প্রতীকী ছবি।
ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও টিকাপ্রস্তুতকারী সংস্থা অ্যাস্ট্রাজ়েনেকার কোভিড প্রতিষেধকটিকে কোভিশিল্ড নামে তৈরি করেছে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট। কিন্তু অ্যাস্ট্রাজ়েনেকার টিকাকে ছাড়পত্র দিলেও কোভিশিল্ড নিয়ে আপত্তি তৈরি করছে খোদ ব্রিটেন। একটি রিপোর্টে জানা গিয়েছে, ব্রিটেনের যে সব নাগরিক কোভিশিল্ড নিয়েছেন, তাঁদের ইউরোপে পর্যটনে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।
সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-এর টিকা নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘ইউরোপিয়ান মেডিসিনস এজেন্সি’ (ইএমএ) জানায়, তারা কোভিশিল্ডের জন্য বাণিজ্যিক ছাড়পত্রের আবেদন পায়নি। তাই তারা প্রতিষেধকটিকে জরুরি ভিত্তিতে ছাড়পত্রের অনুমোদন দিচ্ছে না। এর পরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র প্রধান বিজ্ঞানী সৌম্যা স্বামীনাথন টুইট করেছিলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ১৫টি দেশ অনুমোদন দিচ্ছে কোভিশিল্ডকে। সেই টুইটটিকে হাতিয়ার করে ইইউ-র সঙ্গে আলোচনায় বসে ভারত।
ইইউ এই পর্যন্ত ছাড়পত্র দিয়েছে ফাইজ়ার, মডার্না, অ্যাস্ট্রাজ়েনেকা এবং জনসন অ্যান্ড জনসন-এর কোভিড প্রতিষেধককে। এ বাদ দিয়েও জার্মানির ‘কিওরভ্যাক’ এবং রাশিয়ার ‘স্পুটনিক ভি’, চিনের ‘সিনোভ্যাক’ নিয়ে আলোচনা চলছে। ও দিকে, অ্যাস্ট্রাজ়েনেকার ভারতীয় সংস্করণ কোভিশিল্ডকে ছাড়পত্র দিয়েছে হু। অস্ট্রিয়া, জার্মানি, ফিনল্যান্ড, গ্রিস, সুইৎজারল্যান্ড-সহ আরও বেশ কিছু ইউরোপীয় দেশ এখন কোভিশিল্ডকে অনুমোদন দিচ্ছে। ফিনল্যান্ড, জার্মানি, লাটভিয়া, নেদারল্যান্ডস, হাঙ্গেরি, স্পেন, সুইডেন, আইসল্যান্ড, সুইৎজ়ারল্যান্ড জানিয়েছে, হু-অনুমোদিত সব ভ্যাকসিনকেই অনুমোদন দিচ্ছে তারা। এই নানা মতে কোভিশিল্ড নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়ে।
ব্রিটেনের টিকা নিয়ন্ত্রক সংস্থা (এমএইচআরএ) আগে ছাড়পত্র দিয়েছিল কোভিশিল্ডকে। এ দেশের পরিবহণমন্ত্রী গ্রান্ট শ্যাপস বলেছিলেন, যাঁরা ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি অ্যাস্ট্রাজ়েনেকার টিকা নিয়েছেন, তাঁদের পর্যটনে বাধা দেওয়া হবে না। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের মুখেও একই কথা শোনা যায়। তিনি আশ্বাস দিয়েছিলেন, যাঁরা অ্যাস্ট্রাজ়েনেকার টিকার ভারতীয় সংস্করণটি নিয়েছেন, তাঁদের কোনও সমস্যা হবে না। কিন্তু রিপোর্টে এর অন্যথাই হতে দেখা যাচ্ছে।
টিকা নিয়ে এই বিতর্কের মাঝে হু হু করে বাড়ছে সংক্রমণ। ব্রিটেন, স্পেন, ইটালিতে সংক্রমণ বৃদ্ধির আঁচ মিলেছে। ও দিকে, আমেরিকার জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, দেশের ৪৬টি প্রদেশে সংক্রমণ অন্তত ১০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। কিছু প্রদেশে এই হার ৫০ শতাংশেরও বেশি। আমেরিকার সবচেয়ে জনবহুল অঞ্চল, লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টিতে গত মাসে সংক্রমণ বেড়েছে ৫০০ শতাংশ। কিন্তু এই পরিস্থিতিতেও কিছু অঞ্চলে টিকাকরণ নিয়ে বাসিন্দাদের অনীহা কাটছে না। আমেরিকার শীর্ষস্থানীয় এপিডিমিয়োলজিস্ট অ্যান্টনি ফাউচি বলেন, ‘‘এ ভাবে টিকাকরণ থমকে থাকলে, বড়দের ভুলের দাম দিতে হবে ছোটদের।’’ বিশেষজ্ঞেরা বারবারই বলছেন, তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়লে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ছোটরা। কারণ স্পষ্ট, এরা ভ্যাকসিন পায়নি। টিকাহীন শরীরে জাঁকিয়ে বসবে ভাইরাস। আঁচ মিলতে শুরু করেছে এখনই। মিসিসিপিতে যেমন, সাতটি শিশু আইসিইউয়ে রয়েছে। সঙ্কটজনক অবস্থায় ২টি শিশু ভেন্টিলেটরে।