চা-চর্চা: তালিবান সরকারের বিদেশমন্ত্রী ওয়াকিল আহমেদ মুত্তাওয়াকিলের (সাদা পোশাক) সঙ্গে বৈঠকে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের যুগ্মসচিব জে পি সিংহ। বৃহস্পতিবার কাবুলে। নিজস্ব চিত্র।
তালিবান আফগানিস্তানের দখল নেওয়ার পরে সে দেশ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে ছিল ভারত। বৃহস্পতিবার, ঠিক সাড়ে ন’মাস বাদে কাবুলে পা রাখলেন ভারতীয় কূটনৈতিক কর্তারা।
এখনই আফগান সরকারকে মান্যতা দেওয়া বা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পুনর্জাগরণ করা না হলেও, অন্তত দরজাটুকু খোলা হল বলেই মনেকরছে কূটনৈতিক মহল। আফগানিস্তানবাসীর হাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য পৌঁছনো এবং সেখানকার বিভিন্ন ভারতীয় প্রকল্পের দেখভাল করতেই ভারতীয় কর্তাদের এই সফর বলে জানিয়েছেন বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী। অন্য দিকে তালিবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের পুত্র তথা আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোল্লা ইয়াকুব সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ভারতের সঙ্গে সর্বস্তরে সম্পর্ক তৈরি করতে আফগানিস্তানের নতুন সরকার প্রস্তুত। ভারতেরজন্য আফগান সরকারের দরজাখোলা রয়েছে।
বিদেশ মন্ত্রকের পাকিস্তান-আফগানিস্তান-ইরান বিষয়ক যুগ্মসচিব জে পি সিংহের নেতৃত্বে ভারতীয় প্রতিনিধি দল আজ কাবুল পৌঁছে দেখা করেছে তালিবান বিদেশমন্ত্রী ওয়াকিল আহমেদ মুত্তাওয়াকিল-সহ কয়েক জন প্রতিনিধির সঙ্গে। চা-সহযোগে দু’পক্ষের আলোচনাও হয়েছে। এর পরে সে দেশের ভারতীয় প্রকল্পগুলি ঘুরে দেখেছেন তাঁরা। ভারতের অর্থ এবং উদ্যোগে নতুন করে তৈরি হওয়া হাবিবিয়া হাই স্কুলে গিয়ে ছাত্র, অভিভাবক এবং শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। ছবি তোলা হয়েছে। আফগানিস্তানে ভারতীয় সাহায্যের বণ্টন ব্যবস্থা খতিয়ে দেখা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ২০ হাজার টন গম, ১৩ টন ওষুধ, কোভিডের ৫ লক্ষ ডোজ় টিকা এবং শীতবস্ত্র পাঠিয়েছে ভারত সরকার। এই পণ্য কাবুলে ইন্দিরা গান্ধী চিলড্রেন হসপিটাল, রাষ্ট্রপুঞ্জের বিভিন্ন কর্মরত শাখা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা,এবং ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের হাতে পৌঁছনো হয়েছিল।
কাবুলে ভারতীয় সাহায্যে তৈরি ইন্দিরা গান্ধী ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথ। নিজস্ব চিত্র।
আজ ভারতীয় কূটনীতিকেরা ইন্দিরা গান্ধী ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথ (ভারতীয় সাহায্যে তৈরি)-এ গিয়ে ডাক্তারদের সঙ্গে কথাবার্তা বলেছেন। এই প্রতিষ্ঠানটি সত্তরের দশকে তৈরি এবং এত যুদ্ধের মধ্যেও এখনও টিকে রয়েছে। এর পরে পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়ার তৈরি চিটমালা ইলেকট্রিসিটি সাব-স্টেশন পরিদর্শন করেন তাঁরা। আগাগোড়া ভারতীয় কর্তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেছে তালিবান বাহিনী।
বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্রের কথায়, “আফগানিস্তানের সঙ্গে ভারতের সভ্যতাগত এবং ঐতিহাসিক সংযোগ রয়েছে। এই সংযোগই কাবুল সম্পর্কে আমাদের পদক্ষেপ তৈরি করে দিয়েছে। আফগানিস্তানের মানুষদের সঙ্গে ভারতের সৌভ্রাত্রের ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ণ রেখে আমরা ইরানকে ১ লক্ষ ডোজ় ভারতীয় প্রতিষেধক কোভ্যাক্সিন দিয়েছি— সে দেশে আশ্রয় নেওয়া আফগান উদ্বাস্তুদের দেওয়ার জন্য। এ ছাড়া ইউনিসেফের মাধ্যমে পোলিয়োর ৬ কোটি ডোজ় টিকা দেওয়া হয়েছে।”
ভারতীয় প্রতিনিধি দল যখন কাবুল সফর করছে, তখন তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সে দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোল্লা ইয়াকুব সংবাদ সংস্থার প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, “বিশ্বের সব দেশের সঙ্গে আমরা সম্প্রীতির সম্পর্ক চাই। বিশেষ করে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত এর মধ্যে পড়ে। আমরা আশা করব, ভারতও একই ভাবে আমাদের দেখবে। আফগানিস্তানের সঙ্গে ভারতের আগেও খুবই ভাল সম্পর্ক ছিল। আমি ভারতকে স্বাগত জানাচ্ছি এবং আমাদের দরজা খুলে রাখছি। আশা করব, সম্পর্ককে চাঙ্গা করতে ভারতও উদ্যোগী হবে।”
তবে আজ বিকেলে সাংবাদিক সম্মেলনে তালিবান সরকারকে এখনই মান্যতা দেওয়ার প্রশ্নটি উড়িয়ে দিয়েছেন মুখপাত্র অরিন্দম। এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছেন, “আমার মনে হয় আজকের সফরটিকে নিয়ে আপনারা অতিরিক্ত ভাবছেন। আফগানবাসীর কাছে মানবিক সহায়তা যাতে ঠিক মতো পৌঁছয়, সেটা নিশ্চিত করতেই এই উদ্যোগ।” কাবুলে ফের দূতাবাস খোলার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছেন, “গত বছরের অগস্ট মাসে ভারতীয় কূটনৈতিক কর্তারা কাবুল থেকে দেশে ফিরে আসেন। স্থানীয় যাঁরা কর্মরত ছিলেন, তাঁরা দূতাবাস চত্বরের রক্ষণাবেক্ষণ করছেন। আপাতত এর থেকে বেশি কিছু বলার নেই।”সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।