ছবি: পিটিআই।
সংযুক্ত আরব আমিরশাহির প্রেসিডেন্ট শেখ খালিফা আল নাহেন-এর প্রয়াণের পরেই উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নায়ডুকে সে দেশে পাঠানো হয়েছিল ভারত সরকারের তরফ থেকে শোক জানাতে। একই সঙ্গে প্রোটোকলের প্রশ্নে কিছুটা অভূতপূর্ব ভাবেই বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর হাজির হন নয়াদিল্লিতে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির দূতাবাসে। উদ্দেশ্য একই— আবু ধাবির পাশে দাঁড়িয়ে সৌহার্দ্যের প্রদর্শন।
কূটনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, এই জোড়া শোকবার্তার পরেও জি-৭ এর তিন দিনের লাগাতার বৈঠকসেরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মিউনিখ থেকে আবু ধাবি পৌঁছনো (সেই একই কারণে) খুব জরুরি ছিল না। কিন্তু আবু ধাবির সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক পশ্চিম এশিয়ার সব ক’টি দেশের থেকে অনেকটাই বেশি কাজের এবং গভীর। প্রধানমন্ত্রীর ঝটিতি সফরই শুধু নয়, বিজেপি প্রাক্তন নেতাদের পয়গম্বর সংক্রান্ত মন্তব্যের জেরে যে ক্ষত হয়েছে, তা পূরণ করার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরশাহির সঙ্গে অদূর ভবিষ্যতে আরও অনেক সক্রিয় কূটনীতিতে জড়াবে ভারত, এমনটাই খবরবিদেশ মন্ত্রক সূত্রে। পাশাপাশি এটাও মনে করা হচ্ছে, অন্যান্য আরব দেশের সঙ্গে এই একই কাজ কিন্তুকঠিনতর হবে।
মাত্র চার মাস আগেই একটি ভিডিয়ো সম্মেলনের মাধ্যমে দু’টি দেশ সিইপিএ (কমপ্রিহেনসিভ ইকনমিক পার্টনারশিপ) চুক্তিতে সই করে। এই চুক্তির ফলে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ৬ হাজার কোটি ডলার থেকে বেড়ে পাঁচ বছরে ১০ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছাবে— এমনটাই জানাচ্ছেন দু দেশের সরকারপক্ষ। সব চেয়ে বড় কথা, এই চুক্তির ফলে ভারতেররফতানির পরিধি এক লাফে অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। মূল্যবান পাথর ও গহনা থেকে জামা কাপড়, জুতো থেকে ওষুধ ক্ষেত্রে ভারতের রফতানি ইতিমধ্যেই অনেকটা বেড়েছে। কূটনৈতিক শিবিরের মতে, ভারত এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহির ঘনিষ্ঠতা শুধু বাণিজ্যের অঙ্কে মাপলে ভুল হবে। ইসলামিক বিশ্বের কাছে পৌঁছতে বিজেপি সরকারকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সহায়তাও আবু ধাবি দিয়েছে।
সম্প্রতি সে দেশের প্রেসিডেন্ট মহম্মদ বিন জায়েদ আল নাহেন-এর সঙ্গে গভীর আলিঙ্গনাবদ্ধ হলেন মোদী। আবু ধাবিতে অনুষ্ঠিত ও আই সি বৈঠকে প্রথম বারের জন্য কোনও ভারতীয় বিদেশমন্ত্রীকে (প্রয়াত সুষমা স্বরাজ) আমন্ত্রণ জানিয়েছিল সংযুক্ত আরব আমিরশাহি। পরে সংবিধানের ৩৭০ ধারা তুলে নেওয়ার পরে জম্মু ও কাশ্মীর নিয়ে আন্তর্জাতিক বিতর্কের মধ্যে আগাগোড়া মোদী সরকারের পাশে ছিল এই আবু ধাবি-ই।
সব মিলিয়ে আরব বিশ্বে মোদীর এমন বন্ধু আর নেই। কূটনৈতিক শিবিরের মতে সেখানকার বিমানবন্দরে সে দেশের বর্তমান প্রেসিডেন্ট মহম্মদ বিন জায়েদ আল নাহেন-এর সঙ্গে গভীর আলিঙ্গনাবদ্ধ হওয়ার ছবিটি, পয়গম্বর বিতর্কের পরে অবশ্যই একটি ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে। কিন্তু শুধু আবু ধাবিতেই নয়, অন্য আরব দেশগুলিতে ভাবমুর্তি পুনরুদ্ধারের কাজটি যে আরও কঠিন হবে, তা ঘরোয়া ভাবে স্বীকার করছে সাউথ ব্লক।