মৃতদের উদ্দেশে শোকপ্রকাশ। ছবি: রয়টার্স।
রিচেল মেনন। ঠিকানা ম্যানচেস্টারের আরিয়ানা এলাকা। রিচেলের বাড়ির দরজাটা খোলাই আছে। বিছানায় তখনও রক্তের চাপ চাপ দাগ। সোমবার রাত থেকেই চোখের দুটো পাতা এক করতে পারেননি রিচেল। করবেন কী করে? দু’ঘরের দুটো বিছানায় দু’জনের চিকিৎসা চলছে। শোফায় বসিয়েও চলছে আহতের চিকিৎসা। রাতের আতঙ্ক এখনও শহরটাকে গ্রাস করে রেখেছে। কিন্তু, সন্ত্রাসের দাগ মুছে এখানেও সাহস আর মানবিকতার জয়। ঠিক যেমনটা ঘটেছিল প্যারিসের বাতা ক্লঁ বিস্ফোরণের পর। আতঙ্কিত মানুষদের জন্য দরজা খুলে দিয়েছিলেন স্থানীয়রা। ম্যানচেস্টারেও সোমবার রাতের ঘটনার পর রিচেলের মতো অনেকেই বাড়ির দরজা খুলে বাড়িয়ে দিয়েছেন সাহায্যের হাত।
মঙ্গলবার সকাল থেকে দু’রকমের ছবি ব্রিটেনের এই শহরটাতে। এক দিকে, আতঙ্ক মুছে স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার লড়াই। পাশাপাশি সন্ত্রাসে রক্তাক্ত মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানোর এক মানবিক ছবি।
আরও খবর: কনসার্ট কাঁপিয়ে বিস্ফোরণ, ম্যাঞ্চেস্টারে নিহত ২২, দেখুন আতঙ্কের ভিডিও
শুধু রিচেল নন। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সবাই। কোথাও চিকিৎসার জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে স্কুলের দরজা। কোথাও আবার পাঁচতারা হোটেলে আশ্রয় নিয়েছে ছোট্ট ছোট্ট ছেলেমেয়েরা। গতকাল রাতে জঙ্গি হামলার পর অনেকেই প্রিয়জনকে খুঁজে পাননি। সবারই চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। পুলিশ যেমন আতঙ্কিতদের সাহায্য করেছে, তেমনি পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন সাধারণ মানুষও। কনসার্টের বড় অংশের দর্শকই তরুণ-তরুণী বা কিশোর-কিশোরী। অভিভাবকের মতো সেই সব আতঙ্কিত ছেলেমেয়েদের আশ্রয় দিয়ে আগলে রেখেছেন রিচেলের মতো অনেকেই। পরে পুলিশ তাদের পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার দায়িত্ব নেয়।
প্যারিস আর ম্যানচেস্টার কিন্তু সত্যিই একটা জিনিস দেখাল। জনমানসে আতঙ্ক তৈরির জন্য বারবার নিরীহ মানুষদের জঘন্য ভাবে টার্গেট করছে সন্ত্রাসবাদীরা। কিন্তু সাধারণ মানুষ ভয় না পেয়ে বিন্নদের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছেন বারবারই।
একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছে। খোলা হয়েছে বেশ কয়েকটি জরুরিকালীন নম্বরও।
সোমবার রাতে ম্যানচেস্টার এরিনায় কনসার্ট চলাকালীন আত্মঘাতী জঙ্গির বিস্ফোরণে অন্তত ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। হামলার দায় নিয়েছে ইসলামিক স্টেট বা আইএস। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বছর তেইশের এক যুবককে আটকও করা হয়েছে।
প্রায় ৫০ জন আহত হয়েছেন বিস্ফোরণে। এঁদের অনেকেরই আঘাত গুরুতর।