ভারতের চোখে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ অপরাধী। মুম্বই হামলার প্রধান চক্রী সেই হাফিজ সইদকে নির্দোষ আখ্যা দিয়ে কার্যত শংসাপত্র দিলেন ভারতে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার আব্দুল বাসিত।
দিল্লিতে আজ বাসিত দাবি করেন, পাকিস্তানের আদালত হাফিজ সইদকে মুক্তি দিয়েছে। তা ছাড়া হাফিজের বিরুদ্ধে কোনও ফৌজদারি মামলাও সে দেশের আদালতে বকেয়া নেই। পাক প্রশাসন ওই দাবি করলেও হাফিজ প্রশ্নে নিজের অবস্থান থেকে সরছে না সাউথ ব্লক। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র আকবরউদ্দিন বলেন, “হাফিজ ভারতের আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। তবু তাকে গ্রেফতার করেনি পাক প্রশাসন।”
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, ভারতে সন্ত্রাসের কাজে মদত দিতে এখন সব থেকে সক্রিয় জামাত-উদ-দাওয়ার প্রধান হাফিজ সইদ। এপ্রিল ও মে মাসে এই সন্ত্রাসবাদীকে পাকিস্তানের সিন্ধু সীমান্তের ইসলামকোট, মীরপুরখাস এবং খানপুর এলাকাতে দেখা গিয়েছে। এর উল্টো দিকেই রয়েছে ভারতের জৈসলমের সীমান্ত। সম্প্রতি পাক অধিকৃত কাশ্মীরেও সইদকে দেখা গিয়েছে বলে তথ্যপ্রমাণ পেয়েছেন গোয়েন্দারা। তখনই ভারতীয় গোয়েন্দারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে জানায়, জঙ্গি সংগ্রহে তৎপর হয়েছেন সইদ। শীতের আগেই এদের ভারতে ঢোকানোর ছক কষছে সইদ ও পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই।
বাস্তবে হয়েছেও তাই। অতীতের সমস্ত নজির ভেঙে গত জুলাই-অগস্ট মাসে ভারত-পাক সীমান্তের জম্মু ডিভিশনে লাগাতার গুলি ও মর্টার ছোড়া শুরু করে পাকবাহিনী। সেনা ও গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, জঙ্গি অনুপ্রবেশের লক্ষ্যেই টানা এক মাস হামলা চালিয়ে যাওয়া হয়। এর পিছনে সইদের হাত রয়েছে বলে নিশ্চিত ভারতীয় গোয়েন্দারা। তবে জঙ্গি অনুপ্রবেশ ও সন্ত্রাসে মদত দিতেই সইদ যে ভারত-পাক সীমান্তে গিয়েছিলেন, সেই দাবি আজ যথারীতি খারিজ করে দেন পাক হাইকমিশনার। বাসিতের কথায়, “সইদ পাকিস্তানের নাগরিক। তিনি সে দেশের যে কোনও প্রান্তে যেতে পারেন। তা ছাড়া পাক আদালত তাকে মুক্তি দিয়েছে। তার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগও আদালতে বকেয়া নেই।”
মার্কিন প্রশাসন সম্প্রতি জামাতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পরে, ‘ফলাহে ইনসানিয়ত ফাউন্ডেশন’ (এফআইএফ) নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ব্যানারে সিন্ধ এলাকায় কাজ শুরু করেন হাফিজ। বর্তমানে ওই সংগঠন সক্রিয় রয়েছে বন্যবিধ্বস্ত পাক অধিকৃত কাশ্মীরে। সংগঠনটি কার্যত জামাতের নামান্তর বলেই দাবি ভারতীয় গোয়েন্দাদের।
যদিও সেই অভিযোগ খারিজ করে বাসিত বলেছেন, “ভয়ঙ্কর বন্যায় দু’দেশের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি হাতে-হাত মিলিয়ে কাজ করছে। ফলে সমালোচনা না করে একে দু’দেশের জন্য ইতিবাচক দিক হিসেবেই দেখা উচিত।” তবে বিজেপি মুখপাত্র সম্বিত পাত্রের মতে, “হাফিজ সইদের ষড়যন্ত্রের কারণে মুম্বইয়ে ১৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। বন্যায় কিছু মানুষকে সাহায্য করলেই সেই পাপ ধুয়ে যাবে না।”