রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।
রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের দশ মাস হয়ে গেল। এখনও পর্যন্ত ভূকৌশলগত রাজনীতিতে সরু দড়ির উপর ভারসাম্য বজায় রেখে চলছে নয়াদিল্লি। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, প্রত্যেক বছরের মতো ভারত-রাশিয়া বার্ষিক বৈঠকটি এ বার হচ্ছে না। ডিসেম্বরের শেষ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর যাওয়ার কথা ছিল মস্কো। এখনও পর্যন্ত পাওয়া খবর, যাচ্ছেন না মোদী। কারণ হিসাবে সময়াভাবের কথাই বলা হচ্ছে। যদিও কূটনৈতিক মহলের মতে, এই বৈঠকটি থেকে আপাতত সরে থাকার সিদ্ধান্ত ভারতের মূল ভারসাম্যের কূটনীতিরই অঙ্গ।
গত বছর ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে অর্থাৎ ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার মাস দুয়েক আগে নয়াদিল্লি এসেছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তখন অবশ্য ওই যুদ্ধের আঁচ বা আভাসও পাওয়া যায়নি। ভারত-রাশিয়া বার্ষিক সম্মেলনের নিয়মমাফিক এ বছর মোদীর যাওয়ার কথা ছিল সে দেশে।
সেপ্টেম্বরে সমরখন্দে এসসিও-র শীর্ষ সম্মেলনে পুতিনের মুখোমুখি হয়েছিলেন মোদী। তাঁকে জানিয়েছেন, ‘এই সময়টা যুদ্ধের সময় নয়।’ আমেরিকা তথা পশ্চিম বিশ্ব লুফে নিয়েছিল তাঁর এই মন্তব্য। বিভিন্ন মঞ্চে মোদী তথা ভারতের এই অবস্থানের প্রশংসা করাই শুধু নয়, সাম্প্রতিক জি ২০-র বালি সম্মেলনের যৌথ বিবৃতিতে মোদীর এই অবস্থানের হুবহু প্রতিফলনও দেখা গিয়েছে।
ভারত যুদ্ধ এবং হিংসা বন্ধের জন্য সর্বোচ্চ পর্যায়ে এই বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি ধারাবাহিক ভাবে সস্তায় অশোধিত তেল কিনেছে মস্কো থেকে। এখনও পর্যন্ত এই নিয়ে আমেরিকা তথা জি-৭ গোষ্ঠীর নিষেধাজ্ঞাকে তোয়াক্কা করা হয়নি। বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বারবার বলেছেন, ইউরোপ এক সন্ধ্যায় রাশিয়া থেকে যে তেল কেনে, ভারত তা কেনে এক মাসে। তা ছাড়া ভারতের মতো দেশে জ্বালানির চাহিদা এতটাই বিপুল যে, সে ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তা নিশ্চিত করাটা নয়াদিল্লির অগ্রাধিকার। শুধু জ্বালানিই নয়, ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার রয়েছে অর্ধ শতাব্দী প্রাচীন সামরিক-সম্পর্ক। আর তাই রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে একাধিক বার রাশিয়া-বিরোধী ভোটাভুটি থেকে বিরত থেকেছে মোদী সরকার।
কূটনৈতিক শিবিরের মতে, কেন্দ্র এটা ভাল করেই জানে, রাশিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ বহাল রেখে জ্বালানি এবং সামরিক সম্পর্ক এগোতে যথেষ্ট কৌশলের মধ্যে দিয়েই চলতে হবে। এই পরিস্থিতিতে এসসিও-র দ্বিপাক্ষিক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত পার্শ্ববৈঠক করা এক বিষয়, কিন্তু শীর্ষ দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করা অন্য। সেখানে যৌথ বিবৃতির প্রশ্ন উঠবে। ভারতের দায় থাকবে বিশ্বজোড়া খাদ্য, জ্বালানি এবং সারের সঙ্কটকে কড়া ভাষায় মস্কোর মাটিতে দাঁড়িয়ে তুলে ধরা। যৌথ বিবৃতিতে যুদ্ধ-বিরোধী বক্তব্যকে প্রাঞ্জল এবং কড়া ভাষায় বিবৃত করা। কিন্তু সে সব করতে যাওয়াটা নয়াদিল্লির কাছে যথেষ্ট বিড়ম্বনার। রাশিয়াকে প্রতিপদে প্রয়োজন নয়াদিল্লির। তাই পরিস্থিতির স্পর্শকাতরতাকে বিচার করে আপাতত এই বৈঠক পিছিয়ে দেওয়ার ভাবনাচিন্তাই করা হচ্ছে।