বন্ধু: পোষ্য কোলে খুদে।
উনিশ শতকের বাঙালি ‘বাবুয়ানা’য় মেতেছেন সিলিকন ভ্যালির বড়কর্তারা। দামি গাড়ির মতোই ভাল জাতের মুরগি এখন তাঁদের ‘আভিজাত্যের’ লক্ষণ।
গ্রামীণ আমেরিকায় মুরগি পোষার চল নতুন নয়। শহরের বাইরে পা দিলেই দেখা যাবে, ভেড়া, মুরগি ও শুয়োর প্রতিপালন করছে বহু মার্কিন পরিবার। কিন্তু এ তো আর গ্রামীণ খামারবাড়ি নয়। তা হলে?
সিলিকন ভ্যালিতে এখন অর্গ্যানিক খাবারের প্রতি ঝোঁকই বেশি। কিচেন গার্ডেন বা রান্নাঘর-সংলগ্ন জমিতে কীটনাশক ছাড়া শাকসব্জি ফলিয়ে সেগুলোই রান্না করা পছন্দ করে এখানকার উচ্চবিত্ত শ্রেণি। সেই টাটকা খাবারের তালিকাতেই সাম্প্রতিকতম সংযোজন— মুরগি। যার ফলে খোঁয়াড় থেকে ব্রেকফাস্টের টেবিলে সোজা চলে আসছে হাত-গরম ডিম।
তবে টাটকা খাবারের প্রতি ঝোঁক মুরগি প্রতিপালনের একমাত্র কারণ নয়। গুগ্লের এক শীর্ষকর্তা জোহান ল্যান্ডের কথায়, ‘‘কম্পিউটারের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়েই দিনের বেশির ভাগ সময়টা কেটে যায়। বাড়ি ফিরে স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের সঙ্গে যখন সময় কাটাই, তখন চারপাশে মুরগি আর ভেড়াগুলো খেলে বেড়ায়। নেট দুনিয়া থেকে জীবজগতের দুনিয়ায় এসে মনটা হাল্কা হয়ে যায়। পরের দিন আবার কেজো জগতে ফিরে যাওয়ার শক্তি পাই।’’
ল্যান্ডের মতো সিলিকন কর্তারা তাঁদের মুরগিদের বেজায় আদরে রাখেন। তাদের জন্য বিশেষ ডায়েট চার্টে থাকে তরমুজ, স্যামন মাছ আর স্টেক। এমনকী, মুরগিদের জন্য আলাদা পাচকেরও ব্যবস্থা করা হয়। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে যাতে পোষ্যরা ঘোরাফেরা করে, তাই তাদের ডায়াপার পরিয়ে রাখা হয়। তাদের থাকার খাঁচাগুলোও এত সাজানো ও সুন্দর, যে সেগুলোকে ‘খাঁচা’ বলতে কষ্ট হবে। অত্যন্ত দামি পাইন কাঠ দিয়ে তৈরি খাঁচার ভেতরে দিনভর জল ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা রয়েছে। কৃত্রিম উপায়ে সেখানে আলো-হাওয়া খেলে যায়। খাঁচার দরজাও স্বয়ংক্রিয়। আর মালিকের স্মার্টফোনের সঙ্গে সেই খাঁচার সংযোগ করে দেওয়া হয়, যাতে সব সময়ে খাঁচার উপরে নজর রাখতে পারেন তিনি।
কেন এত তোয়াজ? মুরগি-মালিকদের দাবি, এত ভাল করে রক্ষণাবেক্ষণের ফলে তারা দারুণ গুণসম্পন্ন ‘সোনার ডিম’ পাড়ে।
এই সব মুরগির দামও প্রচুর। সাধারণ খামারবাজারে যেখানে একটা মুরগি ১৫ ডলারে বিক্রি হয়, সেখানে সিলিকন ভ্যালিতে একটা মুরগি সাড়ে তিনশো ডলারে কিনতে হয়। তারপর যদি সেগুলো কোনও বিশেষ প্রজাতির মুরগি হয়, তা হলে তাদের দাম আরও কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। যেমন ‘ইস্টারএগার’। অত্যন্ত দুষ্প্রাপ্য এই প্রজাতির মুরগিরা হাল্কা নীল রঙের ডিম পাড়ে।
এক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার শীর্ষকর্তা লরা মেনার্ডের কথায়, ‘‘আমার বাড়ির মুরগিদের আমি আমার রোলস রয়েস গাড়িটির মতোই যত্নে রাখি!’’