাশ হলেও মানুষের পক্ষে একেবারেই ক্ষতিকর নয়।