প্রতীকী ছবি।
শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক টালমাটালের মধ্যে দায়িত্ব নেওয়ার পরে প্রথম দিনেই নতুন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমসিঙ্ঘের মুখে শোনা গেল ভারত এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নাম। বিক্রমসিঙ্ঘে জানিয়েছেন, ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে তিনি আগ্রহী। বিপদে পাশে দাঁড়ানোর জন্য মোদী সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছেন, “আমি ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখতে চাই। ধন্যবাদ জানাতে চাই প্রধানমন্ত্রী (নরেন্দ্র) মোদীকে।” ৭৩ বছর বয়সি রনিল বিক্রমসিঙ্ঘে বৃহস্পতিবার শ্রীলঙ্কার ২৬তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন দেশের ঋণ জর্জরিত অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে ও রাজনৈতিক অস্থিরতার অবসান ঘটাতে।
নয়া প্রধানমন্ত্রী পেয়েও অবশ্য খুশি নন শ্রীলঙ্কাবাসী। তাঁদের একাংশ এখনও প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের ইস্তফার দাবিতে অনড়। তিনি না সরলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন তাঁরা।
ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, নতুন প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য স্বাগত। কিন্তু এখনই উদ্বাহু হয়ে এমন কোনও বার্তা কলম্বোকে দিতে চায় না নয়াদিল্লি যাতে মনে হয়, সে দেশের সরকারের সমস্ত পদক্ষেপে ভারতের রাজনৈতিক সিলমোহর রয়েছে।
সাউথ ব্লকের এক কর্তার মতে, ভারতের প্রতিবেশী এবং কৌশলগত ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। ভারতকে নিশানা করার জন্য তা চিনের অত্যন্ত পছন্দের দ্বীপও বটে। স্বাভাবিক ভাবেই সে দেশের অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সামাল দিতে ঝাঁপিয়েছে ভারত। চিনের প্রভাবমুক্ত প্রতিবেশী বলয় এখন মোদী সরকারের অগ্রাধিকারের মধ্যে পড়ে। কিন্তু সে দেশে রাজনৈতিক অশান্তি এবং গণবিক্ষোভ শুরু হয়ে যাওয়ার পরে কিছুটা সতর্ক হয়েই পা ফেলতে চাইছে ভারত। এই বিষয়ে নেপাল নিয়ে ভারতের অভিজ্ঞতা ভাল নয়। অতীতে রাজীব গান্ধী শ্রীলঙ্কায় সেনা পাঠিয়ে নিজের প্রাণ হারিয়েছেন।
গত ছ’মাসে শ্রীলঙ্কায় ভারতের অর্থনৈতিক গুরুত্ব ও ভূমিকা বহুল পরিমাণে বেড়েছে। সেটা শুধু এই কারণে নয় যে ভারত ঋণজর্জর শ্রীলঙ্কাকে প্রায় ২৫০ কোটি ডলার দিয়েছে, প্রভূত জ্বালানি এবং ওষুধ সরবরাহ করেছে। সেটা এই কারণেও যে ত্রিঙ্কোমালির একটি অয়েল ট্যাঙ্ক ফার্ম দীর্ঘ সময়ের জন্য লিজ় নিয়ে রেখেছে নয়াদিল্লি। সে দেশে রাজাপক্ষে পরিবার এবং সরকার-বিরোধীদের মধ্যে চূড়ান্ত হিংসা এবং মেরুকরণ ঘটে রয়েছে। সাউথ ব্লকের সিদ্ধান্ত, বর্তমান সরকারের সঙ্গে (ক্ষমতায় যেই থাকুন না কেন) দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক চালিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে ঠিকই। কিন্তু প্রকাশ্য বিবৃতিতে, কোনও নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল বা পরিবারের সরকার নয়, তামিল, সিঙ্ঘলি শ্রীলঙ্কাবাসীকে সমর্থন করার বার্তাই দিতে হবে। বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তার বক্তব্য, “মধ্যমপথ নিয়ে চলা সর্বদাই কঠিন এবং দীর্ঘমেয়াদী হয় ঠিকই। বিশেষ করে যখন অন্ধকার সুড়ঙ্গের শেষে আলো কখন দেখা যাবে তার নিশ্চয়তা থাকে না। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সেটাই করা নিরাপদ।”
পাশাপাশি শ্রীলঙ্কা নিয়ে চিনের ভূমিকার দিকেও কড়া নজর রাখছে নয়াদিল্লি। এই মাসের গোড়ায় নিজেদের আগের অবস্থান বদলে সে দেশে নিযুক্ত চিনের রাষ্ট্রদূত কু ঝেংঝং শ্রীলঙ্কার অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডারের (আইএমএফ) কাছ থেকে আর্থিক অনুদান নেওয়ার বিষয়টি বেজিং সমর্থন করে। এক মাস আগে এই রাষ্ট্রদূতই জানিয়েছিলেন, আইএমএফ এবং শ্রীলঙ্কার এই ব্যবস্থায় চিনের আপত্তি রয়েছে। চিন তখন বলেছিল, তাতে কলম্বোর বেহাল অর্থনীতি সামলাতে এবং চিনের সঙ্গে ঋণের (৬৫০ কোটি ডলার) ভার লাঘব করতে যে কথাবার্তা চলছে তা ব্যাহত হবে। পরে তারা ভারতের ভূমিকা দেখে কলম্বোর সঙ্গে সম্পর্ক সহজ করতে চাইছে বলেই মনে করছে বিদেশ মন্ত্রক।