ফাইল চিত্র।
জনরোষের আঁচ থেকে বাঁচতে প্রথমে নিজের বাসভবন আর তার পরে দেশ ছেড়েই পালিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। প্রবাস থেকে দিন কয়েক আগে পার্লামেন্টের স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন গোতাবায়া রাজাপক্ষে। এ বার তাঁর জায়গায় শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের গদিতে কে বসবেন, তার জন্য আগামী কাল গোপনে ভোট দেবেন পার্লামেন্টের সদস্যেরা।
চরম অর্থনৈতিক সঙ্কটে ধুঁকতে থাকা এই দ্বীপরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই গোটা দেশে জরুরি অবস্থায় জারি করেছেন কার্যনির্বাহী প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমসিঙ্ঘে। একাধারে তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী আবার আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থীও। কিন্তু বিক্রমসিঙ্ঘের প্রার্থীপদ নিয়ে অসন্তুষ্ট দেশের সাধারণ মানুষ। আগামী কাল নির্বাচনের আগে তাই বড় ধরনের গোলমালের আশঙ্কা করছে সরকার।
বিক্ষোভকারীদের দাবি, গোতাবায়ার মনোনীত বিক্রমসিঙ্ঘেকে কোনও মতেই দেশের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁরা মেনে নেবেন না। বস্তুত ৭৩ বছরের বিক্রমসিঙ্ঘেকে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেছে গোতাবায়ারই দল, এসএলপিপি। এর আগে বহু বার দেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ সামলেছেন বিক্রমসিঙ্ঘে। কিন্তু দু’বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য লড়ে হেরে যান। দেশে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা সব চেয়ে বেশি। তার পরেই রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বিরোধীদের অভিযোগ, সেই কারণে প্রেসিডেন্টের গদিতে বসার জন্য আগে থেকেই মুখিয়ে ছিলেন বিক্রমসিঙ্ঘে। বিক্ষোভকারীরাও তাই তাঁকে আদৌ পছন্দ করছেন না।
আগামী কাল বড় গোলমালের আশঙ্কায় ইতিমধ্যেই দেশের সব ক’টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক ভবনের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। রাজধানী কলম্বোর পুলিশের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে আজ কথা বলেন পার্লামেন্টের স্পিকার মাহিন্দা ইয়াপা আবেবর্ধনে। শাসকদল এসএলপিপির কিছু নেতাকে সোশ্যাল মিডিয়ায় সম্প্রতি যে হুমকি দেওয়া হয়েছিল, তার তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে ক্ষোভ জানান স্পিকার। পুলিশের আধিকারিকেরা অবশ্য পার্লামেন্টের নিরাপত্তা নিয়ে আজ স্পিকারকে আশ্বাস দিয়েছেন।
আগামী কাল লড়াই হবে তিন প্রার্থীর মধ্যে। বিক্রমসিঙ্ঘের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী এসএলপিপির-ই বিদ্রোহী সদস্য ডালাস আলাহাপ্পেরুমা। শাসকদলের বিক্ষুব্ধ নেতাদের সমর্থন রয়েছে প্রাক্তন এই সাংবাদিকের পিছনে। আজ একেবারে শেষ মুহূর্তে প্রেসিডেন্টের দৌড় থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন দেশের প্রধান বিরোধী দল এসজেবি-র নেতা সাজিথ প্রেমদাসা। তিনি টুইটারে জানিয়েছেন, দেশের আরও ভালর জন্য এই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি লড়বেন না। তিনি লিখেছেন, ‘‘শ্রীলঙ্কার মানুষকে আমি এটাই জানাতে চাই যে, ঠিক সময়ে ঠিক সিদ্ধান্তই আমি নেব যাতে আমার মাতৃভূমি আর তার মানুষের অধিকার রক্ষিত হয়।’’ কাল আলাহাপ্পেরুমাকে তাঁর দল সমর্থন করবে বলেও জানিয়ে দিয়েছেন প্রেমদাসা। তৃতীয় প্রার্থী হলেন বামপন্থী নেতা আনুরা কুমার দিসানায়েক। বাকি দুই প্রার্থীর থেকে প্রচারের আলো অবশ্য তিনি বরাবরই কম পেয়েছেন। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞেরাও মনে করছেন আগামী কাল মূল লড়াই হবে এসএলপিপির-ই দুই প্রার্থীর মধ্যে।
দেশের জনগণ যে তাঁকে চাইছেন না, তা অবশ্য ভাল ভাবেই জানেন বিক্রমসিঙ্ঘে। তবে দ্বীপরাষ্ট্রের এই নজিরবিহীন আর্থিক সঙ্কটের জন্য গোতাবায়া ও তাঁর পরিচালিত সরকারকেই দায়ী করেছেন তিনি। একটি প্রথম সারির আমেরিকান চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি দাবি করেছেন, শ্রীলঙ্কার আর্থিক পরিস্থিতি দেশের মানুষের কাছে দীর্ঘদিন লুকিয়ে রেখেছিল রাজাপক্ষে সরকার। আপাতত তিনি প্রেসিডেন্ট হলে চলতি বছরের মধ্যে দেশে আর্থিক স্থিতিশীলতা ফেরানোর উপরে জোর দেবেন বলে জানিয়েছেন। আগামী বছরের শেষে দেশ যাতে আর্থিক অগ্রগতির মুখ দেখতে পারে, সেই ব্যবস্থাও তিনি করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন বিক্রমসিঙ্ঘে।
শ্রীলঙ্কায় দ্রুত আর্থিক স্থিতিশীলতা ফেরানোর পক্ষে সওয়াল করেছে ভারত সরকারও। দ্বীপরাষ্ট্রে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার গোপাল বাগলে গত কাল এক প্রথম সারির ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই প্রায় ৪০০ কোটি ডলারের ত্রাণ শ্রীলঙ্কার মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। ভবিষ্যতে যাতে এ দেশে বিনিয়োগ আসে, তার ব্যবস্থাও করতে চলেছে নয়াদিল্লি।
এ দিকে শ্রীলঙ্কায় এখন যে সব ভারতীয় রয়েছেন, তাঁদের অত্যন্ত সতর্ক ভাবে চলাফেরা করতে নির্দেশ দিল সেখানকার ভারতীয় হাই কমিশন। সম্প্রতি কলম্বোয় ভারতীয় ভিসা অফিসের ডিরেক্টর বিবেক বর্মার উপরে হামলা চালায় অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীরা। এই ভারতীয় আধিকারিক এখন গুরুতর জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। হাই কমিশন এ দিন টুইট করে জানিয়েছে, ‘‘এ দেশে এখন অশান্তির বাতাবরণ। ভারতীয় নাগরিকদের অত্যন্ত সাবধানতার সঙ্গে থাকতে এবং চলাফেরা করতে অনুরোধ করছি।’’