ছবি: এএফপি।
চিনে থাকার ও চাকরি করার সুবাদে বড়দিন ও ইংরেজি নববর্ষের পরে আমরা প্রবাসীরাও একটা বাড়তি ছুটি পেয়ে যাই। সেটা চিনা বড়দিনের ছুটি। পরিসংখ্যান বলছে, এই সময়ে তিনশো কোটি মানুষ দেশের মধ্যে এবং চিন থেকে অন্য দেশে যাতায়াত করেন। অনেকে বেড়াতে যান, বহু চিনা প্রবাস থেকে দেশে ফেরেন, আমার মতো বহু বিদেশি চিন থেকে নিজেদের দেশে যায়, আবার কর্মসূত্রে শহরে থাকা গ্রামের চিনারা কয়েক দিনের ছুটি পেয়ে দেশের বাড়িতে ফেরেন।
যেমন আমাদের বেজিংয়ের বাড়ির পরিচারিকা শিউ লি। তাঁর স্কুলপড়ুয়া মেয়ে থাকে সিচুয়ান প্রদেশে, তার দাদু-দিদার কাছে। ছুটিতে মেয়ের কাছে গিয়েছিলেন শিউ। এখনও ফিরতে পারেননি। তাঁর মতো দৈনিক এবং মাসিক মজুরিতে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের পক্ষে এত দিন কর্মস্থল থেকে দূরে থাকা খুবই মুশকিলের। কিন্তু উপায় নেই। সরকারি নির্দেশে ৪ কোটি ৬০ লক্ষ মানুষ এখন কার্যত গৃহবন্দি। যে কোনও ধরনের আন্তঃশহর যান চলাচল প্রায় বন্ধ। ফলে নিজের এলাকা ছেড়ে কোথাও যাওয়া কারও পক্ষে খুবই মুশকিলের।
এই অচলাবস্থার মধ্যেও সরকারের তৎপরতা প্রশংসনীয়। প্রয়োজনে কোনও শহর ‘সিল’ করে দেওয়া (এখন পর্যন্ত ১৬টি শহরে কোয়ারেন্টাইন জারি হয়েছে) থেকে রাতারাতি বিশাল হাসপাতাল বানিয়ে ফেলা, করোনাভাইরাস সংক্রমিত অঞ্চলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস পৌঁছে দেওয়া— সব দিকেই কড়া নজর রয়েছে সরকারের। শহরের বিভিন্ন স্থানে স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েন করা হয়েছে। তাঁরা পথচারীদের থামিয়ে তাপমাত্রা পরীক্ষা করছেন।
করোনা ত্রাস
• মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬৩৬।
• আক্রান্ত ৩০০০০-এর বেশি।
• গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত ৬৯ জন।
• ৪৮০০ জন গুরুতর অবস্থায়।
স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়, বেজিংয়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। মোবাইল ফোন নির্মাতা সংস্থা অ্যাপল এবং বিশ্বের বৃহত্তম কফি চেন স্টারবাকস, দু’জনেই বেজিংয়-সহ গোটা চিনে তাদের প্রায় সব দোকানই বন্ধ রেখেছে। বেজিংয়ের প্রসিদ্ধ সানলিটুন এলাকার রেস্তরাঁ, পাব ও কফির দোকানে কিছু দুঃসাহসী ক্রেতা ছাড়া আর কারও দেখা পাওয়া ভার। সরকারি বাস এবং মেট্রো চলছে, চিনের উবার ‘দিদি’ও সক্রিয়। তবে শহরে ঢোকা-বেরোনোর উপরে নানা বিধিনিষেধ রয়েছে। উহানের মতো আমাদের শহরে জল বা খাবারের জোগানের কোনও অভাব না-থাকলেও অন্যান্য শহরেও মানুষজন বাড়িতে অন্তত এক সপ্তাহের খাবারদাবার মজুত রাখছেন।
আরও পড়ুন: মালালা-হামলায় দণ্ডিত জঙ্গি জেল ভেঙে উধাও
চিনা নববর্ষের ছুটি শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও আমার মতো অসংখ্য প্রবাসী চিনে ফিরে যেতে পারছেন না। ওখানে যাঁরা রয়েছেন তাঁদের কাছ থেকে শুনেছি, স্কুল-কলেজ-দোকানপাট, সবই চলছে অনলাইনে। আর আমরা অপেক্ষায় রয়েছি, কত দিনে কর্মস্থলে ফিরে দৈনন্দিনতায় ফের গা ভাসাতে পারব!
লেখক বেজিংয়ে কর্মরত, এখন কলকাতায়