— প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
কম দামের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা জেনারেটিভ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) মডেল ‘ডিপসিক-আর১’ তৈরি করে বিশ্বে সাড়া ফেলে দিয়েছে চিন। এর ফলে বছরের প্রথমেই বড় ধাক্কা খেল আমেরিকার শেয়ার বাজার। সোমবার ‘ডিপসিক-আর১’ আত্মপ্রকাশের পরেই আমেরিকা তথা বিশ্বের প্রথম সারির এআই চিপ প্রস্তুতকারক সংস্থা ‘এনভিডিয়া’র শেয়ার প্রায় ১৭ শতাংশ পড়ে গিয়েছে। এক দিনে মোট ক্ষতির পরিমাণ গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৬০ হাজার কোটি ডলারে, ভারতীয় মুদ্রার হিসাবে যা প্রায় ৫০ লক্ষ কোটি টাকা! বিশ্লেষকদের বক্তব্য, এ ভাবে চলতে থাকলে শীঘ্রই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বাজারে আমেরিকার একচেটিয়া আধিপত্যে থাবা বসাবে চিন।
চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি নতুন ‘ওপেন সোর্স রিজ়নিং মডেল’ বা বিনামূল্যে ব্যবহারযোগ্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি চালু করেছে চিনা সংস্থা ‘ডিপসিক’। এরই নাম দেওয়া হয়েছে ‘ডিপসিক-আর১’। একই ধাঁচের আর একটি বহুল ব্যবহৃত প্রযুক্তি হল ওপেনএআইয়ের ‘চ্যাটজিপিটি’। তবে, চ্যাটজিপিটি তৈরি করতে আমেরিকার তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাটির যত খরচ হয়েছে, তার চেয়ে অনেক কম টাকায় ‘ডিপসিক-আর১’ বানিয়ে ফেলেছে চিন। তাই অনেকেই মনে করছেন, এআইয়ের প্রতিযোগিতার বাজারে অদূর ভবিষ্যতে আমেরিকাকে টেক্কা দেবে চিন।
ডিপসিক আসার দিনই আমেরিকার তাবড় সংস্থাগুলির শেয়ার হুড়মুড়িয়ে পড়ে গিয়েছে। সংবাদ সংস্থা ব্লুমবার্গের একটি প্রতিবেদন বলেছে, এক দিনে প্রায় ৬০ হাজার কোটি ডলার পতনের মুখ দেখেছে আমেরিকার এআই চিপ প্রস্তুতকারক সংস্থা ‘এনভিডিয়া’। ইতিহাসে এর আগে বাজারমূল্যে এত জোরালো পতন দেখেনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বাজার। মাথায় হাত পড়েছে আমেরিকার সদ্যনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পেরও। ট্রাম্প জানিয়েছেন, ডিপসিক বাজারে যে ঝড় তুলেছে, তা দেখে আমেরিকান সংস্থাগুলির ঘুম ভাঙা উচিত। আমেরিকার সামনে যে কঠিন প্রতিযোগিতার সময় আসছে, ট্রাম্পের কথাতেই স্পষ্ট আভাস পাওয়া গিয়েছে তার।
এত দিন তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রের বাজারে অবিসংবাদিত নেতা হিসাবে প্রথমেই আসত আমেরিকার নাম। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দুনিয়ায় রাজত্ব চালানো ওপেনএআই, গুগ্ল, মেটা বা মাইক্রোসফ্টের মতো বহুজাতিক নানা সংস্থার জন্মও আমেরিকাতেই। কিন্তু ‘ডিপসিক-আর১’ আসার দিনেই বড়সড় পতনের মুখ দেখেছে আমেরিকার শেয়ার বাজার। ব্রডকমের ১৭.৪ শতাংশ, মাইক্রোসফ্টের ২.১৪ শতাংশ, গুগ্লের ৪ শতাংশ এবং ন্যাসড্যাকের শেয়ার প্রায় ৩ শতাংশ পড়ে গিয়েছে।
শুধু তা-ই নয়, নতুন এআই প্রযুক্তি এনে রীতিমতো হইচই ফেলে দেওয়া ডিপসিকের বাজেটেও রয়েছে চমক। চিনের দাবি, এর আগে ‘ডিপসিক-ভি৩’ নামের একটি এআই প্রযুক্তিনির্ভর ‘বট’ তৈরি করতে মাত্র ৫৬ লক্ষ ডলার খরচ করেছিল চিন, ভারতীয় মুদ্রার হিসাবে যার মূল্য মাত্র পাঁচ কোটি টাকার কাছাকাছি। অন্য দিকে, ওপেনএআইয়ের ‘জিপিটি-৪’ মডেলের জন্য এখনও পর্যন্ত প্রায় ১০ কোটি ডলার ব্যয় হয়েছে। ফলে আমেরিকার এআই সাম্রাজ্যে অচিরেই চিড় ধরাতে পারবে চিন, এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। চোখে পড়ার মতো বিষয় হল, বর্তমানে চিনকে এনভিডিয়া এআই চিপ রফতানি বন্ধ রেখেছে আমেরিকা। কিন্তু তাতে ডিপসিকের সাফল্যে এতটুকুও ভাটা পড়েনি! উল্টে আমেরিকাকেই পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে চিন।