প্রতিবাদে পথে আটলান্টা টুইটার
বর্ণবৈষম্য, বিদেশিদের উপর ঘৃণা এবং সর্বোপরি নারীবিদ্বেষের প্রতিবাদে শনিবার জর্জিয়ার আটলান্টায় পথে নামলেন হাজার হাজার মানুষ। গত সপ্তাহে আটলান্টার তিনটি ম্যাসাজ পার্লার তথা স্পায়ে আট জনকে গুলি করে খুন করেছে ২১ বছরের শ্বেতাঙ্গ যুবক রবার্ট এ লং। তদন্তকারীরা অর্থনৈতিক উদ্বেগ ও যৌন আসক্তিকে কারণ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু ক্ষোভের পারদ চড়ছেই। নিহতদের মধ্যে ছ’জন এশীয় আমেরিকান মহিলা। অনেকেরই দাবি, এই ঘটনার পিছনে জাতি ও নারীবিদ্বেষ কাজ করেছে। আজ এই হত্যার প্রতিবাদেই আটলান্টার রাস্তায় বিক্ষোভে নামেন নানা বয়সি, নানা জাতি-ধর্ম-সম্প্রদায়ের মানুষ। শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ, জর্জিয়া স্টেট ক্যাপিটলের সামনের পার্কটিকে বেছে নিয়েছিলেন বিক্ষোভকারীরা। বিক্ষোভে যোগ দেন সেনেটর রাফায়েল ওয়ারনক, সেনেটর জন ওসফ এবং জর্জিয়ার প্রশাসনিক কর্তা বি গুয়েন। এর মধ্যে গুয়েন প্রথম ভিয়েতনামিজ় আমেরিকান, যিনি জর্জিয়া হাউসে কাজ করছেন। ওয়ারনক বলেন, ‘‘আমি আমার এশীয় ভাইবোনেদের বলতে চাই, আমরা সবাই পাশে আছি। আমরা সবাই একসঙ্গে আছি।’’ এ সময়ে সমস্বরে ওয়ারনককে সমর্থন জানায় ভিড়।
জর্জিয়ায় গত বছর বিদ্বেষমূলক অপরাধ রুখতে আইন আনা হয়েছে। কোনও অপরাধের কারণ যদি জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গভেদ, বিদেশি হওয়া বা যৌনতা, কিংবা শারীরিক প্রতিবন্ধকতা হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে অপরাধীকে অতিরিক্ত শাস্তি পেতে হবে। কিন্তু আইন এনেও এ ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ অনেকের। আটলান্টার ঘটনাতেই যেমন অভিযোগ, অপরাধীকে মানসিক অসুস্থ বলে চালানোর চেষ্টা করছে পুলিশ। তবে তদন্ত এখনও চলছে। গত কাল প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও বলেছেন, ‘‘ভিন্দেশিদের ঘৃণা করা ও জাতিবিদ্বেষের ঘটনাগুলিকে আমেরিকা আর মেনে নিতে পারে না।’’ জর্জিয়ার প্রশাসনিক কর্তা গুয়েন বলেন, ‘‘এ ধরনের অপরাধ রুখতে যা-ই করা হোক না কেন, যা-ই বলা হোক না কেন, আটকানো যাচ্ছে না কিছুতেই। এই ঘটনাটি বিশেষ করে, এশীয়দের উপর হামলা ছাড়া কিছু নয়।’’
আটলান্টার অন্য একটি অংশেও জমায়েত করেন কয়েকশো মানুষ। এশীয়দের হত্যার প্রতিবাদে স্লোগান তোলেন, ‘‘এশীয়দের প্রতি ঘৃণা বন্ধ হোক। আমাদের নিয়েই আমেরিকা।’’ এই সমাবেশের উদ্যোক্তা ২৩ বছর বয়সি ফ্র্যাঙ্কি লাগুনা। তাঁর পরিবার এক সময়ে তাইওয়ান থেকে আমেরিকায় চলে এসেছিল। ফ্র্যাঙ্কি অবশ্য আমেরিকাতেই জন্মেছেন। তিনি বলেন, ‘‘ছোট থেকে এই নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের শিকার হতে হতে আমি ক্লান্ত। আমি বদলাতে পারব না এই সত্যিটা। কী করব!’’ ২৪ বছর বয়সি পড়ুয়া বার্নাড ডং চিনা-বংশোদ্ভূত। তিনি বলেন, ‘‘এশীয়দের বেশির ভাগই এ নিয়ে চুপচাপ। কিন্তু সময় বদলাচ্ছে। চুপ থাকা যাবে না।’’ কৃষ্ণাঙ্গ যুবক ৩৮ বছর বয়সি ওটিস উইলসনের কথায়, ‘‘আমরা যে পরিস্থিতিতে, এশীয়রাও সেই একই অবস্থায় রয়েছে।’’