ফাইল চিত্র।
আফগানিস্তানে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের মধ্যে তালিবান সমস্যা এখন শাঁখের করাত হয়ে উঠেছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের কাছে।
এক মাস আগেই প্রকাশ্যে আসে যে তালিবানের সঙ্গে আড়ালে ও নিঃশব্দে একটি আলোচনার দরজা খুলেছে মোদী সরকার। পাকিস্তানকে আফগানিস্তান তথা দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়ার সন্ত্রাসমঞ্চ থেকে দূরে রাখতেই এই পদক্ষেপ, এ কথা বোঝানো হয় বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে। কিন্তু আজ তালিবানের এই মাত্রাছাড়া হিংসার সামনে দাঁড়িয়ে কিছুটা কিংকর্তব্যবিমূঢ় দেখাচ্ছে নয়াদিল্লিকে। ভারতীয় চিত্রসাংবাদিক দানিশ সিদ্দিকি কন্দহর সংঘর্ষে নিহত হওয়ায় এখন আরও চাপে সাউথ ব্লক।
এক দিকে আফগানিস্তান সরকারের পক্ষে ভারতের উপর চাপ দেওয়া হচ্ছে, তালিবানকে মূলস্রোতে ফেরার জন্য তাদের সঙ্গে নয়াদিল্লি কথা বলুক। অন্য দিকে, সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দেশগুলির সঙ্গে কাবুল পরিস্থিতি নিয়ে নয়াদিল্লির মতান্তর প্রকট হচ্ছে। ভারত এখন তালিবানকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে গিয়ে বোঝালো, এবং তারা সেটাকে গুরুত্ব দিল— এটা অবাস্তব। কারণ তালিবান যে পাকিস্তানের মদতে পুষ্ট সন্ত্রাসগোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করছে, এবং এই উগ্র সন্ত্রাসের পিছনে ইসলামাবাদের সমর্থন রয়েছে, এটাও ক্রমশ বুঝতে পারছে ভারত। আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারে ব্যস্ত আমেরিকার জো বাইডেন প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে এখন নাক গলাতে চায় না। ভারতের আঞ্চলিক নিরাপত্তা অথবা তালিবানের কারণে কাশ্মীরে আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাস বৃদ্ধি নিয়ে তাদের মাথাব্যথা আদৌ দেখা যাচ্ছে না।
গত সপ্তাহে রাশিয়ায় গিয়ে আফগানিস্তান প্রশ্নে মতবিরোধ হয়েছিল বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের। রাশিয়া স্পষ্ট জানায়, তালিবান তাদের আশ্বস্ত করেছে সন্ত্রাস তাদের দেশের বাইরে গড়াবে না। তাই এ নিয়ে অহেতুক মাথা গলাতে চায় না মস্কো। জয়শঙ্কর রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রীকে বলেন, রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে না-গিয়ে, হিংসার মাধ্যমে ক্ষমতা দখলকে বৈধতা দেওয়া ভয়ঙ্কর হতে পারে। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, সম্প্রতি ব্রিটেনের পক্ষ থেকেও ভারতকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, তালিবান ক্ষমতায় এলে তাদের স্বীকৃতি দিতে সমস্যা নেই। ভারতের ধারণা, আফ-পাক নীতির ক্ষেত্রে ব্রিটেনের সমর্থন রয়েছে পুরোপুরি ইসলামাবাদের দিকেই, যা ভারতের পক্ষে খুবই চাপের। ব্রিটেন মনে করে আফ-পাক অঞ্চলের নিরাপত্তা বহাল রাখতে তাদের ভূকৌশলগত অবস্থানের জন্য পাকিস্তান সব চেয়ে কার্যকরী। আর সে কারণে পাকিস্তানের সঙ্গে ব্রিটিশ সেনা ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে চলে, যা আফগানিস্তান অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে আরও বেড়েছে। সম্প্রতি একট ব্রিটিশ সংবাদপত্রে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সে দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস বলেছেন, তালিবান ক্ষমতায় এলে ব্রিটেন তাদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা করবে।
সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তালিবানের বাড়বাড়ন্তে ভারতের ঝুঁকি নিয়ে ভাবার মতো কেউ পাশে নেই নয়াদিল্লির, এটাই এখন আক্ষেপ ভারতীয় কূটনীতিকদের।