গাজ়ায় ধ্বংসস্তূপের মাঝেই সন্তানকে নিয়ে হাঁটছেন এক মা। ছবি: রয়টার্স।
ঠিক এক বছর আগে দক্ষিণ ইজ়রায়েলের শহরে হামলা চালিয়েছিল প্যালেস্টাইনি সশস্ত্র সংগঠন হামাস। এই হামলার জেরে মৃত্যু হয়েছিল প্রায় ১১০০ জনের। শুধু তা-ই নয়, ২৫০ জন ইজ়রায়েলি নাগরিককে যুদ্ধবন্দিও করেছিল হামাস। তার পর গাজ়া ভূখণ্ডকে হামাসমুক্ত করতে পাল্টা অভিযান শুরু করে ইজ়রায়েল। গত এক বছর ধরে যুদ্ধের তীব্রতার তারতম্য ঘটলেও মৃত্যুমিছিল থেমে থাকেনি।
বুধবার ইজ়রায়েলে হামাস-হামলার এক বছর পূর্ণ হল। এক বছর আগের সেই দিনটিকে ‘উজ্জ্বল’ বলে অভিহিত করেছে হামাস। রবিবার কাতারে বসবাসকারী হামাস নেতা খলিল অল-হায়া একটি ভিডিয়ো-বার্তায় বলেন, “আমরাই সব দিক থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ, গোটা অঞ্চলে ইজ়রায়েলের প্রতিষ্ঠা করা এই ধারণাকে চুরমার করে দিয়েছিল গত ৭ অক্টোবরের অভিযান।”
নিজের দেশে হামাস-হানার এক বছর পূর্তিতে সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করেন ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুও। তিনি লেখেন, “এক বছর আগে আমরা ভয়ঙ্কর ক্ষতির মুখে পড়েছিলাম। গত ১২ মাসে আমরা বাস্তব পরিস্থিতিকে সম্পূর্ণ ভাবে বদলে দিয়েছি।” সোমবার লেবানন সীমান্ত পরিদর্শন করেন নেতানিয়াহু। সেখানে ইজ়রায়েলি সেনাদের সঙ্গে কথাও বলেন তিনি। সোমবারও লেবাননের রাজধানী বেরুটে ইরানের সমর্থনপুষ্ট সশস্ত্র সংগঠন হিজ়বুল্লার ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালায় ইজ়রায়েল। পাল্টা ইজ়রায়েলের তৃতীয় বৃহত্তম শহর হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় হিজ়বুল্লা। দু’টি ঘটনাতেই হতাহতের খবর এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
গত এক বছরে গাজ়ার নিরীহ মহিলা এবং শিশুদের মৃত্যু ঘিরে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে ইজ়রায়েলকে। কেবল গাজ়াতেই গত এক বছরে ৪১ হাজার জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে সেখানকার স্বাস্থ্য দফতর। সম্প্রতি এই সংঘাত অন্য দিকে মোড় নিয়েছে। হামাসের পাশাপাশি ইরানের সমর্থনপুষ্ট আর এক সশস্ত্র সংগঠন হিজ়বুল্লা এবং ইয়েমেনের হুথি ইজ়রায়েলের বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছে।
গোটা বিশ্বে বিভিন্ন দেশের কাছে প্রশ্নের মুখে পড়লেও ইজ়রায়েলকে অস্ত্র, পরিকাঠামো দিয়ে সাহায্য জুগিয়ে যাচ্ছে পুরনো মিত্র আমেরিকা। হোয়াইট হাউস বার বারই ইজ়রায়েলের ‘নিরাপত্তার অধিকারের’ বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। প্রসঙ্গত, ইজ়রায়েল মনে করে পশ্চিম এশিয়ায় তাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে পারে ইরান। অন্য দিকে, ইরান পশ্চিম এশিয়ার মানচিত্র থেকে ইহুদিপ্রধান দেশটিকেই লোপাট করতে চায়। পাশাপাশি পশ্চিম এশিয়ার রাজনীতি এবং অর্থনীতিতে আমেরিকার প্রভাব খর্বও করতে চায় তেহরান। পশ্চিম এশিয়ার এই টালমাটাল পরিস্থিতিতে নয়াদিল্লি মোটের উপর মধ্যপন্থাই অবলম্বন করেছে। গত বছর ৭ অক্টোবরের হামলার পর যে ক’টি দেশ সন্ত্রাসবাদী হানার নিন্দা করেছিল, ভারত তাদের মধ্যে অন্যতম। পরে অবশ্য গাজ়ার পরিস্থিতি নিয়েও সরব হয়েছে ভারত। সংঘাত ছেড়ে দু’পক্ষকেই আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার।