পর পর জঙ্গি হামলার পর আইফেল টাওয়ার চত্বরে মোতায়েন সেনা। ছবি: রয়টার্স।
ভয়াবহ সন্ত্রাসি হামলায় রক্তাক্ত প্যারিস। বিধ্বস্ত ইউরোপের অন্যতম সাংস্কৃতিক প্রাণকেন্দ্র। এই বছরে দ্বিতীয় বার। জানুয়ারিতে শার্লি এবদোর দফতর রক্তাক্ত হয়েছিল। শুক্রবার রাতে গোটা প্যারিসে সেই ছবির পুনরাবৃত্তি। শুধু পুনরাবৃত্তি বললে ভুল হবে। এ বারের হামলা পরিসরে আরও অনেক অনেক বড়।
অন্তত ১২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে পর পর ছ’টি হামলায়। জখম প্রায় ২০০-র কাছাকাছি। শুক্রবার সন্ধ্যায় যখন হামলা হচ্ছে প্যারিসে, তখন উইকএন্ডের স্বাভাবিক উল্লাসে বুঁদ গোটা শহর। আচমকা বিস্ফোরণের শব্দে থেমে যায় ফ্রান্স-জার্মানি প্রীতি ফুটবল ম্যাচ। গোটা স্টেডিয়ামে চাঞ্চল্য ছড়ায়। জানা যায়, স্টেডিয়ামের বাইরে দুই আত্মঘাতী জঙ্গি তীব্র বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। তার পর খবর আসতে শুরু করে শহরের নানা প্রান্তে জঙ্গি হামলার। বাতাক্লাঁ কনসার্ট হলে গ্রেনেড হামলা চালায় জঙ্গিরা। তার পর গুলি চালাতে চালাতে ঢুকে পড়ে হলের ভিতরে। ভিতরে থাকা প্রায় ১৮০ জনকে পণবন্দি বানায় জঙ্গিরা। ফ্রান্সের নিরাপত্তা বাহিনী কনসার্ট হলে ঢুকতেই পণবন্দিদের উপর গুলি চালাতে শুরু করে জঙ্গিরা। লড়াই বেশি ক্ষণ স্থায়ী হয়নি বাতাক্লাঁয়। তিন জঙ্গি নিজেদের উড়িয়ে দেয় আত্মঘাতী বিস্ফোরণে। চতুর্থ জঙ্গির মৃত্যু হয় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে। তবে তত ক্ষণে প্রাণ গিয়েছে প্রায় ১০০ জনের। বাস্তিল সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় পানশালা এবং রেস্তঁরাতেও হামলা করেছে জঙ্গিরা। জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে দেড় হাজার সেনা কর্মীকে লড়াইতে নামিয়ে দিয়েছে ফরাসি সরকার।
লড়াই শেষ হয় প্রায় মধ্যরাতে। সরকারের তরফে জানানো হয়, হামলাকারী ৮ জঙ্গিই নিকেশ। তবে তার মধ্যে দগদগে ক্ষত তৈরি হয়ে গিয়েছে প্যারিসের বুকে। নিহত অন্তত ১২৭ জন। আহত প্রায় ২০০। গোটা বিশ্ব এই জঘন্য হামলার নিন্দায় সরব। আমেরিকা, ব্রিটেন, জার্মানি, চিন, জাপান, কানাডা, সৌদি আরব, ইরান-সহ বিভিন্ন দেশ এই হামলার তীব্র নিন্দা করে। কড়া নিন্দায় সরব ভারতও। প্যারিসে বসবাসকারী ভারতীয়রা অবশ্য অক্ষতই। বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ জানান, এই জঙ্গি হামলায় কোনও ভারতীয়ের ক্ষতি হয়নি। সকলেই সুরক্ষিত। এই বিপদে সব রকম ভাবে ফ্রান্সের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে ভারত সরকার।
ফ্রান্স কিন্তু কঠোর পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ওলাঁ জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে বলেন, এই দুর্যোগে দেশের মানুষকে শক্ত থাকতে হবে। ফ্রান্স এর যোগ্য জবাব দেবে। প্রেসিডেন্টের কথায়, আইএস জঙ্গিরা ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। জঙ্গিদের নিশ্চিহ্ন করতে ফ্রান্স নির্মম আঘাত হানবে।
প্যারিসে হামলার কয়েক ঘণ্টা পরই আইএস ঘটনার দায় স্বীকার করে। জানিয়ে দেয়, এখন থেকে ফ্রান্সই তাদের আক্রমণের মূল লক্ষ্য হবে। সিরিয়ায় আইএস বিরোধী অভিযানে ফ্রান্সের অংশগ্রহণের জবাব এই হামলা। আইএস এই দায় স্বীকার করার অনেক আগেই অবশ্য প্রেসিডেন্ট ওলাঁ জানিয়ে দিয়েছিলেন, এই কাজ আইএস-এরই। দেশের বাইরে থেকে এই হামলার পরিকল্পনা তৈরি হয়েছে বলেও তিনি জানান। প্যারিসে হামলার সঙ্গে জড়িত প্রত্যেককে কঠিন দিনের জন্য প্রস্তুত হওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ফ্রান্স। ফরাসি প্রেসিডেন্টের চ্যালেঞ্জ, এই সন্ত্রাসের মোকাবিলা কীভাবে করতে হয় তা ফ্রান্স জানে। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে ফ্রান্স আরও এক বার নিজেদের সেনাবাহিনীকে ময়দানে নামাতে চলেছে বলেও তিনি ঘোষণা করেছেন। এ দিনই ফ্রান্স এয়ারলাইনের এক বিমানকে উদ্দেশ্য করে টুইটারে হুমকি দেওয়া হয়। আর্মস্টারডামে বিমানটির জরুরি অবতরণ করানো হয়।