—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
দেশে পুজো মানেই কাশফুলের আগমন, মস্কোয় দুর্গাপুজো মানে ঝরে যাওয়ার আগে, শরতের ঝলমলে সোনালি রোদের রংয়ের মতো রাঙিয়ে যাওয়া গাছের পাতা। বড়ই সুন্দর সে প্রাকৃতিক শোভা! ৩৪ বছর আগে, সোভিয়েত ইউনিয়নের শেষ সময়ে, কিছু বাঙালির চেষ্টায় শুরু হওয়া দুর্গাপুজো, আজ মস্কোর সর্বভারতীয় এবং একমাত্র দুর্গোৎসব। বহু বাধা ও অসুবিধা অতিক্রম করে, ভারতীয় সম্প্রদায়ের প্রয়াসে ও মস্কো রামকৃষ্ণ মিশনের সাহায্যে, প্রতি বছর এই উৎসব উদ্যাপন করা সম্ভব হয়েছে।
রীতি অনুযায়ী সপ্তমীর সন্ধ্যায় রামকৃষ্ণ মিশন মহারাজের উপস্থিতিতে, প্রদীপ জেলে পুজো উদ্বোধন করেন মস্কোস্থিত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত। আর সন্ধ্যায় সংস্কৃতি উৎসবে যোগদান করেন স্থানীয় ভারতীয় ও রাশিয়ান শিল্পীরা। কাজের বা ছুটির দিন নির্বিশেষে, দেশের মতো এখানেও পাঁচ দিন তিথি মেনে পুজো হয়। তবে আমাদের দুর্গাপুজো শুধু বাঙালির নয়। বেশ কিছু রাশিয়ান এবং উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব ভারতের মানুষ এই পুজোয় যোগদান করেন এবং নিজেদের মতো রান্না করে ভোগ নিবেদন করেন। প্যান্ডেল করার দায়িত্বে থাকেন স্প্যানিশভাষী আমাদের এক কলম্বিয়ান জামাইবাবু। সুদূর দক্ষিণ আমেরিকায় এক পাদ্রীর ঘরে জন্মগ্রহণ করলেও আমাদের পুজো প্যান্ডেল তাঁর সৃজনশীলতায় সেজে ওঠে।
স্থানীয় আইন ও পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের পুজোর রীতি রপ্ত করে নিতে হয়। মহারাজের পরামর্শে বিল্ববৃক্ষ স্বরূপ একটি স্থানীয় ওক গাছের চারাকে জীবন্ত বৃক্ষ রূপে পুজো করা হয়। প্রতিমা প্রতি বছর দেশ থেকে নিয়ে আসা সম্ভব হয় না। তাই দশমীর পুজো ও বরণের শেষে প্রতিমা রাখা হয় বাক্স বন্ধ করে, আর মালা, পল্লব ও ফুল ভাসিয়ে দেওয়া
হয় নদীতে।
কোভিড-উত্তর পৃথিবী এবং রাশিয়ার বর্তমান পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বড় বাধা ছিল আয়োজনের জন্য স্থানীয় আইন মেনে জায়গা খুঁজে পাওয়া। গত ২৭ বছর ধরে মস্কোর পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটির হলে পুজো উদ্যাপিত হত, কিন্তু ২০২০ থেকে প্রথমে দু’বছর কোভিড অতিমারির জন্য, এবং তারপরে গত বছর যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে, মানুষের জমায়েতের উপরে সীমাবদ্ধতা থাকার জন্য পুজো সীমিত ভাবে করা হয়েছিল অন্য স্থানে। তিন বছর পরে এ বার মস্কোস্থিত কৃষ্ণ সোসাইটি মন্দিরের চত্বরে সর্বজনীন দুর্গোৎসব হতে চলেছে।
রাশিয়া-সহ বিশ্বের নানা প্রান্তে বর্তমান অস্থির অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে দুর্গোৎসব শান্তি ও সমৃদ্ধি আনুক— এই আমাদের কামনা।