এ কে এম সফিউল ইসলাম।
রাজশাহি বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরের ঠিক বাইরে দিনে দুপুরে দুষ্কৃতীরা কুপিয়ে খুন করল এক জনপ্রিয় অধ্যাপককে। এ কে এম সফিউল ইসলাম (৪৮) নামে সমাজ বিজ্ঞানের এই অধ্যাপক তাঁর অসাম্প্রদায়িক চিন্তাভাবনা ও জীবনধারণের জন্য পরিচিত ছিলেন। ‘আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশ’ নামে একটি মৌলবাদী-জঙ্গি সংগঠন তাদের ফেসবুক পেজ-এ হত্যার দায় স্বীকার করে বলেছে, ‘এই অধ্যাপক বোরখা না-পরে ক্লাসে আসার জন্য মেয়েদের প্ররোচিত করাতেই তাঁকে খতম করা হল।’ হামলার পরে ঘটনাস্থল থেকে একটি কাগজ মেলে, যাতে লেখা ‘সাধক!’
বরাবরই লালন ফকিরের ভাবধারার অনুসারী এই অধ্যাপক কয়েক বছর আগে বাউল সম্প্রদায়ে নাম লেখান। বাড়িতে লালনগীতি ও বাউল গানের চর্চাও করতেন তিনি। তাঁর ছাত্ররা বলছেন, সম্ভবত সেই কারণেই মৌলবাদীদের চক্ষুশূল হয়ে উঠেছিলেন অধ্যাপক সফিউল। তবে পুলিশ জানিয়েছে, কে বা কারা তাঁকে আক্রমণ করল, কেনই বা তাঁকে নিশানা করা হল, সে বিষয়ে খোঁজখবর করা হচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে, ‘আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশ’ নামে মৌলবাদী ও জঙ্গি মতবাদ প্রচার করা এই সংগঠনটি এর আগে রাজীব হায়দর ও আশরাফুল আলম নামে দুই ব্লগারকে খুনের দায় স্বীকার করে বলেছে, ‘এরা নাস্তিক বলেই খতম করা হল।’ আসিফ মহিউদ্দিন ও রাকিব মামুন নামে আরও দুই ব্লগারকে যে কোনও দিন খতম করা হবে বলেও ফেসবুকে হুমকি দিয়েছে সংগঠনটি।
রাজশাহি বিশ্ববিদ্যালয়ের আর এক জনপ্রিয় মানবতাবাদী অধ্যাপক মহম্মদ ইউনুসকে ২০০৪-এ একই ভাবে কুপিয়ে খুন করা হয়। সেই খুনের দায়িত্ব স্বীকার করেছিল জঙ্গি সংগঠন জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)।
এ দিন অধ্যাপক সফিউল দুপুর আড়াইটের সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর থেকে কিছু দূরে বিহাস পল্লিতে তাঁর বাড়ির দিকে রওনা হন। হঠাৎই এক দল লোক তাঁকে ঘিরে ধরে কোপাতে থাকে। তার পরে অস্ত্রটি ছুঁড়ে ফেলে তারা উধাও হয়ে যায়। রক্তাক্ত অবস্থায় একটি রিক্সায় উঠে হাসপাতালে যেতে বলেন অধ্যাপক। কিন্তু কিছু দূরে গিয়েই রিক্সা থেকে পড়ে যান। স্থানীয় লোকেরাই তুলে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যান। সন্ধ্যায় সেখানে তিনি মারা যান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, অধ্যাপক সফিউলের ঘাড় ও মাথায় গভীর ক্ষত তৈরি হয়েছিল।
এই হত্যাকাণ্ডের খবর জানাজানি হতেই রাজশাহি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস বন্ধ হয়ে যায়। আততায়ীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে ছাত্রছাত্রীরা সড়ক অবরোধ করেন। কালও ছাত্র ধর্মঘট ডাকা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। রবিবার সব ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত থাকছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি কামরুল হাসান মজুমদার। সমাজ বিজ্ঞানের আর এক অধ্যাপক নিলুফার সুলতানা জানান, অধ্যাপক সফিউলের উপর এই হামলার ঘটনায় তাঁরা আতঙ্কিত।