—ফাইল চিত্র।
মাইকেল রবার্ট ক্রেমার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক— গেটস প্রফেসর অব ডেভেলপিং সোসাইটিজ়। সামাজিক পরীক্ষানিরীক্ষার ভিত্তিতে উন্নয়নের অর্থনীতি চর্চার যে ধারাটি গত দেড় বা দুই দশকে জোরদার হয়েছে, তিনি সেই ধারার অগ্রণী গবেষক। ইনোভেশনস ফর পভার্টি অ্যাকশন নামক একটি গবেষণা সংস্থার সঙ্গে তিনি যুক্ত, যে সংস্থার অন্যতম প্রধান সহযোগী হল এমআইটি’র আবদুল লতিফ জামিল পভার্টি অ্যাকশন ল্যাব (জে-প্যাল), যার দুই যুগ্ম-প্রতিষ্ঠাতা হলেন এ বারের অন্য দুই নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং এস্থার দুফলো।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কানসাস প্রদেশে বড় হয়েছেন ক্রেমার, হার্ভার্ডেই তাঁর উচ্চশিক্ষার শুরু। দরিদ্র সমাজের উন্নয়নে অর্থনীতির ভূমিকার প্রতি তাঁর আকর্ষণের পিছনে একটা বড় অনুঘটক ছিল দক্ষিণ এশিয়া এবং কেনিয়ায় কিছু দিন বসবাসের অভিজ্ঞতা। বিশেষত, কেনিয়ায় অত্যন্ত দরিদ্র অঞ্চলের গ্রামে স্কুল তৈরি করা ও সেখানে পড়ানোর অভিজ্ঞতা তাঁকে দারিদ্রের অর্থনীতি নিয়ে গবেষণার প্রেরণা দিয়েছিল। র্যান্ডমাইজ়ড কন্ট্রোল ট্রায়াল (আরসিটি) নামক পদ্ধতির ভিত্তিতে পরীক্ষামূলক অর্থনীতির সূত্র ধরে সেই গবেষণার পথে এগিয়ে যান তিনি। সাম্প্রতিক কালে তিনি উন্নয়নশীল দুনিয়ার যে সব সমস্যা নিয়ে কাজ করেছেন, সেগুলির মধ্যে আছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও জল সরবরাহ। এই সব ক্ষেত্রে সরকারি নীতি কী হওয়া উচিত, তা নির্ধারণ করার জন্য পরীক্ষামূলক অর্থনীতি প্রয়োগ করেছেন ক্রেমার।
২০১২ সালে একটি প্রবন্ধে ভারতের ভূতপূর্ব মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যম লিখেছিলেন ক্রেমার সম্পর্কে তাঁর সহ-নোবেলজয়ী অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি মন্তব্যের কথা। অভিজিতের মতে, অর্থনীতিবিদদের মাথায় কোনও ধারণা এলে তাঁরা অনেক সময়েই মনে করেন, এটা নিশ্চয়ই ঠিক নয়, কারণ তা হলে অন্য কেউ না কেউ এটা ভাবতেন এবং কাজে লাগানোর চেষ্টা করতেন।
কিন্তু মাইকেল ক্রেমারের মাথায় কোনও ধারণা এলে ‘ও সঙ্গে সঙ্গে ভাবতে শুরু করে, কী করে সেটা কার্যকর করা যায়।’
এই প্রত্যয় এবং তৎপরতার জোরেই ক্রেমার নিউমোনিয়া জাতীয় রোগের জীবাণুর প্রতিষেধক তৈরির কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অ্যাডভান্স মার্কেট কমিটমেন্ট (এএমসি) নামে এক নতুন বন্দোবস্ত চালু করাতে পেরেছিলেন। দরিদ্র দেশে যে সব রোগ বেশি হয় সেগুলির প্রতিষেধক উদ্ভাবনের গবেষণায় টাকার অভাব। ক্রেমার দেখালেন, ঠিকঠাক ভ্যাকসিন তৈরি হলে তা বিক্রি করে যথেষ্ট আয় হবে, এটা নিশ্চিত করতে পারলে উদ্যোগীরা গবেষণায় টাকা দেবেন। ২০০৭ সালে পাঁচটি দেশে এই প্রস্তাব কার্যকর করা হয়। তার পর থেকে চিকিৎসার অর্থনীতিতে এই মডেলটির প্রতিষ্ঠা ক্রমশই জোরদার হয়েছে।
দরিদ্র সমাজের সমস্যার মোকাবিলায় বাস্তব সামাজিক অভিজ্ঞতাকে সরাসরি গবেষণায় ব্যবহার করে তাত্ত্বিক প্রকল্প গড়ে তোলার যে পথ এ বারের নোবেলজয়ীরা সন্ধান করেছেন, ক্রেমারের সাফল্য তার গুরুত্বই বুঝিয়ে দেয়।