—প্রতীকী ছবি।
ধনসম্পদের বণ্টনে নজিরবিহীন বৈষম্যের মুখে পৃথিবী। এ বিশ্বের অর্ধেক জনসংখ্যার কাছে অর্থাৎ প্রায় ৩৬০ কোটি মানুষের কাছে যে পরিমাণ অর্থ বা সম্পত্তি রয়েছে, মাত্র ৮ জন ধনকুবেরের কাছেই এই মুহূর্তে সেই পরিমাণ সম্পত্তি রয়েছে। ভারত, চিন, ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কায় এই বৈষম্য আরও প্রবল। ভারতীয় জনসংখ্যার ৭০ শতাংশের কাছে অর্থাৎ প্রায় ৯০ কোটি মানুষের কাছে যে পরিমাণ ধনসম্পত্তি রয়েছে, মাত্র ৫৭ জন ভারতীয় ধনকুবেরই এখন সেই পরিমাণ ধনসম্পদের মালিক।
ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামের (ডব্লুইএফ) বার্ষিক সভা শুরু হওয়ার আগে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অক্সফ্যাম এই সমীক্ষা প্রকাশ করেছে। রিপোর্ট বলছে, এই পরিমাণ ধনবৈষম্য পৃথিবীতে আগে কখনও দেখা যায়নি।
ধনবণ্টনের সমীক্ষা করতে গিয়ে যে তথ্য অক্সফ্যামের হাতে এসেছে, সেই তথ্যকে মানবাধিকার সংগঠনটির তরফে ‘অশ্লীল’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক জনসংখ্যাকে দু’ভাগে ভাগ করলে উপার্জন বা ধনসম্পদের নিরিখে বিশ্বের যে অর্ধেক মানুষ পিছনের সারিতে থাকবেন, সেই ৩৬০ কোটি মানুষের মোট সম্পদের পরিমাণ যা, মাত্র ৮ জন ধনকুবেরের হাতেই এখন সেই পরিমাণ সম্পদ রয়েছে। এই পরিস্থিতির তীব্র নিন্দা করেছে মানবাধিকার সংগঠনটি। সমীক্ষায় আরও দেখা গিয়েছে, পৃথিবীতে মোট সম্পদের পরিমাণ যা, তার ৫০ শতাংশই রয়েছে বিশ্ব জনসংখ্যার মাত্র ১ শতাংশ মানুষের হাতে। পৃথিবীতে মোট সম্পদের পরিমাণ ২৫৫ লক্ষ ৭০ হাজার কোটি ডলার। আর বিশ্ব জনসংখ্যা বর্তমানে ৭৫০ কোটির আশেপাশে। এঁদের মধ্যে মাত্র ৭ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষের হাতে প্রায় ১২৮ লক্ষ কোটি ডলার রয়েছে। অবশিষ্ট ১২৮ লক্ষ কোটি ডলারের মতো সম্পদ রয়েছে বাকি প্রায় ৭৪৩ কোটি মানুষের হাতে।
এটা অবশ্য আন্তর্জাতিক গড়। দেশভেদে এই গড় আলাদা আলাদা। ভারতে বৈষম্যের ছবিটা আরও মারাত্মক। সমীক্ষকরা জানাচ্ছেন। ভারতের মোট সম্পদের ৫৮ শতাংশই রয়েছে দেশের জনসংখ্যার মাত্র ১ শতাংশের হাতে। ভারতের জনসংখ্যা ১৩০ কোটির কাছাকাছি। আর ভারতের মোট সম্পদের পরিমাণ ৩ লক্ষ ১০ হাজার কোটি ডলারের মতো। অক্সফ্যামের হিসেব বলছে ভারতের সবচেয়ে ধনী ১ কোটি ৩০ লক্ষ মানুষের কাছে ১ লক্ষ ৫০ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি সম্পদ রয়েছে।
আরও পড়ুন: প্রথম লক্ষ্য হোক ঋণ শোধ
ভারতে ৮৪ জন বিলিয়নেয়ারের কথা অক্সফ্যামের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। এই ৮৪ জনই ২৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের মালিক। প্রথম স্থানে মুকেশ অম্বানি। তাঁর সম্পদের পরিমাণ ১ হাজার ৯৩০ কোটি ডলার। দ্বিতীয় স্থানে সানফার্মার দিলীপ সাঙ্ঘভি, তৃতীয় উইপ্রোর আজিম প্রেমজি। তাঁদের সম্পদের পরিমাণ যথাক্রমে ১ হাজার ৬৭০ কোটি ডলার এবং ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। আর গোটা বিশ্বে এই মুহূর্তে প্রথম স্থানে সেই বিল বিল গেটসই। দ্বিতীয় স্থানে অ্যামানসিও ওর্তেগা এবং তৃতীয় ওয়ারেন বাফেট। এই তিন জনের হাতে রয়েছে যথাক্রমে ৭ হাজার ৫০০ কোটি ডলার, ৬ হাজার ৭০০ কোটি ডলার এবং ৬ হাজার ৮০ কোটি ডলার।
গত দু’দশক ধরে পৃথিবীর এক বিরাট এবং জনবহুল অংশে সবচেয়ে ধনী শ্রেণির আয় ক্রমশ বেড়েছে এবং সবচেয়ে দরিদ্র শ্রেণির আয় ক্রমশ কমেছে বলে সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে। অক্সফ্যামের রিপোর্ট বলছে, চিন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ, লাওস এবং শ্রীলঙ্কায় গত ২০ বছরে জনসংখ্যার সবচেয়ে ধনী ১০ শতাংশ মানুষের উপার্জন আগের চেয়ে ১৫ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। অন্য দিকে সবচেয়ে দরিদ্র ১০ শতাংশ মানুষের আয় ১৫ শতাংশেরও বেশি হারে কমে গিয়েছে। ধনীর আয় ক্রমশ বেড়ে যাওয়া এবং দরিদ্রের আয় আগের চেয়েও কমে যাওয়ার জেরেই পৃথিবী আজ এই মারাত্মক ধনবৈষম্যের মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে বলে অক্সফ্যাম জানিয়েছে। ‘অ্যান ইকনমি ফর দ্য নাইটিনাইন পারসেন্ট’ নামের ওই সমীক্ষা রিপোর্টে মানবাধিকার সংগঠনটি দাবি তুলেছে, এ বার গোটা বিশ্ব জুড়ে একটা মানবিক অর্থব্যবস্থা গড়ে তোলার সময় হয়েছে।