Pranab Mukherjee

ভদ্রবিলার খবর জানতে চাইতেন, বাংলাদেশেরও

করোনা-সংক্রমণ শুরু না-হলে তো দিল্লি যাওয়ার কথাই ছিল আমার। যত বারই গিয়েছি, খুব খুশি হতেন দেখে। নড়াইলের কথা জিজ্ঞেস করতেন।

Advertisement

কানাইলাল ঘোষ

নড়াইল (বাংলাদেশ) শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৩:০৮
Share:

শ্বশুরবাড়িতে স্ত্রী শুভ্রার সঙ্গে প্রণব মুখোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র

জামাইবাবু অসুস্থ, রাতে বাথরুমে গিয়ে পড়ে গিয়েছেন— এই খবরটা শুনেই কেমন দুলে উঠেছিল পা দু’টো। ইচ্ছে হচ্ছিল তখনই দিল্লি চলে যাই, নিয়মিত খোঁজখবরটুকু অন্তত মিলবে সেখানে। কিন্তু লকডাউন, বিমান বন্ধ। ভীষণ অস্থির লাগছিল মনটা। তার পরে সোমবার সন্ধ্যায় তাঁর বিদায় সংবাদ!

Advertisement

করোনা-সংক্রমণ শুরু না-হলে তো দিল্লি যাওয়ার কথাই ছিল আমার। যত বারই গিয়েছি, খুব খুশি হতেন দেখে। নড়াইলের কথা জিজ্ঞেস করতেন। গোটা বাংলাদেশের কথাও। কেমন চলছে সব। মানুষ কী বলছেন, জানতে চাইতেন। বাংলাদেশ জুড়ে তো তাঁর পরিচিত জন ছড়ানো। জানতাম সকলের খবর তিনি নেবেন, তাই তৈরি হয়েই যেতাম। আত্মীয়স্বজনদের কথাও জানতে চাইতেন। দিদি যত দিন ছিলেন, আমি গেলেই ব্যস্ত হয়ে পড়তেন আপ্যায়নে। জামাইবাবু তাঁকে ডেকে খুঁটিয়ে জানতে চাইতেন— নড়াইলের কানুর থাকার জন্য ঠিক কী ব্যবস্থা হয়েছে, কী রান্না হচ্ছে, এই সব।

পাঁচ বছর আগে দিদি মারা গিয়েছিলেন এই অগস্টেই। মনে আছে, ১৮ তারিখে। তার বছর দুয়েক আগে, রাষ্ট্রপতি হিসেবে বাংলাদেশ সফরে দিদিকেও সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন প্রণববাবু। সেই ছিল তাঁর প্রথম ভদ্রবিলা গ্রামের শ্বশুরবাড়িতে আসা। সে কী উৎকণ্ঠা আমাদের। ঠিক মতো আপ্যায়ন করতে পারব তো! ২০১৩-র ৫ মার্চ হেলিকপ্টার নামল কলেজের মাঠে। তাঁর জন্য সেখানে গাড়ির বহর রেখে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাতে চড়েই আমাদের বাড়ি আসেন দিদি-জামাইবাবুরা। শহর থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে আমাদের ভদ্রবিলা গ্রাম। চিত্রা নদীর ধারে। দিদির স্মৃতির সেই বড় ভিটে আজ আর নেই। ১৯৭১-এ পাকিস্তান-পন্থীরা এ বাড়ি লুটপাট করে ভেঙে দিয়েছিল। এখন যেটুকু আছে আমরা বাস করছি। সে দিন গোটা নড়াইল ভেঙে পড়েছিল তাঁদের দেখতে। আমাদের বাড়িতে দুপুরের খাওয়ার ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু শ্বশুরবাড়িতে তেমন কিছুই খাননি জামাইবাবু। সত্যি বলতে, আমরা একটু দুঃখই পেয়েছিলাম। আমাদের কি কোনও ত্রুটি হয়ে গেল? কেন তিনি কোনও ক্রমে দু’টি মুখে দিয়েই ফেরার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লেন?

Advertisement

পরে রাষ্ট্রপতি ভবনে দেখা করতে গিয়ে বললাম সেই আক্ষেপের কথা। হা-হা করে হেসে উঠেছিলেন জামাইবাবু। বলেছিলেন, ‘‘কোনও দিনই আমি বেশি খাওয়া-দাওয়ার পক্ষপাতী নই, আর এখন তো বুড়ো বয়স। সত্যিই খুব দেরি হয়ে গিয়েছিল আমাদের সেই দিন। নড়াইল থেকে সোজা আমাদের যেতে হয় বিমানবন্দরে।’’ খুব মনে পড়ে, বলেছিলেন, ‘‘শুভ্রাকে তাদের নড়াইলের বাড়িটা দেখানো বাকি ছিল। সেই জন্যই যাওয়া!’’

নড়াইলের ভিক্টোরিয়া কলেজে ছাত্রীদের একটি হস্টেল করে দিয়েছেন জামাইবাবু, দিদির কথা শুনে। তাঁর একান্ত অনুরোধে একটি বেসরকারি সংস্থা নড়াইলে একটি আধুনিক হাসপাতাল তৈরির পরিকল্পনা নেয়। কিন্তু রাজনৈতিক দলাদলিতে সেই হাসপাতালের নির্মাণ কাজ আজও শুরু হতে পারেনি। নড়াইলের মানুষ তা নিয়েও প্রণববাবুর দ্বারস্থ হয়েছিলেন। তিনি নিশ্চয়ই বাংলাদেশের প্রশাসনের সর্বোচ্চ মহলে বিষয়টি তুলেছিলেন। কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি আজও।

হাসপাতালটি চালু হলে খুবই উপকৃত হবেন প্রত্যন্ত নড়াইলের সাধারণ মানুষ। জামাইবাবুর ‘মহার্ঘ উপহার’ কাজে আসবে শ্বশুরবাড়ির লোকেদের।

(প্রণব মুখোপাধ্যায়ের শ্যালক)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement