বিজ্ঞানী বেঙ্কি রামকৃষ্ণন।
করোনাভাইরাস অতিমারির মোকাবিলায় বিশ্বের অনেক দেশের সরকারই এখন মাস্ককে বাধ্যতামূলক করার পথে হেঁটেছে। বরিস জনসনের সরকার এ বিষয়ে নির্দিষ্ট নিয়ম জারি না-করলেও সবাইকে মুখাবরণ পরার ‘পরামর্শ’ দিয়ে রেখেছে। বিষয়টি নিয়ে এ দেশে যথেষ্ট বিতর্কও হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে মাস্কের পক্ষেই সওয়াল করলেন বিজ্ঞানী বেঙ্কি রামকৃষ্ণন।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই নোবেলজয়ী বর্তমানে রয়্যাল সোসাইটির প্রেসিডেন্ট। সেই সঙ্গে ব্রিটিশ সরকারের আপৎকালীন বৈজ্ঞানিক প্যানেলেরও সদস্য তিনি। সম্প্রতি একটি ব্রিটিশ চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ রুখতে মাস্ক অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা নিয়েছে। রয়্যাল সোসাইটির করা একটি সমীক্ষাতেই এই তথ্য উঠে এসেছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানী। রামকৃষ্ণন জানাচ্ছেন, গণপরিবহণ হোক বা ছোট দোকান, যেখানে একসঙ্গে পাশাপাশি অনেক মানুষের জমায়েতের সম্ভাবনা রয়েছে, সে সব জায়গায় মাস্ক পরা অবশ্যই প্রয়োজন। তাঁর কথায়, “আমরা দেখেছি, করোনায় আক্রান্ত কোনও রোগীর মুখের লালারস বা কোনও সংক্রমিত এলাকা স্পর্শ করলে অন্য মানুষ সংক্রমিত হচ্ছেন। মাস্ক পরা থাকলে চট করে কোনও সুস্থ মানুষের নাকে বা মুখে আক্রান্তের থুতু যাওয়া সম্ভব নয়। সুতরাং মাস্ক পরলে অনেকটাই নিরাপদে থাকা যায়।”
কোনও আক্রান্ত ব্যক্তি মাস্ক পরলে তাঁর শরীরে কি বেশি করে সংক্রমিত লালারস চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকছে? বিজ্ঞানী বলছেন, এটি সম্পূর্ণ ভুল যুক্তি। যিনি আগে থেকেই সংক্রমিত, তাঁর শরীরে নতুন করে সংক্রমণ প্রবেশের ভয় থাকে না। সাক্ষাৎকারে বিজ্ঞানীকে আরও প্রশ্ন করা হয়, মাস্ক পরলে অনেকেই নাকি সতর্ক থাকতে ভুলে যাচ্ছেন, বারবার হাত ধুতে ভুলে যাচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে মাস্ক পরার উপকারিতা কোথায়? এই যুক্তিও খণ্ডন করেছেন রামকৃষ্ণন। তাঁর বক্তব্য, মাস্ক মানুষকে আরও বেশি করে সচেতন করে তুলবে। মাস্ক পরার ফলে সংক্রমণ বেড়েছে, এমন তথ্য তাঁরা কোথাও পাননি বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানী। তাঁর আরও বক্তব্য, মাস্কের সাহায্যে অনেক দেশই সংক্রমণের হার কমাতে সক্ষম হয়েছে। বাড়িতে তৈরি মাস্ক পরার পক্ষে সওয়াল করেছেন রামকৃষ্ণন। জানিয়েছেন, শ্বাস নিতে সুবিধে হয়, এমন মাস্কই সকলের পরা উচিত।
সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছিল বিজ্ঞানের সঙ্গে রাজনীতির দ্বন্দ্বের প্রসঙ্গও। বিতর্কে যেতে চাননি বেঙ্কি। তাঁর বক্তব্য, “বৈজ্ঞানিক উপদেশও সরকারের নীতির একটা অংশ। বিভিন্ন দেশের মধ্যে তার তারতম্য রয়েছে। এই অতিমারির মোকবিলায় জরুরি ভিত্তিতে কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের কথাও সরকারের শোনা উচিত।”